Thank you for trying Sticky AMP!!

শতাধিক তরুণের কর্মসংস্থান করেছেন ফায়সাল আহমেদ

রাজশাহীতে ফ্রিল্যান্সার ফায়সালের কোম্পানি, কাজ করছেন শতাধিক তরুণ

প্রায় এক দশক আগের কথা। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার একটি গ্রামে থাকেন ফায়সাল আহমেদ। বাগাতিপাড়ার জামনগর ইউনিয়ন বাজারে একদিন ওষুধ কিনতে যান ফায়সাল। ওষুধের দোকানে থাকা পত্রিকার পাতায় নিচের দিকে ছোট একটা বিজ্ঞাপন দেখতে পান তিনি। বিজ্ঞাপনটি ছিল এ রকম, ‘অনলাইনে কাজ শেখানো হয়, কাজ শিখে ঘরে বসে আয় করুন।’ সেই থেকে আগ্রহ, চেষ্টা আর এগিয়ে চলা।

ফায়সাল অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শিখেছিলেন, ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজে কাজ শুরু করেন। এখন তিনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। মুক্ত পেশাজীবী হিসেবে প্রথমে নিজেই নাটোরে বসে একা বিদেশের কাজ করেন। কাজ বাড়তে থাকলে সঙ্গে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে দল বানান। এখন আউটসোর্সিংয়ের নানা কাজ করতে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ৮ সেপ্টেম্বর মুঠোফোনে কথা হয় ফায়সাল আহমেদের সঙ্গে। কাছের মানুষের কাছে তিনি শশী নামে পরিচিত। তিনি জানান, এখন প্রতি মাসে তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতনই দিতে হয় ৩৫ লাখ টাকার মতো।

জানতেন না কিছুই

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে ফায়সাল আহমেদ বিশ্বাস করেছিলেন অনলাইনে ঘরে বসে টাকা আয় করা সম্ভব এবং তাঁকে সেটা করতে হবে। কিন্তু তখন তাঁর নিজের কম্পিউটার নেই। আবার জানেনও না কীভাবে কাজ শিখতে হবে। উচ্চমাধ্যমিকের পর ২০১২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হন ফায়সাল। তিনি বলেন, ‘স্নাতক প্রথম বর্ষে ক্লাসের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার কেন্দ্রেই আমার বেশি সময় কাটত। ১৫০ টাকায় এক বছরের জন্য ব্রডব্যান্ড সংযোগসহ কম্পিউটার কেন্দ্র ব্যবহারের সুযোগ আমার জন্য ছিল সোনার হরিণ পাওয়ার মতো।’

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে নিজের জন্য ল্যাপটপ কেনেন ফায়সাল। পরে বন্ধু আসিফ ও নাসিরকে নিয়ে কাজ শুরু করেন। তবে সঠিক দিকনির্দেশনা না পাওয়ায় ফ্রিল্যান্সিং করে তেমন আয় হতো না। মাঝেমধ্যেই হতাশ হয়ে পড়তেন। ফায়সাল বলেন, ‘২০১৩ সালে ফ্রিল্যান্সার ডটকমে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ খুঁজতে থাকি। একে একে ফ্রিল্যান্সার, ওডেস্ক (আপওয়ার্ক) ইত্যাদি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে (আউটসোর্সিং কাজ পাওয়ার ওয়েবসাইট) অ্যাকাউন্ট খুলি। এর পর থেকে নিয়মিত কাজ পেতে থাকি।’ একটা সময় পর মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ করা ছেড়ে দেন। নিজের প্রতিষ্ঠান করে ওয়েবসাইট চালু করেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি কাজ নিতে থাকেন ফায়সাল।

