ক্লাব বদলাতে পারবেন এই সাত তারকা
ক্লাব বদলাতে পারবেন এই সাত তারকা

জানুয়ারির শীতের হাওয়ায় কি ভাগ্য বদলাবে এই ৭ তারকার

ইউরোপীয় ফুটবলের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে টাকার ঝনঝনানি কম ছিল না। বড় বড় সব চুক্তি হয়েছে, হয়েছে তারকাদের দলবদলও। কিন্তু দলবদলের সেই উত্তাল হাওয়া সবার পালে সমানভাবে লাগেনি। অনেকে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় যেতে পারেননি, আবার অনেকে নিজের বর্তমান ক্লাবে ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন।

ইউরোপিয়ান ফুটবলের সেসব ‘অসুখী’ তারকা এখন চাতক পাখির মতো চেয়ে আছেন জানুয়ারির শীতকালীন দলবদলের দিকে। নিয়মিত খেলার সুযোগ নেই, দলে গুরুত্ব কমেছে—সব মিলিয়ে তাঁদের ক্যারিয়ার এখন অনেকটা অনিশ্চয়তার সুতায় ঝুলছে। এই সাত ফুটবলারের জন্য জানুয়ারির দলবদলটা শুধু প্রয়োজনই নয়, বরং অনেকটা বাধ্যতামূলক।

গ্যাব্রিয়েল জেসুস, আর্সেনাল

চোট কাটিয়ে প্রায় এক বছর পর মাঠে ফিরলেও জেসুস বোধ হয় ফিরতে একটু দেরিই করে ফেলেছেন। আর্সেনালের কোচ মিকেল আরতেতার গুডবুকে এখন তাঁর নামটা অনেক নিচে। ভিক্টর ইয়োকেরেস আসাতে তো বটেই, এমনকি মিকেল মেরিনো কিংবা কাই হাভার্টজের ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেছেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।

গ্যাব্রিয়েল জেসুস

বাস্তব কথা হলো, ২৮ বছর বয়সী জেসুস এখন গানার্সদের জন্য অনেকটা ‘বোঝা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সামনে বিশ্বকাপের বছর, তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে হলে মাঠে নামার বিকল্প নেই তাঁর। সাড়ে চার কোটি পাউন্ডের জেসুসকে জানুয়ারিতে বিক্রি করে দিয়ে কিছুটা লোকসান অন্তত কমাতে চাইবে আর্সেনালও।

বার্সেলোনা তারকা রোনাল্ড আরাউহো

রোনাল্ড আরাউহো, বার্সেলোনা

বার্সার রক্ষণভাগের এই ‘উরুগুইয়ান দেয়াল’ এখন অদ্ভুত এক সময় পার করছেন। চেলসির কাছে চ্যাম্পিয়নস লিগে হারের রাতে তাঁর সেই বেপরোয়া লাল কার্ড যেন সমর্থকদের কাছে ভিলেন বানিয়ে দিয়েছে। চাপ সামলাতে না পেরে মানসিক স্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে ফুটবল থেকে সাময়িক বিরতিও নিয়েছিলেন। যদিও তিনি কাতালুনিয়া ছাড়বেন কি না তা নিশ্চিত নয়, তবে নতুন কোথাও শুরু করলে সেটা তার জন্য ‘ফ্রেশ স্টার্ট’ হতে পারে। আরাউহো যদি দল ছাড়ার ঘোষণা দেন, তবে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর লাইন লেগে যাবে—এতে কোনো সন্দেহ নেই।

