পরামর্শ

সৃজনশীল প্রশ্ন: উদ্দীপক বোঝা জরুরি

অংশ-২ 

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, তোমরা হয়তো ইতিমধ্যে একটি ব্যাপার লক্ষ করেছ যে সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিতে কোনো প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি ঘটে না।

উত্তর দিতে গেলে তোমাকে একাধিক তথ্যের বিশ্ল্নেষণের ভিত্তিতে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তোমরা জান যে হাইড্রোজেনের (H) নিচের যেসব মৌল আছে এরা হাইড্রোজেনকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে না। যেহেতু কপার (Cu) মৌলটি H-এর নিচে সেজন্য (a) বিক্রিয়াটি ঘটছে না। সুতরাং প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে (i) সক্রিয়তাক্রমে কপারের অবস্থান—তথ্যটির কার্যকারিতা রয়েছে।
কিন্তু (b) বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে HNO3 একইসঙ্গে জারক (HNO3 (লঘু) 4H2O+2NO+[O]; Cu +[O] CuO) এবং অ্যাসিডের (CuO + HNO3Cu(NO3)2+H2O) ভূমিকা পালন করে। বিক্রিয়ক HNO3 গাঢ় বা লঘু যেকোনো ক্ষেত্রেই Cu-এর সঙ্গে বিক্রিয়া করবে। কিন্তু HCl গাঢ় বা লঘু যেকোনো ক্ষেত্রেই Cu-এর সঙ্গে বিক্রিয়া করবে না। সুতরাং উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য (ii) বিক্রিয়ক অণুসমূহের তুলনামূলক পরিমাপ—এর কোনো কার্যকারিতা নেই।
বিক্রিয়া (a)-এ এই জারণ-বিজারণ অনুপস্থিত কিন্তু বিক্রিয়া (b) তে এই জারণ-বিজারণ উপস্থিত। কাজেই তথ্য (iii) অ্যাসিড দুটির জারণ ধর্মের পার্থক্য—প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে বিবেচনা করতে হবে।
কাজেই তোমরা বুঝতেই পারছ যে তোমার পাঠ্যবইয়ের একাধিক তথ্যের বিশ্লেষণের মাধ্যমে তোমাকে প্রশ্নের উত্তরে উপনীত হতে হবে।
অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও এ রকম নতুন পরিস্থিতির আলোকে তোমাকে পাঠ্যবইয়ের একাধিক তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
ব্যাখ্যামূলক বা সৃজনশীল অংশের প্রশ্নসমূহের উত্তর দেওয়ার আগে শিক্ষার্থীর সামনে একটি নতুন পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে। এই নতুন পরিস্থিতি হচ্ছে দৃশ্যকল্প/উদ্দীপক। এই উদ্দীপকটি পাঠ্যবইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থী কতটুকু বুঝতে পেরেছে তা যাচাই করার জন্য উদ্দীপকটি তৈরি করা হয়। উদ্দীপকটির মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের মূল বিষয়বস্তুর মধ্যে প্রবেশ করবে।
এই উদ্দীপক/দৃশ্যকল্পের ওপর ভিত্তি করে চারটি প্রশ্ন করা হয় (ক, খ, গ, ঘ)। ‘ক’ ও ‘খ’ প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে একজন শিক্ষার্থীকে সাধারণত উদ্দীপকে যেতে হবে না। অর্থাৎ ‘ক’ এবং ‘খ’ প্রশ্ন দুটি উদ্দীপকের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল নয়। তবে পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। অর্থাৎ উদ্দীপকটি পাঠ্যবইয়ের যে অধ্যায় বা অধ্যায়সমূহের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, সেই অধ্যায় বা অধ্যায়সমূহ থেকেই ‘ক’ এবং ‘খ’ প্রশ্নটি করা হবে।
সৃজনশীল অংশে ‘ক’ প্রশ্নটি তোমার স্মরণশক্তিকে যাচাই করার জন্য দেওয়া হয়। অর্থাৎ তুমি পাঠ্যবইয়ের কোনো তথ্য মুখস্থ করে এই অংশের উত্তর দিতে পারবে। যেমন ফটিকের মামার নাম কী? বাংলাদেশের আইন পরিষদের নাম কি? বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রধানত কয় ধরনের শিল্প রয়েছে? কোন আমলে বাংলায় চিত্রশিল্পের বিকাশ ঘটেছিল? তাপ পরিবাহকত্ব কাকে বলে? শীর্ষ মুকুল কাকে বলে? ইত্যাদি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইয়ের কোনো তথ্য স্মরণ করার ক্ষমতাকে মূল্যায়ন করা হয়। এই প্রশ্নের নম্বর বরাদ্দ ১। সাধারণত ‘ক’ অংশের প্রশ্নের উত্তরের জন্য তোমাকে একটি শব্দ বা একটি বাক্যের বেশি লিখতে হবে না। যদি প্রশ্নের চাহিদা অনুযায়ী দরকার পড়ে তবে সর্বোচ্চ তিন বাক্যের মধ্যে তোমার উত্তর সীমাবদ্ধ রাখাটা বাঞ্ছনীয়।
শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের কোনো তথ্য ভালোভাবে বুঝেছে কি না তা যাচাই করার জন্য ‘খ’ প্রশ্নটি করা হয়। মাখনকে অকাল তত্ত্বজ্ঞানী বলা হয়েছে কেন? গণতন্ত্রে নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো। কীভাবে প্রান্তিক উপযোগ মোট উপযোগের একটি অংশ? কীভাবে প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতি গড়ে উঠে? তাপ মাধ্যমের সাহায্য ছাড়াও কীভাবে সঞ্চালিত হয় ব্যাাখ্যা কর। উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাসে একাধিক ট্যাক্সন রাখা হয় কেন? ব্যাখা করো—ইত্যাদি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইয়ের কোনো তথ্য বোঝার ক্ষমতাকে মূল্যায়ন করা হয়। ‘খ’ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে তার পাঠ্যবইয়ের তথ্য স্মরণ রাখলেই হবে না তাকে সেই তথ্য বুঝতে হবে এবং বুঝে নিজের ভাষায় উত্তর দিতে হবে। ‘খ’ প্রশ্নের নম্বর বরাদ্দ ২ এবং এই অংশের উত্তর লিখতে গেলে সর্বোচ্চ ৫টি বাক্যের মাধ্যমে উত্তর দেওয়াটা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে তোমাকে গুণে গুণে পাঁচ বাক্যেই উত্তর সমাপ্ত করতে হবে। তোমার প্রশ্নের চাহিদা অনুযায়ী বাক্যের সংখ্যা যদি কিছু কম বা বেশি হয় তাতে কোনো ক্ষতি নেই। মনে রাখতে হবে এই অংশের প্রশ্নের মাধ্যমে তোমার অনুধাবন করার দক্ষতাকে যাচাই করা হবে। অর্থাৎ পাঠ্য বইয়ের তথ্য (information) তুমি কতটুকু বুঝতে পেরেছ তা তোমাকে তোমার উত্তরের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ (পরীক্ষা ও মূল্যায়ন)

বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট, এসইএসডিপি
সমন্বয়ক, সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিবিষয়ক
মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

পরবর্তী অংশ ছাপা হবে আগামীকাল