আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি
আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি

গার্দিওলা সেরা কোচ, আবার জিততে চান বিশ্বকাপ: সাক্ষাৎকারে যা বললেন মেসি

আর্জেন্টিনাকে ২০২২ বিশ্বকাপ জিতিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের বৃত্ত পূরণ করেছেন লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপ জেতার পর ফুটবলের কাছ থেকে আর কোনো চাওয়া–পাওয়া নেই বলেও মন্তব্য করেছিলেন আর্জেন্টাইন এ মহাতারকা। কিন্তু ভক্ত–সমর্থক ও সতীর্থরা মেসিকে আরও একটি বিশ্বকাপে দেখতে চান।

মেসিও বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে আয়োজিত বিশ্বকাপে থাকতে চান। ২০২৬ বিশ্বকাপ, তার প্রস্তুতিসহ নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি ইএসপিএন আর্জেন্টিনার ‘স্পোর্টস সেন্টার’–এর মুখোমুখি হন মেসি। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ প্রস্তুতি

সত্যি কথা হলো, আমাদের দলে অসাধারণ খেলোয়াড় আছে এবং এটা বহু বছর ধরেই প্রমাণিত। বিশেষ করে স্কালোনি দায়িত্ব নেওয়ার পর দলের মধ্যে যে আগ্রহ, উদ্যম আর তাড়না তৈরি হয়েছে, তা আরও স্পষ্ট। সবার মানসিকতা দুর্দান্ত। এই দলের জয়ের মানসিকতা খুব শক্তিশালী, সবাই আরও জিততে চায়। আর এটা ছড়িয়েও পড়েছে সবার মধ্যে। অনুশীলনে হোক বা ম্যাচে, আপনি দেখবেন সবাই নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছে।

আমরা দুর্দান্ত একটি দল, একে-অপরের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মিশি। প্রত্যেকে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে, এটাই আমাদের দল এবং জাতীয় দলের বড় শক্তি। স্কালোনি ও তার কোচিং স্টাফই এই পরিবেশটা তৈরি করেছে। দলের প্রতিদিনকার পরিবেশ, মানসিকতা—সবকিছুই তাদের হাত ধরেই এসেছে। দলে আগে থেকে যারা ছিল, তাদের সঙ্গে নতুন মুখও যোগ দিচ্ছে। যখন দলের পরিবেশ এমন ইতিবাচক হয়, তখন নতুনদের মানিয়ে নেওয়াও খুব সহজ হয়। আর্জেন্টিনাকে এই মুহূর্তটা কাজে লাগাতে হবে। বিশ্বকাপ জয়ের পর দল যে আত্মবিশ্বাস আর স্বস্তি পেয়েছে, সেটা ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতার প্রস্তুতিকে একদম অন্য রকম করে তোলে।

বিশ্বকাপ জেতার পর মেসি ও স্কালোনি

স্কালোনি প্রসঙ্গে

আমার মনে হয়, প্রথম দিন থেকেই সে (স্কালোনি) একটি পরিষ্কার ভাবনা দাঁড় করিয়েছিল। আর আমার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, সে কীভাবে খেলা বোঝে বা ম্যাচের কৌশল সাজায়। পাশাপাশি দলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা। যেভাবে সে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আচরণ করে, সবার সঙ্গে আলাদা করে যোগাযোগ করে, তা দুর্দান্ত। সে জানে, কাকে কীভাবে বললে ভালোভাবে বুঝবে। সে নিজেই এই দলটা গড়ে তুলেছে, নতুন খেলোয়াড় এনেছে, এমন খেলোয়াড়ও, যাদের আর্জেন্টাইন ফুটবলে খুব বেশি পরিচিতি ছিল না। খেলোয়াড় যেখানেই খেলুক, সে তাদের বিবেচনায় রাখে। এটা আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের সব সময় অনুপ্রাণিত করে। তারা জানে যে ক্লাবে ভালো করলে যেকোনো সময়ই দলে ডাক পেতে পারে। এটা বাড়তি প্রেরণা আর এই সবকিছুই স্কালোনি করেছে। সে অসাধারণ।

বিশ্বকাপ নিয়ে স্কালোনির সঙ্গে আলাপ

আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি। স্কালোনিও বিষয়টা বোঝে, আর আমরা অনেকবার এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। সে সব সময় বলে যে যেকোনো ভূমিকাতেই সে আমাকে দলে চায়। আমাদের মধ্যে গভীর আস্থা আছে, আর আমরা সবকিছু খোলামেলা বলতে পারি।

পেপ গার্দিওলা

পেপ অনন্য। অসাধারণ অনেক কোচ আছেন, কিন্তু তাঁর মধ্যে একটা বিশেষ কিছু আছে—আমার কাছে সে-ই সবার সেরা। স্কালোনিকে নিয়ে যেমন বলেছি, পেপও ঠিক তেমন, যেভাবে তিনি বিষয়গুলো দেখেন, ম্যাচের কৌশল ঠিক করেন, খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেন… এসব কারণে তিনি আমার কাছে সর্বকালের সেরা। আমাদের ভাগ্য ভালো যে সেই সময়ে আমরা সবাই বার্সায় একসঙ্গে ছিলাম, সেও ছিল। নিজের মতো দল সাজাতে যেসব খেলোয়াড় দরকার ছিল, তিনি সবাইকেই পেয়েছিলেন।

