এবার হংকংয়ের অতিথি হামজারা। গত পরশু ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে শেষ মুহূর্তের গোলে হংকংয়ের কাছে হেরে গেছে বাংলাদেশ। একই দলের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের ফিরতি ম্যাচটি আগামী মঙ্গলবার। সে ম্যাচের জন্য গতকাল ঢাকা ছেড়েছেন রহমত মিয়া, হামজা চৌধুরী, সোহেল রানা জুনিয়র, জায়ান আহমেদরা (বাঁ থেকে)
এবার হংকংয়ের অতিথি হামজারা। গত পরশু ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে শেষ মুহূর্তের গোলে হংকংয়ের কাছে হেরে গেছে বাংলাদেশ। একই দলের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের ফিরতি ম্যাচটি আগামী মঙ্গলবার। সে ম্যাচের জন্য গতকাল ঢাকা ছেড়েছেন রহমত মিয়া, হামজা চৌধুরী, সোহেল রানা জুনিয়র, জায়ান আহমেদরা (বাঁ থেকে)

হেরেও মাথা উঁচু, তারপরও কিছু প্রশ্ন

জাতীয় স্টেডিয়ামের আলো তখনো নিভে যায়নি। স্কোরবোর্ডে লেখা ৪–৩। কিন্তু পরশু মাঠে যে বাংলাদেশকে দেখা গেল, ম্যাচ হারলেও তারা মন জিতেছে সমর্থকদের। ৩–১ গোলে পিছিয়ে পড়েও যারা হাল ছাড়েনি, দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে ৩–৩ করে ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে গোল খেয়ে হেরে গেছে। এশিয়ান কাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হংকংয়ের বিপক্ষে এ লড়াই বাংলাদেশের ফুটবলে যেন নতুন এক বিজ্ঞাপন।

ম্যাচের ৭ গোলের ৫টিই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পর প্রথমার্ধের শেষ দিকে ১–১ করেছে হংকং। প্রথমার্ধ নিয়ে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা বলেছেন, ‘আমার সময়ে এটিই ছিল আমাদের সেরা প্রথমার্ধ।’

আগে থেকেই বলছি, কাবরেরা যোগ্যতাসম্পন্ন কোচ নন। বাংলাদেশে আসার আগে একাডেমি পর্যায়ের কোচ ছিলেন। কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। এখানে প্রায় চার বছর হচ্ছে তাঁর। আমি বলব, একজন অভিজ্ঞ কোচ থাকলে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশ দলের জন্য ভালো হতে পারত। সাফ জিততে না পারার পরই তাঁকে বাদ দিয়ে নতুন কোচ আনা দরকার ছিল।
আলফাজ আহমেদ, কোচ, মোহামেডান

কাবরেরার এই দাবির সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন। বাংলাদেশ সত্যিই ভালো খেলেছে। কিন্তু এই ভালো খেলার মধ্যেও একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠছে। কোচের দল নির্বাচন, কৌশল এবং সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—কাবরেরা এখনো কি এই দলের উপযুক্ত কোচ?
শমিত সোম, জায়ান আহমেদ বা ফাহামিদুলকে একাদশে না রাখা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। এ নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে বাংলাদেশের চারজন শীর্ষস্থানীয় কোচ আলফাজ আহমেদ, মারুফুল হক, শফিকুল ইসলাম মানিক ও জুলফিকার মাহমুদ মিন্টুর সঙ্গে। একটা ব্যাপারে সবাই একমত—বাংলাদেশের খেলার মানে অনেক উন্নতি হয়েছে। গোল পেয়েছে, লড়াই করেছে, দর্শককে আনন্দ দিয়েছে। আবার বিষাদও ভর করেছে ম্যাচ শেষে। তবে মতভেদ রয়েছে কোচের দল নির্বাচন ও তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে।

ডাগআউটে চিন্তিত বাংলাদেশ ফুটবল দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা

হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচটাকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে ভালো ম্যাচ’ বলছেন আলফাজ। তবে কোচের দল নির্বাচনে ত্রুটি ধরা পড়েছে তাঁর চোখে, ‘খেলোয়াড় নির্বাচন নিয়ে সমস্যা ছিল। চার–চারটি গোল খেয়েছে রক্ষণভাগ। আমার মতে রক্ষণভাগ ঠিকভাবে সাজাতে পারেননি কোচ। এটা তাঁর সীমাবদ্ধতা হতে পারে, অথবা ব্যর্থতা।’

