ম্যারাডোনা ছিলেন একাই একটা দল
ফুটবল ১১ জনের খেলা। কিন্তু ডিয়েগো ম্যারাডোনা ছিলেন একাই একটা দল। ১০ জন একদিকে আর ম্যারাডোনা ওই ১০ জনেরই সমান। এককভাবে একটি দলকে টেনে নেওয়ার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা ছিল তাঁর। ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে যা আমরা দেখেছিলাম। প্রায় একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতান। আমরা তাঁর ঝলক দেখেছিলাম ইতালির নাপোলি ক্লাবের জার্সিতেও। অখ্যাত এক ক্লাব বিখ্যাত হয়ে ওঠে ম্যারাডোনার হাত ধরে। ভাবতে অবাক লাগে, একজন ফুটবলার একটি ক্লাব বা একটি দেশকে কীভাবে এত সুউচ্চে তুলে ধরতে পারেন!
Also Read: ‘সেরা’র দিনেই যেতে হবে তাঁকে!
ম্যারাডোনার সেই বিরল ক্ষমতা ছিল বলেই তিনি ‘ম্যারাডোনা’ হতে পেরেছেন। গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন ফুটবলের আলো। অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়। তাঁর মতো ফুটবলার আর আসবে বলে আমি অন্তত বিশ্বাস করতে পারছি না। পেলে না ম্যারাডোনা কে সেরা? এই বিতর্কে সারা পৃথিবীতেই চায়ের কাপে ঝড় ওঠে। কিন্তু আমার চোখে ম্যারাডোনাই এগিয়ে থাকবেন। তিনিই সর্বকালের সেরা ফুটবলার। তাঁকে হারানো বিশ্ব ফুটবলের জন্যই বিশাল এক ক্ষতি।
অনেক দিন ধরেই তাঁর শরীর ভালো যাচ্ছিল না। তাই হঠাৎ করেই চলে গেছেন কথাটা বলতে পারছি না। তবে খবরটা শুনে বিশাল ধাক্কা খেয়েছি। ভাবতেই পারিনি এমন একটা দুঃসংবাদ শুনব। ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর প্রায় একই সময়ে ব্যক্তিগতভাবে আমিও পেয়েছি একটি খারাপ খবর। কোনো লক্ষণ না থাকলেও আমার কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে। সেই পজিটিভ রিপোর্ট আর ম্যারাডোনার চলে যাওয়ার জোড়া দুঃসংবাদ নিয়ে কাল রাতে বাসায় ফিরেছি।
Also Read: শাহরুখের মনও কাঁদছে ম্যারাডোনার জন্য
ম্যারাডোনাকে নিয়ে মনে অনেক স্মৃতি জেগে উঠেছে। মনটা ব্যথিত হয়ে আছে। মেনে নিতে পারছি না তাঁর এভাবে চলে যাওয়া। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সুযোগ আসে আমার। সেই সুযোগে কয়েকবার ম্যারাডোনার মতো ফুটবল কিংবদন্তির সঙ্গে দেখা হয়েছে। গত রাশিয়া বিশ্বকাপে সর্বশেষ দেখা হয়। তিনি ইংরেজিতে সেভাবে অভ্যস্ত ছিলেন না। তাই কথাবার্তা সেভাবে বলা হয়নি। মনে পড়ছে কলকাতায় যখন এলেন, আমিও সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলাম। একসঙ্গে খাবার টেবিলে দেখা হয়। সারা জীবনই এই স্মৃতিগুলো মনে জাগরূক থাকবে।
Also Read: ম্যারাডোনার মতো করে বাঁচার কেউ আছেন!
ম্যারাডোনা বলতে প্রথমেই যে স্মৃতিটা আমার মনে ভেসে ওঠে, সেটা হলো মাঠে তাঁর রাজার মতো বিচরণ। ফুটবলীয় স্কিল এককথায় অনন্য। ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতেন দারুণভাবে। ১৯৮২ সালে স্পেন বিশ্বকাপে তাঁকে প্রথম দেখি টিভিতে। তখন তো আর ম্যারাডোনা হয়ে ওঠেননি। ম্যারাডোনা হয়েছেন ১৯৮৬ বিশ্বকাপে। তারপরের গল্প সবারই জানা। নাপোলিতে যখন খেলেন, টিভিতে দেখতাম খেলা আর মুগ্ধ হতাম।
Also Read: ‘আমরা একদিন স্বর্গে ফুটবল খেলব’
সত্যি বলতে ম্যারাডোনা ছিলেন এক জাদুকরি আকর্ষণ। একটা চুম্বক। যাঁর খেলা দেখতে সব কাজ ফেলে টিভির সামনে বসতেই হতো। আমারও সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে। ম্যারাডোনার খেলা দেখা মানে ফুটবলের সত্যিকারের স্বাদ পাওয়া। ফুটবল খেলতেই তাঁর জন্ম হয়েছিল। কখনো তাঁকে ভোলা যাবে না। এই অমর ফুটবলশিল্পীর মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। ম্যারাডোনা ওপারে ভালো থাকবেন, এই প্রার্থনাই করছি।
Also Read: ম্যারাডোনাকে হারিয়ে কাঁদছেন মাশরাফি-সাকিবরাও
আরও পড়ুন
-
কী ঘটেছিল, মনে করতে পারছে না শিশুটি
-
অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল, অভ্যুত্থানেই পুরো পরিবারসহ খুন হন আফগান প্রেসিডেন্ট দাউদ খান
-
বাসা থেকে বেরিয়েই সালাহউদ্দিন বুঝলেন, এই গরমে ফুটবল খেলা সম্ভব নয়
-
ক্ষমা চাইলেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকারী
-
মুন্সিগঞ্জে অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে শিশুর মৃত্যু