চলার পথে বাধা

কীভাবে শুরু করবেন আর কী শুরু করবেন—ফায়সালের কাছে এটাই ছিল কঠিন প্রশ্ন। রাজশাহী থেকে কাজ শেখা খুব সহজ ছিল না। ইউটিউবেও কাজ শেখার জন্য কনটেন্ট ছিল না সে সময়। গুগলের নিবন্ধই (আর্টিকেল) ছিল ভরসা। ২০১৩ সালের দিকে ইন্টারনেটের গতি ছিল কম, দাম ছিল বেশি। ফায়সাল বলেন, ‘মাস শেষে ইন্টারনেটের খরচ তোলাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কীভাবে টাকা ব্যাংকে আসবে, সেটাও তখন জানতাম না। আবার আমাদের সামাজিক মর্যাদাও একটা বিষয় ছিল। অনেকেই বলত ইন্টারনেটের কাজ ভুয়া বা দুই নম্বর।’

সফলতার সিঁড়ি

শুরুর বাধাগুলো ফায়সাল আহমেদ কাটিয়েছেন কঠোর পরিশ্রম, সততা আর সময়ানুবর্তিতা দিয়ে। দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করতেন। সারা রাত কাজ করে ভোর ছয়টার পর ঘুমাতে যেতেন। ঘুমানোর সময় ল্যাপটপে স্পিকার সংযুক্ত করে রাখতেন। যাতে গ্রাহক কোনো বার্তা পাঠালে সেটা আসার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়।’
ফায়সাল প্রথম কাজটি করেন ভারতীয় এক গ্রাহকের। ২৪০ রুপির কাজ ছিল এটি। কাজটা ছিল নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনের। নিজেই কাজ করতেন আবার নিজেই জমা দিতেন। তাই ফায়সাল তখন খুব বেশি কাজ হাতে নিতে পারতেন না। এক সময় মনে হলো কাজ বাড়াতে দল গঠন করতে হবে।

ফায়সাল আহমেদ

রাজশাহীর পদ্মা আবাসিক এলাকায় ছোট একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ২০১৭ সালে ফায়সাল চালু করেন নিজের প্রতিষ্ঠান ‘ক্লাস্টার ক্লাউড’। ২০২০ সালে ৩০ শতাংশ জমিতে বন্ধু মমিনুর, তাকি, রাসেল, রানা, পূর্ণ ও শুভকে সঙ্গে নিয়ে অ্যামাজোপিফাই লিমিটেড নামের কোম্পানি গড়ে তোলেন তিনি। ফায়সাল বলেন, ‘এখন এখানে শতাধিক তরুণ ২৪ ঘণ্টা ধরে কাজ করছে। ২০২১ সালে “জাতীয় সেরা ১০” বিভাগে বেসিস আউটসোর্সিং পুরস্কার ছিল আমার জীবনের অন্যতম অর্জন।’

ফয়সালের প্রতিষ্ঠানে আয় প্রতি মাসে সমান হয় না। মাসে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা আয় হয়। কর্মীদের বেতন হিসেবে ৩২ থেকে ৩৫ লাখ টাকা দিতে হয় প্রতি মাসে। বাকি টাকা থাকে ফায়সালের হাতে।

২০২১ সালে “জাতীয় সেরা ১০” বিভাগে বেসিস আউটসোর্সিং পুরস্কার

ফায়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে আমি অ্যামাজোপিফাই, ক্লাস্টার ক্লাউড এবং ইকম উইথ ফয়সাল নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি, যেখানে ২০০ জন নিয়মিত কাজ করছে। বেকারত্ব দূর করার জন্য আরও বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার চেষ্টা করছি। আমার সব প্রতিষ্ঠানই রাজশাহীতে অবস্থিত।‘

গড়ে তুলতে চান আইটি পার্ক

বড় আকারে আইটি পার্ক গড়ে তুলতে চান ফায়সাল। সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা তাঁর লক্ষ্য। তিনি তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও স্থাপন করতে চান। যেখানে স্নাতক হওয়ার আগেই তরুণেরা দক্ষ হয়ে উঠবেন। ফায়সালের স্বপ্ন চাকরির পেছনে তাঁরা ছুটবেন না বরং চাকরি তাঁদের পেছনে ছুটবে।