রেফারির শেষ বাঁশি ম্যানচেস্টার সিটির জন্য যদি হয় উৎসব শুরুর সংকেত, ইন্টার মিলানের জন্য সেটি হৃদয়ভঙ্গের ধ্বনি। যে হারে ভালো খেলতে না পারার হতাশার চেয়ে আক্ষেপই ছিল বেশি। শেষ দিকে রোমেলু লুকাকু যদি গোলের অমন সুযোগ নষ্ট না করতেন, সিটি গোলরক্ষক এদেরসন যদি দুর্ভেদ্য দেয়াল না হয়ে উঠতেন!
চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে সিটির কাছে ১–০ গোলে হারের পর ইন্টার কোচের মুখে তাই যতটা না হারের হতাশা, তার চেয়ে বেশি শোনা গেছে ভালো খেলার তৃপ্তি আর অল্পের জন্য পিছিয়ে যাওয়ার অতৃপ্তির কথা। ৪৭ বছর বয়সী ইতালিয়ান এই কোচ বেশ সন্তুষ্টি নিয়েই বললেন, ‘তাঁর দল গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে’। এই হার তাঁদের ‘প্রাপ্য ছিল না’।
২০১০ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল ইন্টার মিলান। এরপর এবারের আগে দলটি কোয়ার্টার ফাইনালও খেলতে পারেনি। এর মধ্যে সর্বশেষ চার আসরে সর্বোচ্চ অর্জন ছিল শেষ ষোলো। এবার শেষ ষোলোতেও ওঠা যাবে কি না সংশয় ছিল শুরুতে। গ্রুপ পর্বেই মুখোমুখি হতে হয়েছে বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে। সেই ‘মৃত্যুকূপ’ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ধাপে ধাপে ইস্তাম্বুলের ফাইনালে জায়গা করে নেয় ইনজাগির দল।
ফাইনালে রীতিমতো উড়তে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ইন্টার মিলান পাত্তা পাবে না, এমনটি ধরে নিয়েছিলেন অনেকে। পেপ গার্দিওলার দলের সাম্প্রতিক ফর্মও সে সাক্ষ্যই দিচ্ছিল। তবে আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে লড়াকু এক ইন্টারকেই দেখল সিটি।
প্রথমার্ধে ঠিকমতো আক্রমণই গুছিয়ে উঠতে পারেনি প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি। দ্বিতীয়ার্ধের ৬৮ মিনিটে রদ্রির আচমকা গোলে পিছিয়ে পড়লেও শেষ দিকে অন্তত দুটি গোলের ভালো সুযোগ তৈরি করে ইন্টার। যার একটিও জালে গেলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতে পারত। জমাট রক্ষণ তৈরি করে রাখা ইন্টার সুযোগ নিতে পারত সমতা কিংবা জয়েরও। তবে কোনোটাই হয়নি শেষ পর্যন্ত।
ম্যাচ শেষে হারের জন্য হতাশ হলেও শিষ্যদের খেলায় সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ইনজাগি, ‘এমন একটা রাতে, একজন খেলোয়াড়ও খারাপ খেলেছে আমি বলব না। তারা গোটা পৃথিবীকে দেখিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে তারা কত ভালো খেলতে পারে। কারণ, সিটি কোন মানের দল সবাই জানে।’
রেফারির শেষ বাঁশির পর প্রত্যেক খেলোয়াড়কে আলাদাভাবে ভালো খেলার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন উল্লেখ করে ইন্টার মিলান কোচ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি প্রত্যেক খেলোয়াড়কে এক এক করে জড়িয়ে ধরেছি। কারণ, তারা সবাই অসাধারণ খেলেছে। আমাদের সমর্থকদের ভিন্ন ফল দেখাটা প্রাপ্য ছিল। আশা করি, তারা এই দলটাকে যেভাবে খেলতে দেখেছে, তাতে তারা খুশিই হয়েছে।’
এমন একটা ম্যাচে জয় ইন্টার মিলানের প্রাপ্য ছিল মনে করেন ইনজাগি। সেটা না হলেও খেলোয়াড়দের গর্বিত হওয়ার বার্তা দিয়েছেন এই ইতালিয়ান, ‘ছেলেরা খুব হতাশ। তবে যেভাবে খেলেছে, তাতে গর্বিত হওয়া উচিত। হারটা আমাদের প্রাপ্য ছিল না। সেরা মানের একটি দলের বিপক্ষে একটা দারুণ ফাইনাল খেলেছে ইন্টার।’