ক ম্পি উ টা র শি ক্ষা ১ ম প ত্র

এইচএসসি পরীক্ষার বিশেষ প্রস্তুতি-৪৯

অলংকরণ:মাসুক হেলাল
অলংকরণ:মাসুক হেলাল

প্রশ্নোত্তর 
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, কম্পিউটার শিক্ষায় একটু বাড়তি নজর দিলে সহজে জিপিএ-৫ পাওয়া সম্ভব।
প্রশ্ন: কম্পিউটার কী? কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো।
উত্তর: কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা তার মেমোরিতে সংরক্ষিত থাকা নির্দেশের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়, যা ডেটা গ্রহণ করে, ডেটাকে সুনির্দিষ্ট নিয়মে প্রক্রিয়াকরণ করে, ফলাফল তৈরি করে এবং ভবিষ্যতে এই ফলাফল ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে। বর্তমানে কম্পিউটারকে একটি ইলেকট্রমেকানিক্যাল যন্ত্র বলা হচ্ছে।
কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যাবলি: কম্পিউটারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গাণিতিক, যুক্তিমূলক ও সিদ্ধান্তমূলক কাজ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সম্পাদন করা। এ ছাড়া কম্পিউটারের বহুমুখী ব্যবহার ও জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে এর উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:

দ্রুতগতি: কম্পিউটারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি অসম্ভব বা অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে কাজ করে। এর দ্রুতগতির কারণ এটি বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে কাজ করে, যার গতি আলোর গতির চেয়ে কিছুটা কম। কম্পিউটারের কৃতকাজের গতিকে মিলিসেকেন্ড (১০-৩ সেকেন্ড), মাইক্রো সেকেন্ড (১০-৬ সেকেন্ড), ন্যানোসেকেন্ড (১০-৯ সেকেন্ড), পিকোসেকেন্ড (১০-১২ সেকেন্ড), ফেমটোসেকেন্ড (১০-১৫ সেকেন্ড) ইত্যাদি এককে প্রকাশ করা হয়। একটি শক্তিশালী কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে ৩০ থেকে ৪০ লাখ বা তার চেয়েও বেশি গাণিতিক কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম।
সূক্ষ্মতা: কম্পিউটারে প্রাপ্ত ফলাফলের সূক্ষ্মতা অতুলনীয়। যার ফলে গাণিতিক সমস্যার উত্তর দশমিকের পর অধিক সংখ্যা পর্যন্ত দিতে সক্ষম।
নির্ভুলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা: কম্পিউটারের সক্রিয়করণ অংশ অসংখ্য সূক্ষ্ম বৈদ্যুতিক বর্তনীর সমন্বয়ে গঠিত। এ জন্য কম্পিউটারকে যদি নির্ভুল উপাত্ত ইনপুট ও সঠিক প্রোগ্রাম সরবরাহ করা হয়, তবে এটি যেকোনো কাজ নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করতে পারে। প্রোগ্রামার যদি ভুল ডেটা কিংবা ইনস্ট্রাকশন ইনপুট দেয়, কম্পিউটারও তখন ভুল ইনফরমেশন দিয়ে থাকে।
ক্লান্তিহীনতা : কম্পিউটারের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্লান্তিহীনতা। কম্পিউটার ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্লান্তিহীন ও বিশ্রামহীনভাবে কাজ করতে পারে। দীর্ঘক্ষণ একটানা কাজ করলেও কম্পিউটার ক্লান্ত হয় না বা হিসাবে ভুল করে না।
প্রক্রিয়াকরণ: কম্পিউটারকে ইনপুট আকারে উপাত্ত প্রদান করা হয়। কম্পিউটার তার ব্যবহারকারীর দেওয়া উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পন্ন করার পর উপাত্তের ভিত্তিতে তৈরি ফলাফল বা আউটপুট প্রদান করে থাকে। হিসাব-নিকাশ, লেখালেখি, তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি যত প্রকার কাজ মানুষের প্রয়োজন হয়, কম্পিউটার সব রকমের কাজই প্রক্রিয়াকরণ করে দেয়।
ভুল শনাক্তকরণ ও সংশোধন: কোনো প্রোগ্রামকে কম্পিউটারে টাইপ করার পর প্রোগ্রাম চালিয়ে পরীক্ষা এবং পরবর্তী সময়ে ভুলগুলো নির্ধারণ করে কম্পিউটার নিজে।
স্বয়ংক্রিয়তা: কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে। কম্পিউটারকে কোনো কাজের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও নির্দেশনা দান করলে কম্পিউটার নিজে থেকেই সম্পূর্ণ কাজটি সমাধান করতে পারে।
যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত: কম্পিউটার কোনো রকম মৌলিক চিন্তাশক্তির অধিকারী নয়। কম্পিউটার যে শুধু বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করতে পারে তা নয়, সেই সঙ্গে লজিক প্রক্রিয়ায়ও সম্পন্ন করতে পারে এবং বিভিন্ন যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রোগ্রামে প্রদান করা যুক্তি অনুযায়ী কম্পিউটার সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।
বহুমুখিতা: কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র, যার সাহায্যে সাধারণ হিসাব-নিকাশ থেকে শুরু করে জটিল বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধান, ডেটা আদান-প্রদান, ডেটা সংরক্ষণ, ডেটা খুঁজে পাওয়া, শিক্ষা, বিনোদন, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি বহুবিধ কাজ খুব সহজেই সূক্ষ্ম ও দক্ষভাবে সুসম্পন্ন করা যায়।
স্মৃতি: কম্পিউটারের রয়েছে বিশাল মেমোরি। কোটি কোটি ডেটা ও নির্দেশ তাতে সংরক্ষণ করা যায়। নির্দেশ পাওয়ামাত্র কম্পিউটার তার মেমোরি থেকে সংরক্ষিত ডেটা দ্রুত ও নির্ভুলভাবে ব্যবহারকারীকে প্রদান করতে পারে। বিশাল আকারের ফাইল কম্পিউটার তার মেমোরিতে সংরক্ষণ করতে পারে যুগ যুগ ধরে অক্ষতভাবে। মেমোরি থেকে এসব ডেটা কম্পিউটার ন্যানোসেকেন্ডে খুঁজে বের করতে পারে।

প্রভাষক, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম