দুজনই ডিফেন্ডার। দুজনই গতকাল ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ২-০ গোলের জয়ের অংশীদার। এবারই প্রথম জাতীয় দলের জার্সিতে দুই ভাই একসঙ্গে খেলেছেন।
সাদ উদ্দিন জাতীয় দলে আছেন অনেক দিন ধরে। রক্ষণের বাঁ পাশে তাঁর জায়গা একরকম পাকা। আর তাজ উদ্দিন রক্ষণে ডান প্রান্তের নতুন যোদ্ধা—এই প্রথম জাতীয় দলের জার্সিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
গতকাল জাতীয় স্টেডিয়ামে ভুটানের বিপক্ষে রক্ষণভাগের দুই প্রান্তে খেললেন দুই ভাই, যা নিয়ে সাদের আনন্দের শেষ নেই। গতকালের ভাইয়ের খেলা নিয়ে সাদ আজ প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমি তো জাতীয় দলে খেলছি অনেক দিন ধরে। কিন্তু তাজের সঙ্গে একই মাঠে, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলব—স্বপ্ন ছিল। সেটা অবশেষে পূরণ হয়েছে। আর এতে আমার পরিবারও খুব খুশি।’
সাদের তিন বছরের ছোট তাজ এর আগে গত বছর ঢাকায় মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের ২৩ জনের স্কোয়াডে ছিলেন। কিন্তু খেলার সুযোগ মেলেনি। এ ছাড়া আরও দুবার জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলেন।
এবার শুরুর একাদশে জায়গা পেয়েই দেখিয়ে দিলেন নিজের যোগ্যতা। ভাইকে নিয়ে সাদের মুখে মুগ্ধ উচ্চারণ, ‘ডেডিকেশনে সে অসাধারণ। রাইটব্যাক হিসেবে আক্রমণ আর রক্ষণ—দুটিতেই ভালো। ওর লিগ পারফরম্যান্স দারুণ ছিল। এ কারণেই কোচ ওকে শুধু দলেই নেননি, একাদশেও সুযোগ দিয়েছেন। আর ভুটান ম্যাচটাও খুব ভালো খেলেছে।’
দুই ভাইয়ের মধ্যে মিল অনেক—কিন্তু আলাদা আলাদাভাবে তৈরি হয়েছে তাঁদের নিজস্ব অবস্থান। তাজের সাম্প্রতিক লড়াইয়ের কথা কথাও উঠে এল সাদের মুখে, ‘দুই বছর ধরে ও নিজেকে প্রমাণ করার জন্য লড়েছে। শেখ জামালের সঙ্গে চুক্তি করেও খেলতে পারেনি গত মৌসুম। শেখ জামাল দল গড়েনি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে রহমতগঞ্জে যায়। আর সেখানেই সে লিগের সেরা রাইটব্যাক হয়ে উঠে আসে।’
সেই উঠে আসা আর এত দ্রুত জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া ২৩ বছর বয়সী তাজের কাছে গর্বের মুহূর্ত। নিজেই বললেন, ‘এত তাড়াতাড়ি জাতীয় দলে খেলা হবে ভাবিনি। আর দুই ভাই একসঙ্গে খেলা বিরাট ব্যাপার। আগের দিন অনুশীলন সেশনেই একটু আন্দাজ পাই যে সুযোগ আসতে পারে। তখনই মানসিকভাবে তৈরি হই। ম্যাচের আগে দুপুরের পর টিম যখন ঘোষণা করে, তখন জানতে পারি। এর আগেই অবশ্য সহকারী কোচেরা তৈরি থাকতে বলেন।’
ভাইয়ের প্রতি তাজ অনেক কৃতিজ্ঞ। বলেন, ‘ভাই অনেক সহায়তা করে। অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। ম্যাচের আগে সবাই মোটিভেট করেছে। ম্যাচটা খেলে আমি খুশি। ম্যাচের পর কোচ বললেন, ভালো করেছ। সবাই অভিনন্দন জানিয়েছে। ড্রেসিংরুমে থাকতে থাকতেই আম্মাকে ফোন করেছি। তিনি খুব খুশি। বাবাও খুশি।’
তাঁরা পাঁচ ভাই। সাদ দ্বিতীয়, তাজ তৃতীয়। সবার বড়জন সিলেটে একটা ফুটবল একাডেমি পরিচালনা করেন। সবার ছোটজনও ফুটবল খেলেন। বাবা জহির উদ্দিন পেশার চাকরিজীবী।
বাংলাদেশের ফুটবলে দুই ভাইয়ের একসঙ্গে খেলার উদাহরণ নতুন নয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় দলে ছিলেন দুই সহোদর শরীফুজ্জমান ও নওশেরুজ্জামান। তবে স্বাধীনতার পর স্মরণীয় আলোচিত জুটি—শামসুল আলম মঞ্জু ও মনোয়ার হোসেন নান্নু। দুই ভাই ছিলেন দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের অধিনায়ক—নান্নু আবাহনীর, মঞ্জু মোহামেডানের। বড় ভাই নান্নু ও ছোট ভাই মঞ্জু।
একসময়ের দুই প্রধান দলের অধিনায়ক হিসেবে দুই ভাইয়ের আলোচিত করমর্দন ইতিহাস হয়ে আছে। এটা সেই সত্তরের দশকের গল্প। তাঁরা একসঙ্গ জাতীয় দলে খেলেছেন।
জাহিদ হাসান এমিলি ও শাকিল আহমেদ দুই ভাই একসঙ্গে বেশ কয় বছর জাতীয় খেলেছেন। ভাইয়ের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে এমিলি বলছিলেন, ‘আমরা একসঙ্গে খেলেছি ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। আমি স্ট্রাইকার হিসেবে, লেফট উইংয়ে শাকিল আহমেদ। প্রায় ১৫টা ম্যাচ খেলেছি আমরা একসঙ্গে।’
তিন ভাই আরিফ খান জয়, অমিত খান শুভ্র ও মাসুদ খান জনিও জাতীয় দলে খেলেছেন। প্রথম দুজন দেশের জার্সিতে একসঙ্গে ১০টির মতো ম্যাচ খেলেছেন। জয় তো অধিনায়কই ছিলেন।