Thank you for trying Sticky AMP!!

আতলেতিকো মাদ্রিদের কোচ ডিয়েগো সিমিওনে

ঘুমের মধ্যেও ফুটবলারদের ফোন করেন সিমিওনে

মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। এই ম্যাচের ফল যা–ই হোক না কেন, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, দিয়েগো সিমিওনে শিরোনাম থেকে দূরে থাকবেন না।

এক দশকের বেশি সময় ধরে স্প্যানিশ ক্লাবের দায়িত্বে আছেন এই কোচ। এই সময়ে দুটি লা লিগা শিরোপা জিতেছেন, দুটি ইউরোপা লিগ, পেয়েছেন কোপা দেল রের স্বাদও এবং এ সময়ে তাঁকে ৫০০ বারের বেশি ডাগআউটে দেখা গেছে।

ইউরোপের সবচেয়ে বদমেজাজি কোচদের একজন তিনি, লাল কার্ডকে খুব বেশি দিন ‘আড়ি’ দিয়ে থাকতে পারেন না, কোচ হিসেবে তাঁর সাফল্য যতটা আলোচনা ছড়ায়, টাচলাইনে দাঁড়িয়ে সিমিওনের নানা উত্তেজিত কর্মকাণ্ড তেমনই বিতর্ক ছড়ায়।

আজ যখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ১-১ সমতায় থাকা দ্বৈরথে সাবেক আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার তাঁর ক্লাবকে কোয়ার্টার ফাইনালে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, সাবেক আতলেতিকো মাদ্রিদ ডিফেন্ডার কিয়েরান ট্রিপিয়ার বিবিসি রেডিও ফাইভকে জানিয়েছেন সিমিওনের অধীন খেলতে কেমন লাগে।

আতলেতিকো মাদ্রিদে তিন মৌসুম ছিলেন ট্রিপিয়ার

২০১৯ সালে ট্রিপিয়ারকে ২ কোটি ইউরোতে নিজের দলে টেনেছিলেন সিমিওনে। এই জানুয়ারিতে নিউক্যাসলে ফেরার আগে লা লিগা জিতে এসেছেন ইংলিশ রাইটব্যাক।

ঘুমের মধ্যে আমাকে ফোন করতেন তিনি

‘তাঁর অধীন খেলব ভেবে খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম আমি। ম্যাচে টাচলাইনে তাঁকে যেমন দেখেন, প্রতিদিন অনুশীলনে এমনই থাকেন। তিনি এতটাই আবেগপ্রবণ, মোহাচ্ছন্ন। এমন বেশ কয়েকবার হয়েছে, আমি ঘুমিয়ে গেছি, এই সময় ফোন দিয়েছেন। এটা পাগলাটে এক ব্যাপার, কখনো এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাইনি। আমি কোনো কিছু কীভাবে আরও ভালোভাবে করতে পারতাম, এ নিয়ে কথা বলছেন আর ওদিকে আমি ঘুমাতে চাইছি। মাঝেমধ্যেই আচমকা বার্তা পাঠাতেন, ফোন করতেন খেলা নিয়ে কথা বলতে, এসব ব্যাপারে একেবারে আচ্ছন্ন থাকেন। তিনি অবিশ্বাস্য এক কোচ।

মেজাজি কোচ হিসেবে সুনাম ও বদনাম আছে সিমিওনের

এককথায় বোঝাতে গেলে আবেগপ্রবণ শব্দটাই ব্যবহার করব। প্রতিটা মুহূর্তেই তিনি ফুটবলপাগল। তাঁর তথ্যচিত্রেই দেখা যায় প্রতিদিনকার তিনি কেমন। অসাধারণ এক কোচ এবং আমি ভাগ্যবান, তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি বলে। আমি তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।’

‘বিশ্বের সেরা কোচ?’ কেন সিমিওনে ও আতলেতিকো নিখুঁত জোড়া

‘অনুশীলন থেকে বিন্দুমাত্র ছাড় ছিল না, কখনো কখনো এটা পাগলামির পর্যায়ে পৌঁছে যেত। এমন এক কোচ, যার জন্য নিরেট দেয়াল ভেদ করেও দৌড়াতে হবে আপনাকে। কঠোর পরিশ্রম না করলে আপনাকে তিনি বের করে দেবেন। আপনি কত ভালো বা কত বড় তারকা, ওনার কাছে এর কোনো দাম নেই। আপনাকে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াতে হবে। অনুশীলনে, এমনকি গা গরমের সময় যখন পাস দেওয়া-নেওয়া হয়, তখনো একটু এদিক-ওদিক দেখলে আপনাকে তিনি পরিষ্কার তা জানিয়ে দেবেন।

