একসময় তাঁকে মনে করা হতো রিয়াল মাদ্রিদের ভবিষ্যৎ তারকা। কলম্বিয়ার ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মনে করা হয় তাঁকে। কিন্তু সেই হামেস রদ্রিগেজ এখন পরের মৌসুমে খেলার জন্য ক্লাব খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
বয়স ৩৪ চলছে। ফুটবলারদের জন্য ত্রিশের ওপরের বয়স মানে ক্যারিয়ারের সায়াহ্ন চলে আসা। কিন্তু হামেস যেন আড়ালে চলে গেছেন একটু আগেই। ফলে ২০১৪ বিশ্বকাপের পর যাঁকে মনে করা হয়েছিল বিশ্ব ফুটবলের ভবিষ্যৎ তারকা, সেই প্রতিশ্রুতির খুব কমই প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর ক্যারিয়ারে।
এখন খেলছেন মেক্সিকান ক্লাব লিওঁতে। তবে আর্থিক দুর্দশার কারণে ক্লাব তাঁকে ছেড়ে দিচ্ছে মৌসুম শেষে। রদ্রিগেজকে তাই আবার নতুন ঠিকানা খুঁজতে হচ্ছে। গুঞ্জন আছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের কোনো ক্লাবে পাড়ি জমাবেন। আর সে ক্ষেত্রে সেটা হবে তাঁর ক্যারিয়ারের ১৩তম ক্লাব।
মেক্সিকোতে মাত্র এক বছর কাটানোর পরই লিওঁর সঙ্গে হামেস রদ্রিগেজের পথচলা শেষ হতে যাচ্ছে। ইএসপিএনের খবর, লিগা এমএক্স-এর এই দলটি ২০২৫ অ্যাপারচুরা টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর কলম্বিয়ান মিডফিল্ডারকে আর চুক্তির আওতায় রাখছে না।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ, লিওঁর আর্থিক টানাপোড়েন এবং দলের বাজে ফর্ম। কোচ ইগনাসিও আমব্রিজের অধীনে তারা কোনো ছন্দই খুঁজে পায়নি। বর্তমানে দলটি লিগ টেবিলের ১৭তম স্থানে। এ বছর জানুয়ারিতে রদ্রিগেজ লিওঁতে যোগ দেন, তখন তাঁর ইচ্ছা ছিল ক্লাব বিশ্বকাপে খেলার। কিন্তু ক্লাবটি মালিকানার নিয়ম ভাঙার কারণে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়লে রদ্রিগেজের সেই স্বপ্নও ভেঙে যায়।
রদ্রিগেজের ফর্মও ভালো যাচ্ছে না। ৩৪ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার চলতি মৌসুমে লিগের ১২ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৩টি গোল। সব মিলিয়ে ক্লাবের হয়ে ৩২ ম্যাচে তাঁর গোল ৫টি। ক্লাউসুরার কোয়ার্টার ফাইনালে ছিটকে যাওয়া এবং অ্যাপারচুরাতে কোনো ছন্দ না পাওয়ায় ক্লাব এবং রদ্রিগেজ—দুই পক্ষই একমত যে আলাদা হয়ে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো পথ।
অথচ রদ্রিগেজের প্রতিভা নিয়ে কখনোই কোনো প্রশ্ন ছিল না। ধারাবাহিকতাই তাঁর ক্যারিয়ারের বড় সমস্যা। কলম্বিয়ার এনভিগাডোতে কিশোর বয়সে ক্যারিয়ার শুরু করার পর এটি তাঁর ১২তম ক্লাব। এরপর তিনি আর্জেন্টিনার বানফিল্ডে যান, সেখান থেকে ইউরোপে। পোর্তো, মোনাকো, রিয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ ও এভারটনের মতো বড় ক্লাবে খেলেছেন।
সেরা সময়ে হামেস রদ্রিগেজ ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ তারকাদের একজন। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জিতেছেন দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ। ২০১৪ সালে জেতেন ফিফা পুসকাস অ্যাওয়ার্ড, একই বছর বিশ্বকাপেও পান গোল্ডেন বুট। উরুগুয়ের বিপক্ষে তাঁর দুর্দান্ত গোল বিশ্বকাপের ইতিহাসের আইকনিক মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি হয়ে আছে। বিশ্বকাপে ঝলক দেখানোর পরই তাঁকে দলে কিনে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। ভাবা হচ্ছিল দলটির ভবিষ্যৎ তারকা।
কিন্তু কয়েক বছর ধরে রদ্রিগেজ নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। কাতার, গ্রিস ও মেক্সিকোতেও খুব বেশি দিন টিকতে পারেননি। তবে নামটা যেহেতু হামেস রদ্রিগেজ, তাঁকে নিয়ে কোনো কোনো ক্লাব এখনো আগ্রহী হতেই পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের অনেক ক্লাব, যেখানে বেশির ভাগ তারকা ফুটবলার ক্যারিয়ারের শেষ দিকেই পাড়ি জমান। তবে আমেরিকার ফুটবল মৌসুম শুরু হওয়ার জন্য আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে রদ্রিগেজকে।
তার আগে আপাতত মেক্সিকোতেই থাকতে হবে এই কলম্বিয়ানকে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে হতে চলা ২০২৬ বিশ্বকাপে যদি তিনি খেলতে চান, তার আগপর্যন্ত তাঁকে ক্লাব ফুটবলে সক্রিয় থাকতেই হবে। নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে বোঝাতে হবে, তিনি কলম্বিয়ার বিশ্বকাপ দলে থাকার যোগ্য। সে জন্য নতুন একটা ঠিকানা খুঁজে পাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই রদ্রিগেজের হাতে।