
বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি বাস্ ক’রলে তাড়া,
বলি থাম্, একটু দাঁড়া!...
সেই ছোটবেলা থেকে শুরু! স্কুলজীবনজুড়েই কাজী নজরুল ইসলামের ছড়া-কবিতায় চোখ বুলানো। একটু যখন বেড়ে ওঠা, রক্তে কাঁপন তোলে ‘মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/ আমি সেই দিন হব শান্ত।’ এরপর কোনো এক অলস দুপুরে কাঁপা হাতে প্রিয়জনের উপহারের গায়ে লেখা, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন, খুঁজি তারে আমি আপনায়...।’
জাতীয় কবির সঙ্গে আমাদের পরিচয়টা অনেক দিনের। নিতান্তই কাছের মানুষ যেন মনে হয় চুরুলিয়া গ্রামের দুখু মিয়াকে।
নজরুলের গান-কবিতা-গল্প প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল এ প্রজন্মের তরুণদের সঙ্গে। শত বছর আগে জন্ম নেওয়া এই বিদ্রোহী কবি প্রসঙ্গে কী ভাবনা তাঁদের, জানতে চাওয়া হচ্ছিল। একেকজনের ভাবনা একেক রকম। তবু একটা ব্যাপারে সবাই একমত। সবার কাছেই নজরুল একান্ত আপনজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আদনান উর রহমান বলেন, ‘আমরা তো শুধু নজরুলের লেখাই পড়িনি, তাঁর জীবনের গল্পটাও পড়েছি। সেই যে গানের দলের সঙ্গে ঘর ছেড়ে পালানো, রুটির দোকানে কাজ—সেই অবস্থান থেকে এত দূর আসা। তাঁর জীবনটাই আমাদের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা। এই যে একটা কিছু করার উন্মাদনা, এটা সব তরুণের মধ্যেই থাকে। সবাই কাজে লাগাতে পারে না। নজরুল পেরেছিলেন।’
তারুণ্য, উদ্যম, প্রেরণা, বিদ্রোহ—এ শব্দগুলোর সঙ্গে অবধারিতভাবেই চলে আসে নজরুলের নাম। এমনটাই মনে করেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘নজরুল তো তরুণদেরই কবি। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, যৌবনের অপার মহিমায় গোটা তরুণসমাজকেই তিনি জাগ্রত করেছেন। নজরুলের গানের যে অসাধারণ বৈশিষ্ট্য, এর তুলনা বাংলা ভাষায় কমই আছে। আমি মনে করি, তাঁর গানের যে আবেদন, সেটা কখনো ফুরাবে না। অতীতে নজরুল তরুণদের উদ্বুদ্ধ করেছেন, ভবিষ্যতেও যেকোনো সংকটে তরুণেরা নজরুলকে স্মরণ করবে।’
ষাট-সত্তরের দশকের তরুণেরা হারমোনিয়াম-তবলার সঙ্গে গলা মিলিয়ে গাইতেন, ‘দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার...।’ আজকের দিনে হয়তো মুখগুলো বদলে গেছে, বদলেছে যন্ত্রানুষঙ্গও। আবেগটা একই আছে। আর্টসেলের ‘দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু’ও তরুণদের একইভাবে প্রেরণা জোগায়।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তাসমিয়া তাহমিদ। ছোটবেলা থেকেই নজরুলের গানের ভক্ত। বলছিলেন প্রিয় কবির ‘পরদেশী মেঘ’ গানটির কথা। ‘গানটা যখন শুনি, মনে হয় আমি একটি কুঁড়েঘরে বসে আছি। দূরের কোনো এক অজানা দেশের খবর জানতে পাঠাচ্ছি মেঘকে। জানতে চাই, আমি যেমন বাদল দিনে কাঁদি, সে দেশেও কি আমার মতো কেউ আছে? কী অসাধারণ গানের কথা! ছোটবেলা থেকে এতবার শুনেছি!’
নজরুলের কবিতা ও গানেই তরুণেরা মেতেছেন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে। নজরুলই তরুণদের কানে শুনিয়েছেন শিকল ভাঙার গান। এতকাল আগে লেখা শব্দগুলো কখনো পুরোনো হয়নি, হবেও না। নজরুলের গানেও আছে সে আভাস, ‘আমি চিরতরে দূরে চ’লে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে।’