মলাট রস

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি যদি এমন হয়

২ এপ্রিল শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। কেমন চলছে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি? উত্তরগুলো এ ক্ষেত্রে আমাদের কাছে ‘কমন’। কিন্তু একই উত্তর যদি একটু অন্য উপায়ে দিত পরীক্ষার্থীরা, তাহলে কেমন হতো? ভেবেছেন সাবেক এইচএসসি পরীক্ষার্থী সঞ্জয় সরকার ও এইচ এম ফজলে রাব্বী

.

ফুটবল কোচ
নিজেকে আমি একটা টিম হিসেবে দেখছি। আমার চারপাশে যারা বসবে তাদের এবং পরীক্ষককে নিয়ে আমার আলাদা পরিকল্পনা আছে। আমি জানি, তারা আমাকে ঠেকাতে চাইবে। কিন্তু চাইলেই গত তিন-তিনটা পাবলিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে জিপিএ ফাইভ পাওয়া শিক্ষার্থীকে ঠেকানো যায় না। চারপাশের বন্ধুদের সহায়তা এবং পরীক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জিপিএ ফাইভ বের করে আনবই!

আবহাওয়াবিদ
আগামী ২ এপ্রিল দুপুর ১২টা পর্যন্ত একযোগে দেশের সব বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অস্থায়ী গুজবসহ কোনো প্রকার হালকা থেকে মাঝারি ধরনের প্রশ্ন ফাঁসের অথবা উত্তরসহ প্রশ্ন ফাঁসের কোনো আশঙ্কা নেই। তাই আমার মা-বাবা আমাকে কঠোরভাবে পড়াশোনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামীকাল পড়ার টেবিল থেকে উঠব সন্ধ্যা ৬টা ৪৬ মিনিটে এবং পড়তে বসব ৫টা ২৩ মিনিটে। গতকাল সর্বোচ্চ পড়াশোনা করেছি সকালে এবং সর্বনিম্ন পড়াশোনা করেছি রাতে।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী
পড়াশোনা হলো একটা ‘স্ট্র্যাটেজিক্যাল গেম’। যত কৌশল, তত ফায়দা। বিষয় বুঝে পড়তে হবে। সব বিষয়কে সমান গুরুত্ব দেওয়ার কোনো দরকার নেই। বই অলসভাবে এক জায়গায় ফেলে রাখা যাবে না। ব্যবহার করতে হবে। এসব বিষয় সামনে রেখে এবার আমি প্রস্তুতি নিয়েছি।

জ্যোতিষী
এসএসসিতে একটা বিরাট ভুল করেছিলাম। নয়টা প্রশ্নের মধ্যে ছয়টার উত্তর দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু কী আশ্চর্য, আমি তিনটা বাদে সব প্রশ্নের উত্তর করেছি! তবে এবার আমার পরীক্ষাভাগ্য ভালো। শাস্ত্রমতে, প্রশ্ন ফাঁস না হলেও আমি জিপিএ ফাইভের উপযুক্ত দাবিদার। সবার পরীক্ষা সুখময় হোক!

বিটিভির খবর
পড়ছেন আমার রাত ৮টার বাংলা স্ট্যাটাস। প্রথমে চলে যাচ্ছি দেশের প্রধান প্রধান খবরে। আগামী ২ এপ্রিল দেশব্যাপী এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। শুনলাম, এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। আমি উৎসবমুখর পরিবেশে প্রস্ততি নিচ্ছি এবং শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা দেব বলে আশা করছি।

ইয়ো ইয়ো প্রজন্ম
প্রিপারেশন?! মাম্মাহ, কুল! এত চাপ নিয়ো না। চিল করো। মাস্তি করো। পার্টি ইজ গোয়িং অন!

