
‘আমরা মাঠে নামার আগে উত্তরার বিমান দুর্ঘটনার খবরটা শুনি। এরপর আমরা চিন্তা করি যে আজকে আমরা তাদের জন্য খেলব। যাঁরা নিহত হয়েছেন, জয়টা তাঁদের উৎসর্গ করব। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা পেরেছি।’ নেপালকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব–২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে কথাগুলো বলার সময় চোখে পানি টলমল করছিল বাংলাদেশের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারের।
শিরোপা জয়ের হাসি মুখে ছিল না আফঈদার, উল্টো চাপা কণ্ঠে কথাগুলো বলার সময় তাঁর ভেতরটা যেন হাহাকার করে উঠছিল। সংবাদ সম্মেলনে আসা মোসাম্মৎ সাগরিকাকেও সেভাবে উদ্যাপনের মেজাজে দেখা যায়নি। তবে পুরো টুর্নামেন্টে আলো ছড়িয়ে সেরা খেলোয়াড় হতে পারার অনূভুতিটা লুকাতে পারেননি তিনি। বললেন, তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হওয়ার পর মাথার মধ্যে একটা জেদ চাপে। সেই জেদ থেকে বাড়তি প্রেরণা খুঁজে নেন এই ফরোয়ার্ড, ‘আসলে অনেক ভালো লাগছে, আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। মাঝে তিন ম্যাচ খেলতে পারিনি। কষ্ট লাগছিল। মাঠে নামার জন্য জেদ কাজ করেছিল। মনে মনে জেদ ছিল, নেপালের সঙ্গে নেমেই আমি ভালো কিছু করব, পেরেছিও। সেরা খেলোয়াড় হতে পেরে আরও ভালো লাগছে। দলের সবাই অনেক সমর্থন দিয়েছে।’
তিন ম্যাচে ৮ গোল। তবু সাগরিকার সেই লাল কার্ড দেখা নিয়ে আফসোস। বললেন, ভবিষ্যতে মাথা ঠান্ডা রেখেই খেলতে হবে, ‘নেপাল ম্যাচে লাল কার্ড দেখে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হওয়ার পর মনে হয়েছে এভাবে মাথা গরম করা যাবে না। যেটা আমার জন্য শিক্ষা।’
নেপালের সহকারী কোচ কিরণ কাড়কি তো সাগরিকাকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে দেখছেন, ‘আমার মতে, সাগরিকা দক্ষিণ এশিয়ার নিখুঁত একজন স্ট্রাইকার।’ বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলারও কাড়কির সঙ্গে একমত। সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে সাগরিকাকে প্রশংসায় ভাসান, ‘সাগরিকা দুর্দান্ত একজন ফরোয়ার্ড। অবশ্যই সে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সেরা।’
তবে অলিখিত ফাইনালে বাংলাদেশের কাছে ৪-০ গোলে হারায় ভাগ্যকে দুষলেন নেপালের এই কোচ, ‘বাংলাদেশ তাদের মূল ফরোয়ার্ডদের বিশ্রাম দিয়ে খেলিয়েছে। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি। যদিও আমরা জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হতাম, দুর্ভাগ্যবশত আমরা সেটা করতে পারিনি।’
গতকাল ম্যাচ শুরুর আগে উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন দুই দলের খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফরা।