
অনেক সময় আমরা অন্যের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করি। তখন প্রয়োজনে ব্রাউজার ব্যবহার করি। এতে অন্যের কম্পিউটারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষিত হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রাউজারে প্রাইভেট বা ইনকগনিটো মোড ব্যবহার করতে পারেন। অনলাইন গোপনীয়তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাউজারে প্রাইভেট বা ইনকগনিটো মোডের ব্যবহারও দ্রুত বেড়েছে।
গুগলের ক্রোম ব্রাউজারে ইনকগনিটো মোডকে বাংলায় ‘ছদ্মবেশী মোড’ হিসেবে দেখা যায়। ক্রোম ব্রাউজারে ইনকগনিটো মোডে প্রবেশ করলে বিশেষ একটি বার্তা দেখায়। ক্রোমে দেখা যায়, অন্য যাঁরা এই যন্ত্র ব্যবহার করেন, তাঁরা আপনার অ্যাকটিভিটি দেখতে পাবেন না। তাই আরও ব্যক্তিগতভাবে ব্রাউজ করতে পারবেন।
অনেক নিয়মিত ব্যবহারকারী মনে করেন, ইনকগনিটো মোড চালু করলেই অনলাইন কার্যকলাপ পুরোপুরি গোপন করা যায়। তবে এ ধারণা আংশিক সত্য। এ সুবিধার ফলে ব্রাউজার ইতিহাস সংরক্ষণ হয় না বা সেশন শেষে কুকি মুছে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মোড মূলত যন্ত্রনির্ভর সীমিত মাত্রার গোপনীয়তা প্রদান করে। নেটওয়ার্ক স্তরে ব্যবহারকারীর প্রবেশাধিকার ও ব্রাউজিং কার্যকলাপ এখনো ইন্টারনেট সেবাদাতা (আইএসপি), কর্মস্থলের নেটওয়ার্ক প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের কাছে দৃশ্যমান থাকে।
ইনকগনিটো মোড চালু করলে ব্রাউজার স্থানীয়ভাবে তথ্য ব্যবস্থাপনার ধরনে পরিবর্তন আনে। এ সময় ব্যবহারকারী কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন, তা ব্রাউজারের ইতিহাসে সংরক্ষিত থাকে না। সেশনের সময় তৈরি হওয়া কুকি ও সাইট–সংক্রান্ত ডেটা প্রাইভেট উইন্ডো বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুছে যায়। ফরম পূরণ, অটো ফিল বা সংরক্ষিত লগইন তথ্যও সেশনে ব্যবহার করা হয় না। তবে সেশনের সময় যেসব ফাইল ডাউনলোড করা হয় বা বুকমার্ক তৈরি করা হয়, সেগুলো যন্ত্রে থেকেই যায়। অনেকেই ব্যবহার করেন, এমন কম্পিউটার বা বহুজনে ব্যবহৃত যন্ত্রে নিজের ব্রাউজিং–সংক্রান্ত তথ্য মুছে ফেলতে ইনকগনিটো মোড কার্যকর হতে পারে। যদিও এই সুরক্ষা শুধু যন্ত্রেই সীমিত থাকে। নেটওয়ার্ক স্তরে অতিরিক্ত কোনো গোপনীয়তা দেয় না।
নামে প্রাইভেট হলেও ইনকগনিটো মোড অনলাইন পরিচয় বা কার্যকলাপ সম্পূর্ণভাবে গোপন করে না। ব্যবহারকারীর ওয়েব ট্রাফিক যেহেতু সেবা প্রদানকারীর নেটওয়ার্ক দিয়েই যায়, তাই আইএসপি বা কর্মস্থলের নেটওয়ার্ক প্রশাসক দেখতে পারেন আপনি সাইটে প্রবেশ করেছেন। সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটও ট্র্যাকিং প্রযুক্তি, ব্রাউজার ফিঙ্গারপ্রিন্টিং বা লগইন করা অ্যাকাউন্টের ভিত্তিতে ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করতে পারে। এই মোডে আইপি ঠিকানাও দৃশ্যমান থাকে, যা ব্যবহারকারীর অবস্থান ও নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করে। ভিপিএন ছাড়া এই তথ্য গোপন করা সম্ভব নয়। ইনকগনিটো মোড ম্যালওয়্যার, কিলগার বা ফিশিং আক্রমণ থেকেও সুরক্ষা দেয় না।
বিভিন্ন ব্রাউজারে ইনকগনিটো বা প্রাইভেট সেশন চালুর উপায়ও আলাদা। গুগল ক্রোমের ডান দিকের থ্রি ডট মেনু খুলে ‘নিউ ইনকগনিটো উইন্ডো’ নির্বাচন করতে হয়। কি–বোর্ড শর্টকাট: কন্ট্রোল + শিফট + এন (উইন্ডোজ) এবং কমান্ড + শিফট + এন (ম্যাক)। অ্যাপল সাফারিতে ফাইল মেনু থেকে ‘নিউ প্রাইভেট উইন্ডো’ নির্বাচন করা যায়। ম্যাকে শর্টকাট: শিফট + কমান্ড + এন। আইফোন ও আইপ্যাডে ট্যাব আইকনে চাপলে ‘প্রাইভেট’ মোড নির্বাচন করা যায়।
শুধু ইনকগনিটো মোড ব্যবহার করলে অনলাইন অনুসরণ (ট্র্যাকিং) এড়ানো যায় না। আরও শক্তিশালী গোপনীয়তার জন্য বিকল্প প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ইন্টারনেট ট্রাফিক এনক্রিপ্ট করে আইপি ঠিকানা আড়াল করতে পারে। তখন ব্যবহারকারীর প্রবেশাধিকার ও অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হয়। এ ছাড়া টর ব্রাউজার অধিক নিরাপদ। যদিও এর গতি তুলনামূলক কম। এ ছাড়া গোপনীয়তাকেন্দ্রিক ব্রাউজার ও সার্চ ইঞ্জিনও কিছুটা নজরদারি কমাতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
https://timesofindia.indiatimes.com/technology/tech-tips/incognito-mode-what-is-it-what-happens-when-you-go-incognito-and-who-can-still-track-you/articleshow/125247390.cms