বাংলা ১ ম প ত্র

২০১৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি-১৩

সৃজনশীল প্রশ্ন জীবন-বন্দনা
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, শুভেচ্ছা রইল। বাংলা ১ম পত্রের একটি সৃজনশীল প্রশ্ন এবং তার উত্তর দেওয়া হলো।

তোমায় প্রণাম করি জুড়ি দুই কর/ বন্ধ্যা পৃথিবী আবাদ করলে বজ্রমুষ্ঠিধর
দুপায়ে ঝড়ের গতি ছুটিছ উধাও/ গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে দলি নীহারিকা।
পুষিলে সাগর তুমি, মরুকে রসালে/গড়িতে আবাসভূমি পর্বত উড়ালে।
প্রশ্ন:
ক. ‘জীবন-বন্দনা’ কবিতার উৎস কী?
খ. ‘কাটি অরণ্য রচিয়া অমরাবতী’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? বর্ণনা করো।
গ. কবিতাংশটির প্রথম চরণ দুটিতে ‘জীবন-বন্দনা’ কবিতার কোন প্রচেষ্টার প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কবিতাংশটিতে ‘জীবন-বন্দনা’ কবিতার মর্মবাণীই প্রতিফলিত হয়েছে—মন্তব্যটি যাচাই করো।
উত্তর: ক. ‘জীবন-বন্দনা’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
উত্তর: খ. ‘কাটি অরণ্য রচিয়া অমরাবতী’ বলতে অরণ্য বা বন কেটে পরিষ্কার করে নগর বা উন্নত জনপদ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
একসময় পুরো পৃথিবী অরণ্য বা বনভূমি ছিল। শ্রমজীবী মানুষ বনের গাছপালা কেটে শিকড় উপড়ে ভূমিকে মুক্ত করেছে। তারপর সেখানে গড়ে তুলেছে জনপদ বা নগর। একসময় নানা সুযোগ-সুবিধা যুক্ত হয়ে এই নগর বা জনপদই হয়ে উঠেছে সুখ-শান্তির আবাস-স্বর্গপুরী বা অমরাবতী।
উত্তর: গ. কবিতাংশের প্রথম চরণ দুটিতে ‘জীবন-বন্দনা’ কবিতার ফসল ফলানোর কঠিন প্রচেষ্টার কথা বলা হয়েছে।
একসময় পৃথিবীর মাটি ছিল কঠিন, ছিল বনে-জঙ্গলে পূর্ণ, ছিল শ্বাপদসংকুল। এই মাটি আবাদ করা ছিল আরও কঠিন। এ জন্য সাহসী ও শ্রমজীবী মানুষকে গাছপালা কাটতে হয়েছে, শিকড় উপড়ে ফেলতে হয়েছে, কঠিন মাটি কুপিয়ে নরম করতে হয়েছে। তাদের হাতে-পায়ে কড়া পড়েছে। তবুও থামেনি। রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে মাটি আবাদ করে, সেখানে ফলিয়েছে ফুল, ফল ও ফসল। কৃষক-শ্রমিকের এই প্রচেষ্টার ফলে পৃথিবী হয়ে উঠেছে অনুপম সুন্দর, পুষ্পময় ও মনোমুগ্ধকর। ‘জীবন-বন্দনা’ কবিতার মতো কবিতাংশের প্রথম দুটি চরণেও রয়েছে সাহসী ও শ্রমনিষ্ঠ মানুষ—কঠিন হাতে কীভাবে কঠিন ও বন্ধ্যা পৃথিবীকে আবাদযোগ্য করে তুলেছে। ফুল, ফল, ফসলে ভরিয়ে তুলেছে, শোভাময় করে তুলেছে ধরণি। বন্ধ্যা অপবাদ ঘুচিয়েছে চিরকালের জন্য।
উত্তর: ঘ. কবিতাংশটিতে ‘জীবন-বন্দনা’ কবিতার মর্মবাণীই প্রতিফলিত হয়েছে—কথাটি যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত। কেননা তারুণ্যের অসীম সাহস ও বিপুল প্রাণশক্তিকে মানবমুক্তির জন্য সার্থকভাবে প্রয়োগের কথাই এখানে উচ্চারিত হয়েছে। পৃথিবীকে মনোরম ও সুন্দর করে তুলতে এবং মানবকল্যাণে যারা অকাতরে আত্মাহুতি দিয়েছে, কবি তাদের জয়গান গেয়েছেন। আর সুকঠিন কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে তারুণ্যদ্বীপ্ত ঊর্ধ্বশির মানুষ সাহস ও মেধার পরিচয় দিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছে। শ্রমনিষ্ঠ মেহনতি কৃষকের দৃঢ় কঠিন হাতের কবলে পড়ে পৃথিবীর মাটি উপহার দেয় ফুল, ফল ও ফসল। অসীম সাহস ও বিপুল প্রাণশক্তি নিয়ে যারা দুর্লঙ্ঘ পর্বত জয় করে, সাগর ভরাট করে নগর গড়ে, মেরুর বুকে অভিযান চালায়, প্রাণের উৎস খোঁজে গ্রহ-গ্রহান্তরে, কবি তাদের তারুণ্যশক্তি-দীপ্ত জীবনের প্রশংসা করেন অকুণ্ঠ চিত্তে।
কবিতাংশে ‘জীবন-বন্দনা’ কবিতার মূল সুরই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। বজ্রমুষ্ঠি ধারণকারী তারুণ্যশক্তি বন্ধ্যা পৃথিবীকে আবাদ করে ফুল-ফসলে সুশোভন করে তুলেছে। শুধু তা-ই নয়, তারা প্রয়োজনে বিস্ফোরণের মাধ্যমে পর্বত উড়িয়ে সেখানে গড়ে তুলেছে শান্তির আবাসভূমি। ধরণিকে ফুল-ফসলে ভরিয়ে দিতে এবং মানবকল্যাণে তারুণ্যশক্তির সাহস, মেধা ও শ্রমশক্তির প্রশস্তি উদ্ধৃত কবিতাংশে এবং ‘জীবন-বন্দনা’ কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রভাষক, রূপনগর মডেল কলেজ, ঢাকা