Thank you for trying Sticky AMP!!

মেসির গোল উদ্‌যাপন

সত্যি এটাই—যা করার মেসি একাই করছেন

রোজারিওর ছেলেটার জন্য আজকের সকালটা অন্য রকম হতে পারত। বাজতে পারত বিষাদের বিউগল আর ধূসর হয়ে যেতে পারত গায়ে লেপটে থাকা আকাশী–নীল রংটা। আবারও দেখা যেতে পারত, হতাশা আর বেদনায় ঝুঁকে পড়া একটা চোয়ালের ছবি!

কিছুই তো তাঁর পক্ষে যাচ্ছিল না। মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচের ৬৩ মিনিট পর্যন্ত মেসিকে মনে হচ্ছিল বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ। গোলবারের নিচে এমিলিয়ানো মার্তিনেজ দাঁড়িয়ে ছিলেন। আর মেসির চারপাশে ৯ জন খেলোয়াড় দৌড়াচ্ছিলেন, চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন নিরন্তর। কিন্তু এরপরও বড্ড একা মনে হচ্ছিল আর্জেন্টিনার ছোট্ট জাদুকরকে!

Also Read: বিশ্বকাপে ‘নতুন জীবন’ পেয়ে যা বললেন মেসি

খোদ ভক্তরাই তখন বলতে শুরু করেছিলেন, এমন ফুটবল তো চোখের যন্ত্রণা! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভেসে যাচ্ছিল বিরক্তি আর ক্ষোভ মেশানো কথার তুবড়িতে। কেউ যেন আর বিশ্বাস রাখতে চাইলেন না তাঁর ওপর। মনে হচ্ছিল, জাদুকর তাঁর জাদুর ছড়িটা হারিয়ে এদিক-ওদিক খুঁজে ফিরছেন। তখন চারদিকে একটাই প্রশ্ন ঘুরছিল—শেষটা তাহলেই এভাবেই হবে!

ম্যাচেরও তখন পড়ন্তবেলা। মেক্সিকোর সঙ্গে ড্র যে খাদের আরও কিনারায় নিয়ে যাবে আর্জেন্টিনাকে। আর যদি হেরেই যায় তাহলে তো মেসির রাজপাটে বেজে উঠবে বিদায়ের বেহাগ—বিশ্বজোড়া ফুটবলপ্রেমীদের মনে তখন এমন অশনির আনাগোনা, আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মনটা পূরবীর রাগে ভারী!

কাতার বিশ্বকাপে দ্বিতীয় গোল পাওয়ার পর মেসি

সবকিছুতে যখন বিরুদ্ধস্রোত, ড্র কিংবা হারের শঙ্কায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল চারপাশ, আড়মোড়া ভাঙলেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি নামের জাদুকর। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের কাছে এ যেন ২০ বছর ঘুমিয়ে থাকার পর রিপ ভ্যান উইংকেলের জেগে ওঠার গল্পের মতো। মেসি যখন জাগলেন পৃথিবীটা নতুন, একেবারেই অন্য রকম। এরপরই মেক্সিকান ওয়েভের কলে আটকে হাঁসফাঁস করতে থাকা জাদুকর দেখালেন তাঁর বাঁ পা নামের জাদুর কাঠির ঝলক। আর কী লাগে! খেল খতম, পয়সা উসুল!

Also Read: পোল্যান্ডের জয়ের পর যেমন হলো আর্জেন্টিনার শেষ ষোলোয় ওঠার সমীকরণ

প্রথম ও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মেসিকে রীতিমতো শেকলবন্দী করে রেখেছিলেন মেক্সিকান ডিফেন্ডাররা। কিন্তু আর কতক্ষণ! ডি–বক্সের বাইরে কয়েক মুহূর্তের জন্য একটু ফাঁকা জায়গা পেয়েছিলেন। গায়ে লেগে মার্কার হয়তো ক্ষণিকের জন্য মনযোগ হারিয়েছিলেন। ব্যস, মেসি নামের জাদুকরের জন্য ওটুকুই যথেষ্ট। মেক্সিকানদের বিবশ করে দিয়ে দেখালেন তাঁর জাদুর খেল।

Also Read: মেসিদের নতুন শুরু

পোস্টের কোনার দিকে লক্ষ্য করে নিলেন মাটি কামড়ানো শট। বিশ্বকাপ এলে সাধারণ মানের গোলরক্ষক থেকে ‘লেভ ইয়াসিন’ হয়ে ওঠা গিয়ের্মো ওচোয়াও কিছু করতে পারলেন না। বল জালে জড়াতেই তো শুরু হলো উৎসব। আর্জেন্টিনা দল এবং সমর্থকদের জন্য এ যেন নতুন ‘জীবন দান’ করলেন মেসি।

মেসি–দি মারিয়াদের উদ্‌যাপন

সৌদি আরবের বিপক্ষে হারের পর থেকে সমালোচকদের কথার বানে বিদ্ধ হচ্ছিলেন আর্জেন্টানই তারকা। ফুটবল–বিষয়ক খবরের ওয়েবসাইট গোল ডটকম গতকাল একটা খবরের শিরোনাম করেছিল এরকম—কোনো অজুহাত নয় লিও, সর্বকালের সেরারা কখনো প্রথম রাউন্ডে বিদায় নিতে পারে না! এই একটি লাইনই বলে দিচ্ছিল সব। মানেটা হয়তো মেসিও বুঝলেন, যা করার তা একা তাঁকেই করতে হবে। নিজের সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপটাকে রাঙাতে কাল সেটাই করলেন এই মহাতারকা।

Also Read: আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপে টিকিয়ে রাখলেন মেসি

সাম্প্রতিক অতীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা কথা বেশ ভাইরাল হয়েছিল—মেসি একা কী করবেন! তবে আর্জেন্টিনার এই দল টানা জয়ে থাকার পর সেই ধারণা অনেকটা বদলে গিয়েছিল। নতুন করে সবাই বলতে শুরু করে, মেসি এখন আর একা নন।

বিশ্বকাপে আসার আগেও আর্জেন্টিনা দলেরও বড় স্লোগান ছিল এটাই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মেসিকে তাঁর নিজের জন্য, আর্জেন্টিনার মানুষের জন্য, দলটির সমর্থকদের জন্য আবারও একাই করতে হলো আসল কাজটা। আর সেটা তিনি এমন সময় করলেন, যখন সম্ভবত এই কাজ মেসি ছাড়া কেউ করতে পারতেন না!

Also Read: ‘মেসি জানে কীভাবে সেরা কাজটা করতে হয়’

স্বপ্নটা অবশ্য মেসির একার নয়। ৩৬ বছর ধরে আরেকটি বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের অপেক্ষার প্রহর গুনে আসা আর্জেন্টাইন সমর্থকদেরও। যাঁরা তাঁদের সেই স্বপ্নের ভার পুরোটাই তুলে দিয়েছেন মেসির কাঁধে।

Also Read: যেখানে ম্যারাডোনার পাশে মেসি

মেসি তো একটি বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের জন্য নিজের স্বপ্নের ভারও বইছেন দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে। আরও অনেকবারের মতো গতকালও আর্জেন্টিনার ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হওয়া মেসি পারবেন নিজের আর বিশ্বজোড়া কোটি কোটি ভক্তের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে!