
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪০ ম্যাচে ১৭১ উইকেট নেওয়ার পর যুব বিশ্বকাপজয়ী হাসান মুরাদের টেস্ট অভিষেক হয়েছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। ২ ম্যাচের সিরিজে ১২ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি স্পিনার কথা বলেছেন টেস্ট অভিষেকের আনন্দ, এর আগের দীর্ঘ অপেক্ষা, ক্যারিয়ারের নানা বাঁক নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদুল হাসান
টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
হাসান মুরাদ: সবারই দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন থাকে। তা সত্যি হয়েছে, দলের জন্য ভালো অবদানও রাখতে পেরেছি; ওই আনন্দটা তো আছেই। এক বছর ধরে জাতীয় দলের সঙ্গে ছিলাম, ঘরে-বাইরে মিলিয়ে কয়েকটা সিরিজে সবকিছু কাছ থেকে দেখেছি। এ সময় সিনিয়রদের দেখে বোঝার চেষ্টা করেছি, স্কিল বা মানসিক দিক থেকে কীভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পর্যায়ে রাখা যায়। টেস্ট ক্রিকেটে একেক দিন একেক রকম চ্যালেঞ্জ থাকে—ডাগ আউটে বসে ভাবতাম একাদশে থাকলে কীভাবে এই পরিস্থিতিগুলো সামলে নিতাম।
দলের সঙ্গে ছিলেন সত্যি। তবু ম্যাচ খেলতে পারার আনন্দটা তো আলাদাই হওয়ার কথা। বিশেষত টেস্ট ক্যাপ পাওয়ার সেই মুহূর্তটা…
মুরাদ: ম্যাচ শুরুর এক-দুই দিন আগে থেকেই একটু একটু বুঝতে পারছিলাম যে এবার অভিষেক হবে। আমি মানসিকভাবে নিজেকে সব সময়ই খেলার জন্য প্রস্তুত রেখেছি। সিলেট টেস্টের আগে আমাকে (নাজমুল) শান্ত ভাই বলেছিল তৈরি থাকতে। যখন একাদশ ঘোষণা করা হলো, একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। অনেক দিন ধরে একটা জিনিসের জন্য পরিশ্রম করে গিয়েছি, যখন তা পেয়েছি স্বাভাবিকভাবেই ভালো লাগা কাজ করেছে। যখন মাঠে গেলাম, তাইজুল ভাই ক্যাপ পরিয়ে দিল—ওই অনুভূতিটা একটু অন্য রকম। আমার সব সময় ইচ্ছে ছিল যদি টেস্ট খেলি, উনি যেন ক্যাপটা পরিয়ে দেন।
তাইজুলের মতো আপনিও বাঁহাতি স্পিনার। এ কারণেই কি তাঁর কাছ থেকে ক্যাপ নেওয়ার ইচ্ছে ছিল?
মুরাদ: পরিচয়ের প্রথম দিন থেকেই তাইজুল ভাইয়ের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করেছি। দুই বছর ধরে তো ওনার আরও কাছে থাকার সুযোগ পেয়েছি। উনি ছোট ভাইয়ের মতো তাঁর সব অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছেন। বোলিংয়ে কোনো কিছুতে সমস্যায় পড়লে উনিই সবার আগে এগিয়ে আসেন। আমার সামনে কী কঠিন সময় আসবে বা কী ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়তে পারি, সেটাও উনি আগে থেকে বলে দিতে পারেন। সব মিলিয়েই ইচ্ছে ছিল অভিষেক ক্যাপ তাঁর কাছ থেকে নেব।
আপনি তো যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। আপনাদের সেই দলের অনেকেই জাতীয় দলে খেলেছে। সেই তুলনায় আপনি একটু দেরিতেই এলেন। মাঝের সময়টা কেমন কেটেছে?
মুরাদ: পেশাদার ক্রিকেটের মূল চ্যালেঞ্জটা অনূর্ধ্ব-১৯-এর পরই শুরু হয়। জাতীয় লিগ, প্রিমিয়ার লিগ, বিপিএল—যেখানেই খেলেছি, চেষ্টা করেছি উপভোগ করার। ঘরোয়া ক্রিকেটে স্কিল বা মানসিক দিক থেকে সব সময় শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
কাজটা নিশ্চয়ই সহজ ছিল না?
মুরাদ: অবশ্যই না। এ ক্ষেত্রে আমার স্ত্রী অনেক সাহায্য করেছে। ক্রিকেটার হিসেবে অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়, ত্যাগের প্রয়োজন হয়, প্রতিদিন একই রুটিন মেনে চলতে হয়। এসব করতে গেলে ধৈর্যটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যখন হতাশ হয়ে যেতাম, ধৈর্য শেষ হয়ে যেত তখন ও আমাকে বোঝাত, তোমারও সময় আসবে।
এত দিন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলাটা তো আপনাকে সাহায্যও করেছে নিশ্চয়ই?
মুরাদ: হ্যাঁ, আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন অনেক খেলা। যেখানেই সুযোগ পেয়েছি, আমি খেলেছি। আপনি যত বেশি ম্যাচ খেলবেন, অভিজ্ঞতা বাড়বে, দুর্বলতা বুঝতে পারেন, পরের দিন কোথায় উন্নতি করতে হবে, তা-ও ধরতে পারবেন। ওখানেই বুঝতে পেরেছি কোন সংস্করণে, কেমন পরিস্থিতিতে, কী রকম খেলতে হবে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলে বুঝেছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে হলে বা টিকে থাকতে হলে আমার কী করতে হবে।
বাকি দুটি সংস্করণ নিয়ে আপনার ভাবনাটা কেমন। বাংলাদেশে তো খুব সহজেই ‘টেস্ট ক্রিকেটার’ তকমা লেগে যায়…
মুরাদ: দেখেন, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিও তো ক্রিকেটই। বোলিংয়ের দিক থেকে তেমন পার্থক্য নেই। ক্রিকেট পুরোপুরি মানসিক একটা খেলা। টেস্টে হয়তো স্কিলের সঙ্গে ধৈর্যটা একটু বেশি লাগে। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে লাইন-লেন্থ একটু ভিন্ন থাকে। কিন্তু উপভোগ করলে তিনটা সংস্করণই সহজে খেলা যায়।
বোলিংয়ে আপনি কাউকে আদর্শ মানেন?
হাসান মুরাদ: আমাদের দেশেই অনেক ভালো স্পিনার আছে। তাঁরা অনেক মানসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ। আমি তাঁদের সবার কাছ থেকেই শেখার চেষ্টা করি। বাইরেরও প্রচুর খেলা দেখি। ডানহাতি স্পিনার হোক বা বাঁহাতি, কাউকে বল করতে দেখলেই আমি দাঁড়িয়ে যাই, তাঁদের কাছ থেকে নতুন কিছু শেখা যায় কি না দেখি। দেশের বাইরের স্পিনারদের মধ্যে নাথান লায়নের বোলিং ভালো লাগে। ভাবা যায়, অস্ট্রেলিয়ার একটা অফ স্পিনার ৫০০ উইকেট নিয়ে নিয়েছে!
টেস্টে আপনি কত উইকেট নিতে চান?
মুরাদ: মাত্র তো ক্যারিয়ার শুরু হলো। আল্লাহ জানে কত দিন খেলতে পারব। ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই আপাতত চিন্তা করি না। বর্তমানটা উপভোগ করে প্রতিনিয়ত উন্নতির চেষ্টা করে যাওয়াটাই এখন লক্ষ্য।
বোলার হিসেবে কোথায় উন্নতি করতে চান?
মুরাদ: আপনাকে বললে তো ব্যাটসম্যানরা জেনে যাবে (হাসি)! শক্তি বা দুর্বলতাগুলো আমার নিজের কাছেই থাকুক আপাতত—এগুলো না বলি।