ক্রিকেটার
আমি আমার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করব। সেরাটা ঢেলে দেব এই পরীক্ষায়। এই পরীক্ষাকে কোনোভাবেই হালকাভাবে নিচ্ছি না আমি। যেকোনো পরীক্ষাকে আমি সম্মানের চোখে দেখি। যেকোনো পরীক্ষাই আমাকে দিতে পারে ফেলের তিক্ত অভিজ্ঞতা। আমার প্রস্তুতিতে কোনো ত্রুটি রাখছি না। ইতিমধ্যে মোবাইল ফোনে চলে আসা কিছু ইমেজ ফুটেজ বারবার দেখছি। ইমেজের দুর্বলতা খোঁজার চেষ্টা করছি। বুঝতে পারছি না, এটা সাজেশন নাকি আসল প্রশ্ন! তবে ব্যাটে-বলে মিলে গেলে ছক্কা!

রাশভারী প্রাবন্ধিক
দুঃখের কথা তো আর সবাইকে বলতে পারি না। এসব পরীক্ষা-টরীক্ষার আদৌ কোনো দরকার আছে কি? সবই আমাদের মতো দুধের বাচ্চাগুলোকে বাঁশ দেওয়ার ধান্দা! আপনি উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকান। তাদের এত পরীক্ষা আছে? শুনেছি, সেখানে কোনো পরীক্ষা হয় না। এসব পুঁজিবাদী বুর্জোয়া সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে!

সদ্য প্রেমে পড়া তরুণ
আমি খুব রোমাঞ্চিত। আসলে আমার রোমান্সটা ভাষায় প্রকাশ করে আপনাদের বোঝাতে পারব না। সত্যি বলতে এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না! সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। হিজিবিজি হিজিবিজি লাগছে। আপনি হয়তো চিন্তা করছেন তিন-তিনটা পাবলিক পরীক্ষা দেওয়ার পরও এত রোমান্স কেন? কারণটা খুব সহজ। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ পাবলিক পরীক্ষা বলে কিছু নেই। মানুষ যখন পরীক্ষা দেয়, তখন প্রতিটি পরীক্ষাই প্রথম পরীক্ষা।

ব্যবসায়ী
কলেজ-জীবনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যস্ত থাকায় প্রস্তুতিতে মন্দাভাব চলে এসেছে। পড়ুয়া বন্ধুরাও আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সব মিলিয়ে জিপিএ-ফাইভ তো দূরের কথা, পাস করা নিয়ে চিন্তিত। তবে শিক্ষা বোর্ড যদি ‘বিশেষ লোন’ দেয় তবে জিপিএ-ফাইভের আশা করা যেতে পারে।

অর্থনীতিবিদ
আমার প্রস্তুতি দেশের আর্থিক অবস্থার মতো। একসময় আমাকে অনেকে ‘পড়াশোনাহীন স্টুডেন্ট’ বলত। এখন আর কেউ তা বলার সাহস করে না। এখন আমার পড়াশোনার চাকা উচ্চগতিতে ঘুরছে। এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছি। শ্রদ্ধেয় প্রবাসীরা দেশের রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য যেমন পরিশ্রম করছেন, তেমন পরিশ্রম আমি করেছি এইচএসসি পরীক্ষার জন্য।

রাজনীতিবিদ
ভাইসব, আপনারা সবই জানেন ও বোঝেন। কেউ কেউ আমার সব প্রস্তুতি বানচাল করার জন্য কীসব পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার আগে আপনারা যদি আমাকে ‘বিশেষ সহযোগিতা’ করেন তবে কথা দিচ্ছি জিপিএ-ফাইভ পাওয়ার পর আপনাদের সবাইকে ফেসবুকে মিষ্টির ছবিতে ট্যাগ করবই করব।

নবাগত নায়িকা
আসলে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিটা প্রশ্নের মৌলিক উত্তর দেওয়ার জন্য আমি বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি চাই, প্রতিটা পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে মিশে যেতে। আমি আশাবাদী সবাইকে একটি সুন্দর জিপিএ উপহার দিতে পারব। ফলাফল যা-ই হোক না কেন, আমার মা-বাবাও আমার রেজাল্টকে সাদরে গ্রহণ করবেন।