সুযোগ পেয়েও ১৯৫০ বিশ্বকাপে যায়নি ৬টি দল, কী কারণে জানেন

বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলতে চায় না কারা! ১৯৫০ বিশ্বকাপে হয়েছিল উল্টোটা। সুযোগ পেয়েও একের পর এক দল বিচিত্র সব কারণে নাম প্রত্যাহার করে নেয়।

বিশ্বকাপ ফুটবল। ফুটবলের তো বটেই, তর্কযোগ্যভাবে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। সেই বিশ্বকাপে ফুটবলে সুযোগ পাওয়াটা সহজ নয় মোটেই। বাছাইপর্বের কঠিন পথ পাড়ি দিয়েই পৌঁছাতে হয় সেখানে। বাংলাদেশ-ভারতের মতো কত দেশ এখনো দর্শক হয়ে দেখে বিশ্বকাপ আর আফসোস করে—ইশ্, আমরাও যদি থাকতাম।

একটা সময় অবশ্য বিশ্বকাপের মর্যাদা এতটা ছিল না। অনেক দেশ তো সুযোগ পেয়েও নানা অজুহাতে খেলতে যায়নি বিশ্বকাপে। ‘যাব না বিশ্বকাপে’—এ কথাটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ঘিরেই। ১৬ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দলের অভাবে শেষ পর্যন্ত ১৩ দল নিয়ে হয়েছিল চতুর্থ বিশ্বকাপ।

এশিয়া অঞ্চল থেকে বাছাইপর্বে নাম লিখিয়েছিল ভারত, বার্মা (এখনকার মিয়ানমার), ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন। বাছাইপর্ব শুরুর আগেই নাম প্রত্যাহার করে নেয় বার্মা, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন। তাতে কোনো ম্যাচ না খেলেই বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় ভারত।

১৯৫০ বিশ্বকাপের পোস্টার

কিন্তু ভারতও শেষ পর্যন্ত যায়নি। ব্রাজিলের মতো দূরের দেশে যাওয়ার মতো টাকা-পয়সার অভাব ছিল দলটির। অল ইন্ডিয়ান ফুটবল ফেডারেশন বিশ্বকাপে দল পাঠানোর চেয়ে ১৯৫২ হেলসিংকি অলিম্পিকে খেলাটাকেই বড় মনে করেছিল। ১৯৫০ বিশ্বকাপে ভারতের না খেলা নিয়ে আরেকটি তত্ত্বও আছে। ফিফা ভারতীয় খেলোয়াড়দের খালি পায়ে খেলার অনুমতি না দেওয়াতেই নাকি বিশ্বকাপে যায়নি ভারত!

ইউরোপ থেকে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েও ব্রাজিলে যায়নি স্কটল্যান্ড। কারণটা কী, জানেন—জাত্যভিমান। অধুনালুপ্ত ব্রিটিশ হোম চ্যাম্পিয়নশিপটাকেই বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব বানিয়েছিল ফিফা। গ্রেট ব্রিটেনের চার দল ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও আয়ারল্যান্ডকে নিয়ে আয়োজিত টুর্নামেন্টের শীর্ষ দুই দলের যাওয়ার কথা ছিল ব্রাজিলে। ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন ও স্কটল্যান্ড রানার্সআপ হয়ে টিকিট পায় বিশ্বকাপের। কিন্তু স্কটিশরা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, হোম চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন না হলে তারা বিশ্বকাপে যাবে না।

সুযোগ পেয়েও ব্রাজিল বিশ্বকাপে না যাওয়া তৃতীয় দল তুরস্ক। বাছাইপর্বে তুরস্ক ও সিরিয়া পড়েছিল এক গ্রুপে। দুবার মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু তুরস্ক প্রথম লেগ ৭-০ গোলে জেতার পর সরে দাঁড়ায় সিরিয়া। পরের রাউন্ডে তুরস্ক প্রতিপক্ষ পায় অস্ট্রিয়াকে। অস্ট্রিয়া কোনো ম্যাচ না খেলেই নাম প্রত্যাহার করায় বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে যায় তুর্কিরা। শেষ পর্যন্ত আর্থিক কারণে তুরস্কও বিশ্বকাপে যায়নি।

১৯৫০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে

তিনটি দল সরে দাঁড়ানোর পর ফিফা পর্তুগালকে বিশ্বকাপের টিকিট দিতে চেয়েছিল। সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় পর্তুগাল। ‘আমরা তো নিজ যোগ্যতায় বাছাইপর্ব পেরোতে পারেনি’—এমন যুক্তিতে বিশ্বকাপে যায়নি পর্তুগিজরা।

বাছাইপর্ব থেকে বাদ পড়া ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ডকেও বিশ্বকাপ খেলার প্রস্তাব দেয় ফিফা। ফ্রান্স রাজি হয়েছিল খেলতে। ড্রতে ৪ নম্বর গ্রুপের উরুগুয়ে ও বলিভিয়ার সঙ্গী হয় ফরাসিরা। সূচি প্রকাশের পর বেঁকে বসে দলটি। ব্রাজিলের দুই প্রান্তে দুটি ম্যাচ খেলতে হবে, তাই ভ্রমণ ক্লান্তির অজুহাতে সরে দাঁড়ায় ফ্রান্স।

আর খরচের কথা চিন্তা করে আইরিশরা ফিরিয়ে দেয় ফিফাকে।