
ক্যারিয়ারে গোধূলীবেলা পার করছেন ৪০ পেরোনো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সব মিলিয়ে ফুটবল মাঠে হয়তো অল্প সময়ই হাতে আছে তাঁর। কিন্তু বয়স বাড়লেও একটুও কমেনি রোনালদোর প্রভাব। সেটা হোক মাঠে গোল করায় কিংবা মাঠে ও মাঠের বাইরে অর্থ উপার্জনে। সব জায়গাতেই যেন রোনালদোর একচ্ছত্র দাপট।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা–বাণিজ্যভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বস গতকাল ২০২৫ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী খেলোয়াড়দের তালিকা প্রকাশ করেছে। কিছুদিন আগে মার্কিন আর্থিক তথ্য ও গণমাধ্যম সংস্থা ব্লুমবার্গের হিসাবে ফুটবল ইতিহাসে প্রথম বিলিয়নিয়ার হওয়া রোনালদো ফোর্বসের এই তালিকায়ও শীর্ষস্থানে আছেন। গত এক দশকের মধ্যে এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো ফোর্বসের সর্বোচ্চ আয়কারী খেলোয়াড়ের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করলেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি।
ফোর্বসে গতকাল প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫–২৬ মৌসুমে ফুটবলারদের সম্মিলিত আয় ৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এ আয়ে সবচেয়ে বড় অংশটি রোনালদোর। গত জুনে আল নাসরের সঙ্গে আরও দুই বছরের নতুন চুক্তি করা রোনালদো ২০২৫–২৬ মৌসুমে এই ক্লাব থেকে আয় করবেন ২৩ কোটি ডলার।
পাশাপাশি মাঠের বাইরে বিভিন্ন স্পনসরশিপ, যেমন নাইকি, বিনান্স, হারবালাইফসহ নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি থেকে আরও ৫ কোটি ডলার পাবেন। সব মিলিয়ে এ মৌসুমে তাঁর আয় দাঁড়াবে ২৮ কোটি ডলার। হিসাবটা করা হয়েছে কর ও এজেন্টের ফি বাদে।
১৯৯০ সাল থেকে ফোর্বস যেসব খেলোয়াড়ের আয় অনুসরণ করছে, তাঁদের মধ্যে রোনালদোর চেয়ে এক বছরে বেশি আয় করেছেন কেবল একজন ক্রীড়াবিদ—সাবেক বক্সার ফ্লয়েড মেওয়েদার। ২০১৫ সালে এক বছরে ৩০ কোটি ডলার ও তিন বছর পর ২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয় করেন মেওয়েদার।
ফোর্বসের এবারের তালিকায় সবচেয়ে বড় দিকটি হচ্ছে বেলিংহাম ও ইয়ামালের মতো তরুণদের উত্থান। সামনের দিনগুলোয় ফুটবল মঞ্চে তাঁরা যে রাজত্ব করবেন, এটা যেন তারই ইঙ্গিত। বার্সার ১৮ বছর বয়সী তারকা ইয়ামাল সর্বোচ্চ আয়কারীর এই তালিকায় শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছেন। গত মৌসুমে ১৮ গোল করার পাশাপাশি ২৫ গোল করানো ইয়ামালকে নিয়ে ফোর্বস জানিয়েছে, অ্যাডিডাস, কোনামি ও পাওয়ারেডের সঙ্গে চুক্তিতে ইয়ামালের আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, এ মুহূর্তে শীর্ষ ১০ আয়কারী ফুটবলারের মধ্যে ৫ জনের বয়স ২৯ কিংবা তার কম। এতে বোঝা যায়, রোনালদো এখনো আর্থিক দিক থেকে সবার ওপরে হলেও মাঠে ও মাঠের বাইরে নতুন প্রজন্মও সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
এই তালিকায় শীর্ষে থাকা রোনালদোর পরই আছেন ইন্টার মায়ামির আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি। তাঁর আনুমানিক আয় ১৩ কোটি ডলার।
১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয় নিয়ে তৃতীয় আল ইত্তিহাদের করিম বেনজেমা। পরের অবস্থানটি রিয়াল মাদ্রিদ তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পের। তাঁর আয় প্রায় ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। পঞ্চম ম্যানচেস্টার সিটি তারকা আরলিং হলান্ডের আয় ৮ কোটি ডলার। হলান্ড গত জানুয়ারিতে ৯ বছর ৬ মাস মেয়াদি নতুন চুক্তি করেছেন, যা তাঁকে বছরে ৬ কোটি ডলার বেতন ও বোনাস দেবে, সঙ্গে মাঠের বাইরে আরও ২ কোটি ডলার আয় তো আছেই।
দশে থাকা ইয়ামালের জায়গায় গত মৌসুমে ছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির কেভিন ডি ব্রুইনার (৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার)। এ বছর ডি ব্রুইনার মোট আয় গত মৌসুমের চেয়ে প্রায় ৪ শতাংশ কম। এ ছাড়া তালিকায় জায়গা পাননি নেইমার। গত মৌসুমে তাঁর আয় ছিল ১১ কোটি ডলার, যার মধ্যে ৮ কোটি এসেছিল সৌদি ক্লাব আল-হিলালের চুক্তি থেকে। জানুয়ারিতে সেই চুক্তি বাতিল করে তিনি ফিরে যান ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসে, যেখানে বেতন অনেক কম। ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত নেইমার সান্তোসেই থাকতে পারেন। ফোর্বস ধারণা করছে, এবার তাঁর মোট আয় হবে মাত্র ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
এই তালিকায় সব মিলিয়ে স্প্যানিশ লা লিগার খেলোয়াড়দেরই আধিপত্য। তালিকায় রিয়াল ও বার্সেলোনা মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি চারজন খেলোয়াড় জায়গা পেয়েছেন, যদিও তিনজনই রিয়ালের। সৌদি প্রো লিগ থেকে আছেন তিনজন—রোনালদো, বেনজেমা, মানে। প্রিমিয়ার লিগ থেকে দুজন—হলান্ড ও সালাহ। মেসি একাই এমএলএসের প্রতিনিধি।