বার্সেলোনায় কোচ পেপ গার্দিওলা ও খেলোয়াড় লিওনেল মেসির জুটি

এরপর তিনি অন্য ক্লাবে গেলেন এবং সেখানেও জিতলেন। শুধু জেতাই নয়—তাঁর দলগুলো কীভাবে খেলে, সেটাই আসল ব্যাপার। বায়ার্নে তিনি সেটা করেছেন, সিটিতেও করেছেন। বায়ার্নে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ না জিতলেও তিনি জার্মানির ফুটবল খেলার ধরনই বদলে দিয়েছেন, যেখানে আগে একেবারেই ভিন্ন ধরনের ফুটবল খেলা হতো। ইংল্যান্ডেও তিনি একই কাজ করেছেন…তিনি শুধু কোনো দলকে বদলান না—পুরো লিগের ফুটবল খেলার ধরনই বদলে দেন। শুরুর দিক থেকেই আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। পেপ খুবই কাছের মানুষ ছিলেন, আমরা অনেক কথা বলতাম এবং তাঁর কাছ থেকে আমি অনেক শিখেছি।

ক্যারিয়ারের সেরা বছর

আমি জানি না। এটা বলা কঠিন। আপনি কীভাবে দেখেন, তার ওপর নির্ভর করে। আমি পরিসংখ্যান খুব পছন্দ করি না; যদিও আজকাল সবকিছুই পরিসংখ্যানকেন্দ্রিক। আমি খেলায় পুরোপুরি যুক্ত থাকতে পছন্দ করি। এমন অনেক বছর ছিল, যখন আমরা সব জিতেছি। জাতীয় দলের হয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেছি, বার্সেলোনার সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছি। কোনো একটা বছর বেছে নেওয়া কঠিন। ২০১২ সালে আমি ৯১টা গোল করেছি। কিন্তু আমি এটার জন্য খেলি না, কখনোই এসব নিয়ে ভাবিনি। কোনো রেকর্ড ভাঙার জন্য বা কাউকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য আমি কখনো অ্যাসিস্ট করিনি। এসব আমার মাথায়ই আসত না। একটা বছর বেছে নেওয়া কঠিন।

মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি

আর্জেন্টিনার ২০২৬ বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা

আমার মনে হয়, আমাদের দারুণ একটি দল আছে এবং আমরা আবারও চেষ্টা করব। তবে এরপরও ছোট ছোট বিষয় আপনাকে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দিতে পারে। যেকোনো জাতীয় দলই আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে—একটা শট পোস্টে লেগে বেরিয়ে গেলেই আপনি বাদ বা পেনাল্টিতে হেরে যেতে পারেন। আমরা যদিও পেনাল্টিতে জিতেছিলাম, কিন্তু নেদারল্যান্ডস আর ফ্রান্সের বিপক্ষে আমরা ভালো খেলেছিলাম। তারপরও ম্যাচ পেনাল্টিতে গড়ায়।

আমাদের সৌভাগ্য যে দিবু (এমিলিয়ানো মার্তিনেজ) ছিল, যে আমাদের জিততে সাহায্য করেছে। কিন্তু পেনাল্টিতে যেমন জেতা যায়, তেমনি হেরেও যাওয়া যায়। বিশ্বকাপ জেতা সত্যিই খুব কঠিন। এটা আলাদা অনুভূতি—দর্শক হিসেবে, খেলোয়াড় হিসেবে, সমর্থক হিসেবে—সব ক্ষেত্রেই আলাদা। এখন দলের অবস্থা দেখে আমি নিশ্চিত যে তারা লড়াই করবে। (২০২২ বিশ্বকাপ) জেতার পর আমাদের কাঁধের বিরাট চাপ নেমে গেছে। সেই চাপ ছাড়া খেলা অবশ্যই স্বস্তির, কিন্তু একই সঙ্গে এটা কোনো নিশ্চয়তাও দেয় না। কারণ, সবাই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের বিরুদ্ধে জিততে চায়। স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, ব্রাজিল—যারা অনেক দিন চ্যাম্পিয়ন হয়নি এবং আবার জিততে চায়। এ ছাড়া জার্মানি… এই সব দলই খুব শক্তিশালী।

আর্জেন্টিনা ফুটবল দল

২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন কি না

আমি আশা করি, আমি সেখানে থাকতে পারব। আগেও বলেছি, আমি মনেপ্রাণে সেখানে থাকতে চাই। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি যেটা হতে পারে, মাঠে গিয়ে সরাসরি খেলা দেখতে হবে। তবু এটা বিশেষ কিছু। বিশ্বকাপ সবার জন্যই বিশেষ, যেকোনো দেশের জন্যই। আমাদের জন্য তো আরও বেশি। কারণ, আমরা এটাকে একদম ভিন্নভাবে অনুভব করি।