স্টার্লিং কি নতুন ঠিকানা খুঁজে পাবেন

রহিম স্টার্লিং, চেলসি

মাঠের চেয়ে ডাগআউটে কিংবা গ্যালারিতেই স্টার্লিংয়ের সময় কাটছে বেশি। নতুন কোচ এনজো মারেসকার পরিকল্পনায় স্টার্লিং যেন এক ‘অচ্ছুত’ নাম। অবস্থা এমন যে তাঁকে অনূর্ধ্ব-২১ দলের সঙ্গে অনুশীলনে পাঠিয়ে কার্যত নির্বাসনে দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের মে মাসের পর চেলসির মূল জার্সিতে তাঁকে দেখাই যায়নি। ৩১ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের ক্যারিয়ারে এখনো কিছুটা জ্বালানি বাকি আছে ঠিকই, কিন্তু সে জন্য তাঁকে বিশাল বেতনের মোহ ছেড়ে নতুন ক্লাবে তল্পিতল্পা গুছিয়ে চলে যেতে হবে। চেলসিও চাইছে ২০২৭ পর্যন্ত চুক্তির বোঝাটা ঝেড়ে ফেলতে।

চেলসি তারকা অ্যাক্সেল ডিসাসি

অ্যাক্সেল ডিসাসি, চেলসি

স্টার্লিংয়ের পথেই হাঁটছেন ফরাসি সেন্টারব্যাক ডিসাসি। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে তাঁর ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার। মোনাকো কিংবা বোর্নমাউথ একসময় আগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত চুক্তিটা আর আলোর মুখ দেখেনি। মাত্র ২৭ বছর বয়সেই এক অনিশ্চিত ঘেরাটোপে বন্দী তিনি। গুঞ্জন আছে, ফরাসি ক্লাব লিঁও তাঁকে উদ্ধারে এগিয়ে আসতে পারে। জানুয়ারির শীতের হাওয়ায় নতুন কোনো গন্তব্যই হতে পারে ডিসাসির ক্যারিয়ারের সঞ্জীবনী সুধা।

ম্যানচেস্টার সিটি তারকা কালভিন ফিলিপস

কালভিন ফিলিপস, ম্যানচেস্টার সিটি

ম্যানচেস্টার সিটির স্কোয়াডে কালভিন ফিলিপস নামে একজন খেলোয়াড় আছেন, সেটা হয়তো সিটি সমর্থকেরাও ভুলতে বসেছেন। একসময় যাঁকে ‘ইয়র্কশায়ারের পিরলো’ বলা হতো, সেই ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এখন যেন পথ হারানো পথিক। ওয়েস্ট হ্যাম বা ইপসউইচ টাউন—কোথাও ধারের অভিজ্ঞতাই সুখকর হয়নি। এখন প্রশ্ন হলো, নিজের মান কতটা কমিয়ে তিনি নিচের স্তরের কোনো ক্লাবে থিতু হতে রাজি হবেন। তবে ক্যারিয়ার বাঁচাতে হলে এই শীতে তাঁর ডেরা বদলানোটা এখন সময়ের দাবি।

ইউনাইটেডে সময়টা ভালো যাচ্ছে না মাইনুর

কোবি মাইনু, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

ওল্ড ট্রাফোর্ডের বেঞ্চ এখন যেন মাইনুর দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠছে। গ্রীষ্মে ধারে অন্য কোথাও যেতে চাইলেও ইউনাইটেড তাঁকে ছাড়েনি। অথচ রুবেন অ্যামোরিমের অধীনেও তিনি প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন না। চলতি মৌসুমে মোটে ৩০২ মিনিট মাঠে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। ২০২৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখলে মাইনুকে জানুয়ারিতে ক্লাবের কাছে রীতিমতো ‘বিদ্রোহ’ করে হলেও অন্য কোথাও খেলার সুযোগ খুঁজতে হবে।

জিরকজি কি নতুন ঠিকানায় যেতে পারবেন

জোশুয়া জিরকজি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে ওল্ড ট্রাফোর্ডে আসা জিরকজি নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। হালের সেসকো কিংবা এমবেউমোর দাপটে তিনি দলের গুরুত্বহীন এক সদস্যে পরিণত হয়েছেন। ইতালির ক্লাব এএস রোমা তাঁকে নিতে ওত পেতে আছে। ওল্ড ট্রাফোর্ডের ‘ম্যাচ টাইম’ বিড়ম্বনা থেকে বাঁচতে জিরকজির জন্য রোমই হতে পারে আদর্শ ঠিকানা।