সামাজিক সমস্যার সমাধানে সাত অ্যাপ

ব্র্যাকাথনে বিজয়ী সাত অ্যাপের নির্মাতাদের সঙ্গে অতিথি ও আয়োজকেরা
ব্র্যাকাথনে বিজয়ী সাত অ্যাপের নির্মাতাদের সঙ্গে অতিথি ও আয়োজকেরা

ক্ষুধা-তৃষ্ণা, জরা-মৃত্যু, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ হাজারটা সমস্যা আমাদের। এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা যেমন একটা চ্যালেঞ্জ, কাটিয়ে ওঠাও আরেকটি চ্যালেঞ্জ। এমনই নির্দিষ্ট কিছু সমস্যার প্রযুক্তিগত সমাধান দিতে ব্র্যাকের উদ্যোগে স্মার্টফোনের অ্যাপলিকেশন (অ্যাপ) বানানোর এক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। ‘ব্র্যাকাথন’ নামের এই প্রতিযোগিতা শুরু হয় ৪ ডিসেম্বর সকালে। চলে টানা ৩৬ ঘণ্টা। প্রতিযোগিতাটির মূলমন্ত্র ছিল সামাজিক পরিবর্তনে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন। সাতটি বিভাগে সাতটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ী সেই সাতটি অ্যাপ নিয়েই এই আয়োজন।

শহরের রাস্তা উন্নয়নে ক্রাউডসোর্সিং
বিজয়ী: বুয়েট গেমচেঞ্জার
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দল বুয়েট গেমচেঞ্জারের সদস্যরা হলেন শাবাব শাহরিয়ার খান, সাইফুল ইসলাম, ওয়াসিফুর রহমান, সাইদুল হক, ওয়াসিফ আদনান খান। তাঁদের তৈরি অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা রাস্তার যেকোনো সমস্যার কথা জানাতে পারবে। বন্ধুতালিকা তৈরি করা যাবে, পূর্বে চিহ্নিত সমস্যাগুলোতে ভোট দিয়ে নিজের মতামত জানানো যাবে।

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ
বিজয়ী: রিবুট
একটু ভিন্ন পথে গিয়ে স্মার্টফোনের জন্য গেম বানিয়েছেন মো. রেজাউল হাসান, জিসান হায়দার, তৌসিফ জাহিন খান, জুনেদ আহমেদ চৌধুরী ও রাকিব খানের দল রিবুট। আনন্দের সঙ্গে নতুন কিছু শেখানো তাঁদের উদ্দেশ্য। রেজাউল হাসান বলেন, ‘যক্ষ্মার লক্ষণগুলো জানবে সবাই এই গেমের মাধ্যমে। সচেতনতা বাড়বে। গেমের ফাঁকে ফাঁকে আসবে প্রশ্ন, বেঁছে নিতে হবে সঠিক উত্তর। ভুল উত্তর দিলে সময় ফুরিয়ে যাবে দ্রুত।’ দলটির সদস্যরা ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র।

বিকাশ অ্যাপ
বিজয়ী: টেকনোলাইভ
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের সেবা বিকাশের জন্য অ্যাপ তৈরিতে সেরা হয়েছেন তানভীর সৌরভ, তারেক আল মুনতাসির, নাঈম বিন আহসান, মো. গোলাম মুক্তাদির ও মো. হাসিবুল হাসানের দল টেকনোলাইভ। তাঁরা সবাই আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী।

মাইক্রো-লার্নিং অ্যাপ
বিজয়ী: অ্যামিটি
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির দল অ্যামিটির সদস্যরা হলেন এস এম মহি-উস সুন্নাত, মনামি ইসলাম, শেখ হাসান স্মরণ, ইয়াসিন আহমেদ ও মনজুর রাকিব। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে পড়ুয়া এই দলের সদস্যরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন মাইক্রো-লার্নিং অ্যাপ বিভাগে। অ্যাপটি মূলত কোনো প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের জন্য।

অনলাইন ব্র্যাক কমিউনিটি
বিজয়ী: মিয়াকি
মিয়াকির সদস্যরা সবাই তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলা ট্র্যাক মিয়াকি ভিএএস লিমিটেডে কর্মরত। তাঁদের দলটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অনলাইন ব্র্যাক কমিউনিটি বিভাগে। সারা দেশে ব্র্যাকের সব সদস্যের সমস্যার কথা জানা, সেগুলোর সমাধান দেওয়া অ্যাপটির কাজ। শাখা অফিসগুলোতে যখন কোনো কর্মী পরিদর্শনে যান, তখন তাঁদের কাজের সমন্বয়েও অ্যাপটি ব্যবহার করা হবে। দলনেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শাখা অফিসগুলোর কাজের গতি পর্যবেক্ষণ করে প্রধান অফিস থেকে সম্ভাব্য সমাধান দেওয়া সম্ভব হবে অ্যাপটির মাধ্যমে।’ দলটির অন্য সদস্যরা হলেন এহসান জামান, রাফিদ মেহেদী, মোসতাক আহম্মেদ ও নাহিদুল ইসলাম।

ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট
বিজয়ী: ট্রায়াম্ফ আইটি
ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থী তুষার মনিরুল, আবীর মুহাইমিনুর ও জিন্নাতুন নেসার দল ট্রায়াম্ফ আইটি। তাঁদের অ্যাপটির দুটি অংশ। চালকের স্মার্টফোনে থাকবে একটি অ্যাপ, যেটি দিয়ে গতি, অবস্থান, জ্বালানি খরচ, সময় ধারণ করা হবে। কেন্দ্রীয় অংশে সবকিছু হিসাব-নিকাশ করে ফলাফল এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত জানানো যাবে। দলনেতা তুষার বলেন, ‘প্রতি ১৫ মিনিট পর পর জিপিএসের (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) মাধ্যমে গাড়ির অবস্থান দেখা হবে।’

মাইক্রো-ফিন্যান্স ডেটা অ্যাকসেস
বিজয়ী: এম পাওয়ার রেঞ্জারস
সোহেল সরদার, রায়হান আহমেদ, প্রশান্ত কুমার সরকার, মো. রুম্মান বিন আশরাফ ও হোসেন মো. সাইরাসের দল এম পাওয়ার রেঞ্জারস চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মাইক্রোফিন্যান্স ডেটা অ্যাকসেস বিভাগে। তাঁদের তৈরি অ্যাপের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্ষুদ্রঋণের তথ্য একত্রে জমা করে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পুনরায় গবেষণার মতো কাজে ব্যবহার করা যাবে।