বার্সেলোনার ফরোয়ার্ড আনসু ফাতি
বার্সেলোনার ফরোয়ার্ড আনসু ফাতি

চোটে পড়বেন, ফিরবেন, গোল করবেন...এই তো ফাতি

গোল, রেকর্ড, চোট, ফেরা আবার গোল—আনসু ফাতি যেন এসবের সমন্বয়ে পড়া এক ফুটবলার। পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরুটা তাঁর একের পর এক গোলে। আর সেসব গোলে করেছেন একের পর এক রেকর্ড। এরপর শুরু হয় চোটের হানা।

একেকবারের একেকটা চোট তাঁকে লম্বা সময় ধরে রাখছে মাঠের বাইরে। কিন্তু চোট কাটিয়ে ফেরার পরই আবার ফাতি আবির্ভূত হন নিজের আসল রূপে। আবার গোল করেন তিনি। তিন বছরের ছোট্ট পেশাদার ক্যারিয়ারটা এভাবেই এগিয়ে চলছে ফাতির।

চোট আনসু ফাতির পিছুই ছাড়ে না, চোট তাঁকে কাবুও করতে পারে না!

২০১৯ সালের ২৪ জুলাই বার্সেলোনার সঙ্গে প্রথম পেশাদার চুক্তি করেন। পরের মাসেই দলটির হয়ে লা লিগা অভিষেক ফাতির, মাত্র ১৬ বছর ২৯৮ দিন বয়সে। ১৯৪১ সালে ভিসেন্স মার্তিনেজের পর বার্সেলোনায় অভিষেক হওয়া দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় বনে যান ফাতি। ৩১ আগস্ট ওসাসুনার বিপক্ষে গোল করে বার্সেলোনার সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হয়ে যান তিনি। একই সঙ্গে লা লিগার ইতিহাসের তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা।

২০১৯ সালেরই ১৪ সেপ্টেম্বর ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো বার্সার শুরুর একাদশে জায়গা পান ফাতি। সেই ম্যাচে গড়ে ফেলেন অনন্য এক ইতিহাস। লা লিগায় একই ম্যাচে গোল করা ও গোল করানো সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হয়ে যান তিনি। সেপ্টেম্বর মাসেই চ্যাম্পিয়নস লিগেও অভিষেক ফাতির। সেটাও একটি ইতিহাস গড়ে, চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা বার্সেলোনার সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার যে তিনিই। এরপর সান সিরোতে ১০ ডিসেম্বর ইন্টার মিলানের বিপক্ষে গোল করে আরও বড় ইতিহাস রচনা করেন ফাতি, হয়ে যান চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা।

চোট কাটিয়ে মাঠে ফেরার দ্বিতীয় ম্যাচেই গোল পেলেন ফাতি

লা লিগায় এক ম্যাচে জোড়া গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, স্পেন দলের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা...রেকর্ডের মালা গাঁথা যেন আর শেষেই হতে চায় না ফাতির! তাঁর রেকর্ড গড়ার এ খেলায় ছেদ পড়ে ২০২০ সালের নভেম্বরে। ৭ নভেম্বর রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে ছেদটা এঁকে দেয় চোট। হাঁটুর চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। মেডিকেল পরীক্ষায় জানা যায়, বাঁ হাঁটুর মেনিসকাস ছিঁড়ে গেছে তাঁর। দুদিন পর অস্ত্রোপচার করানো হয় ফাতির। বার্সেলোনা জানিয়েছিল, চার মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে ফাতিকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সময়টা হয়ে যায় ৯ মাস।

৯ মাস পর অনুশীলনে ফিরতে পারেন ফাতি। তবে বার্সেলোনার হয়ে মাঠে নামেন প্রায় ১১ মাস পর ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। তত দিনে ২২ ও ৩১ নম্বর জার্সির ফাতি হয়ে যান বার্সার ১০ নম্বর। লিওনেল মেসির ১০ নম্বর জার্সি পরে লেভান্তের বিপক্ষে ফেরার ম্যাচে ১০ মিনিটই খেলেছেন ফাতি। কিন্তু সেই ১০ মিনিটেই ফেরাটাকে রাঙিয়েছিলেন অসাধারণ এক গোল করে। ৮১ মিনিটে নামা ফাতি গোলটি করেছিলেন যোগ করা সময়ের ১ মিনিটে।

রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে বার্সেলোনাকে এগিয়ে দেওয়ার পর আনসু ফাতিকে নিয়ে সতীর্থদের উচ্ছ্বাস

মাঠে খুব বেশি দিন অবশ্য থাকতে পারেননি ফাতি। এ বছরের ২০ জানুয়ারি আবার চোটে পড়েন অ্যাটলেটিকো বিলবাওয়ের বিপক্ষে ম্যাচে। চোট কাটিয়ে মাঠে ফেরেন ১ মে। সেদিন মায়োর্কার বিপক্ষে ১৫ মিনিট খেলে অবশ্য গোল পাননি। তবে ফেরার পর গোল পাওয়ার অপেক্ষাটা খুব একটা লম্বা হতে দেননি ফাতি। কাল বেতিসের বিপক্ষেও বদলি হিসেবে মাঠে নামেন আগের ম্যাচের মতোই ৭৫ মিনিটে। মাঠে নামার ১ মিনিটের মধ্যেই অসাধারণ এক গোলে এগিয়ে দেন বার্সেলোনাকে। বেতিসের বিপক্ষে বার্সেলোনা ম্যাচটি জিতেছেও ২-১ গোলে।

সব মিলিয়ে ফাতি যেন এমন—চোটে পড়বেন, ফিরবেন, গোল করবেন!