টাচলাইনে সিমিওনে বেশ উত্তেজিত থাকেন

টাচলাইনে যেমন দেখেন, উনি তেমনই। প্রায় নির্দয় কিন্তু অবিশ্বাস্য এক কোচ। অনুশীলনে মাঝেমধ্যে খুব হতাশ লাগত। কারণ, সেখানেও দেখতাম খেলোয়াড়েরা ডাইভ দিচ্ছে, যা দেখে আমার খুব বিরক্ত লাগত। কিন্তু যা হয়, এসবে একসময় অভ্যস্ত হয়ে যাবেন আপনি। এটা হতাশাজনক কিন্তু তারা এভাবেই বেড়ে উঠেছে এবং এভাবেই খেলে। একজন আরেকজনের সঙ্গে ঝগড়া করছে, রেফারির দিকে দৌড়ে যাচ্ছে। ম্যাচে এমন কিছু করে অভ্যস্ত নই আমি কিন্তু যার যা পছন্দ।’

‘আমার ওপর সিমিওনের অনেক প্রভাব আছে’

‘আমি তাঁর ভক্ত, এখন সেটা শ্রদ্ধায় রূপ নিয়েছে। সবাই তাঁকে শ্রদ্ধা করে। কারণ, তিনি তাঁর খেলোয়াড়দের সম্মান করেন, নিজের খেলোয়াড়দের ওপর তাঁর অনেক আস্থা। আপনি শুধু অনুশীলন মাঠেই এই সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারেন আর ওখানে তাঁর আচরণ অবিশ্বাস্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যারা খেলছে না, সেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাঁর আচরণ। ম্যাচের পরদিন তাদের নিয়ে এত তীব্র একাগ্রতা নিয়ে কাজ করেন যে সম্মান আদায় করে নেন। আমি অনেক কিছু শিখেছি।’

ট্রিপিয়ারের ওপর সিমিওনের প্রভাব আছে

‘আমি সেখানে (আতলেতিকো) গিয়েই জানিয়েছি, ডিফেন্ডিংয়ে উন্নতি করতে চাই। অনুশীলন সেশন শেষ হওয়ার পর আমাকে আলাদা করে নিয়ে আরও কঠোর পরিশ্রম করাতেন। এ জন্য তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করি। আমার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেছেন, আমাকে ব্যক্তি হিসেবে পরিণত করেছে এসব। আমি এখন নিউক্যাসলে আছি এবং আশা করি তাদের সাহায্য করতে পারব।’

‘আমার ওপর সিমিওনে অনেক বড় প্রভাব রেখেছেন। ওদের খেলোয়াড়দের দেখুন: কোকে, সাভিচ, হোসে হিমেনেজ। আমি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। কারণ, আতলেতিকো মাদ্রিদে তাঁর পাঁচজন অধিনায়ক আছে এবং এই খেলোয়াড়দের প্রতিদিন দেখছেন আপনি, ম্যাচের জন্য কীভাবে প্রস্তুত হয়, সেটা শিখছেন।’

‘আতলেতিকো মাদ্রিদ একটা পরিবারের মতো। কোচ খুব আবেগপ্রবণ, কোভিডের সময় যখন আমরা একা একা অনুশীলন করতাম, তখন এতে খুব হতাশ ছিলেন। কারণ, উনি সেই কোচদের একজন যাঁরা এত আবেগপ্রবণ। তাঁর বক্তব্যগুলো কী অবিশ্বাস্য। দ্বিতীয় লেগের আগে ড্রেসিংরুমে যে সিমিওনে যে রীতিমতো ছোটাছুটি করে বেড়াবেন, এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন, এতটাই তীব্রভাবে সবকিছু দেখেন। ক্লাব ও সমর্থকদের জন্য এ ম্যাচে জয়ের মূল্য কত, খেলোয়াড়দের এটাই শোনাবেন তিনি।’