ইতিবাচক দিকও চোখে পড়েছে আলফাজের, ‘তিনটি গোল পেয়েছি আমরা, সেটাই প্রমাণ করে দল এগোচ্ছে। ভুল হবে, আর সেই ভুল ঠিক করলে ফলও আসবে।’ তবে সেটা কাবরেরার অধীনে হবে বলে মনে করেন না আলফাজ, ‘আগে থেকেই বলছি, কাবরেরা যোগ্যতাসম্পন্ন কোচ নন। বাংলাদেশে আসার আগে একাডেমি পর্যায়ের কোচ ছিলেন। কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। এখানে প্রায় চার বছর হচ্ছে তাঁর। আমি বলব, একজন অভিজ্ঞ কোচ থাকলে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশ দলের জন্য ভালো হতে পারত। সাফ জিততে না পারার পরই তাঁকে বাদ দিয়ে নতুন কোচ আনা দরকার ছিল।’

হামজা-শমিতরা আসার পর কয়েকটা ম্যাচ দেখেই কোচকে বিচার করা ঠিক হবে না।
মারুফুল হক, কোচ, আবাহনী

মারুফুল হকের কাবরেরার মনোনীত একাদশ নিয়েই আপত্তি, ‘একাদশটা হবে কোচ কী চান, সেই ভাবনা থেকে। কাবরেরার একাদশ দেখে মনে হয়নি তিনি জিততে চান। যতক্ষণ শমিতের খেলা দেখেছি মনে হয়েছে, শারীরিক ও মানসিকভাবে শুরু থেকে খেলার জন্য সে তৈরি ছিল। সব বিবেচনায় নিলে শুরু থেকে শমিত থাকতে পারত। লেফট ব্যাক সাদের কোনো ক্রস দেখিনি। জায়ান শুরু থেকে থাকলে হয়তো ভালো হতো। আমার মনে হয়, ওরা র‌্যাঙ্কিংয়েই এগিয়ে। ওদের বিপক্ষে আমাদের জয়ের চিন্তা নিয়েই খেলা উচিত ছিল।’

হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন হামজা চৌধুরীরা

বাংলাদেশের খেলার প্রশংসা করে এর অনেকটা কৃতিত্ব হামজাকে দিয়েছেন মারুফুল। হামজা ফ্রি–কিকে দারুণ গোল করেছেন, রক্ষণ–আক্রমণ সবখানেই তিনি। তাঁর মতো খেলোয়াড় থাকলে খেলা ভালো হবেই, মত মারুফুলের। কোচের সমালোচনা করলেও এখনই কাবরেরাকে বিদায় করে দেওয়ার পক্ষে নন মারুফুল, ‘হামজা-শমিতরা আসার পর কয়েকটা ম্যাচ দেখেই কোচকে বিচার করা ঠিক হবে না।’

খেলোয়াড়েরা শিশুসুলভ ভুল করেছে। তৃতীয় গোলের উৎস তৈরি হয়েছে সাদের পায়ের ফাঁক দিয়ে। এভাবে রক্ষণ করলে জেতা সম্ভব না।
সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু

জাতীয় দলের সাবেক কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক দলের পারফরম্যান্সে খুশি হলেও কোচের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরও প্রশ্ন আছে, ‘জায়ান, শমিতকে একাদশে না রাখার যে সিদ্ধান্ত কাবরেরা নিয়েছেন, তা কাজে আসেনি। শমিতকে আগে নামালে ভালো হতে পারত, তবে কোচেরও হয়তো যুক্তি আছে। ও ইনজুরি থেকে ফিরেছে, সামনে ম্যাচ আছে। তাই হয়তো ভেবেছেন পরে নামাবেন। সিদ্ধান্তটা কোচের অধিকার।’ মানিক যোগ করেন, ‘বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গোল খায়নি, সেটাই বড় উন্নতি। এখন সময় দিতে হবে দলটাকে।’

হামজা চৌধুরীর এই ছবিটাই বলে দিচ্ছে সব!

কোচ বদল উচিত কি না, মানিক তা ছেড়ে দিচ্ছেন বাফুফের ওপরই। তবে ১৪ অক্টোবর হংকংয়ের কাছে হংকংয়ের মাঠে বাংলাদেশ হারলে নাটকীয় কিছু ঘটতে পারে অনুমান তাঁর, ‘১৪ অক্টোবর হংকংয়ের সঙ্গে ফিরতি ম্যাচে ফল ভালো হলে কোচ টিকে যেতে পারেন। তবে এই ম্যাচে খারাপ হলে কোচ হয়তা নিজেই বিদায় নিয়ে চলে যেতে পারেন।’

সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু হতাশ ফুটবলারদের ব্যক্তিগত ভুলে হার দেখে, ‘খেলোয়াড়েরা শিশুসুলভ ভুল করেছে। তৃতীয় গোলের উৎস তৈরি হয়েছে সাদের পায়ের ফাঁক দিয়ে। এভাবে রক্ষণ করলে জেতা সম্ভব না।’ তাঁর মতে, ‘লেফট ব্যাকে জায়ান নেমে কার্যকর হয়েছে, আগে থেকে ওকে খেলালে লাভ হতো। কিন্তু এ–ও ঠিক, ব্যক্তিগত ভুলে ম্যাচ হাতছাড়া হয়েছে।’ কোচের একাদশ নির্বাচন বা তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি মিন্টু।