বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বা বাইকের বাজার দিন দিন বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠছে। ২০২৪ সালের শেষের দিক থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু আন্তর্জাতিক নির্মাতা নতুন মডেল বাজারে এনেছে, যা বাইকারদের মধ্যে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও আধুনিক সুযোগ–সুবিধা নিয়ে আসা এই মডেলগুলো দেশীয় বাজারে একটি নতুন ধারা সূচনা করেছে। একটা সময় ছিল যখন মোটরসাইকেল মানেই ছিল শুধুই যাতায়াতের বাহন। সময় বদলেছে। বাইক শুধু এখন গন্তব্যে পৌঁছানোর মাধ্যম নয়, এটি স্বকীয়তা, স্বাধীনতা ও প্রযুক্তির প্রকাশ। দেশের বাজারে সদ্য আসা নতুন মোটরসাইকেলগুলো এই রূপান্তরেরই প্রতিচ্ছবি। আধুনিক প্রযুক্তি, চমৎকার ভঙ্গি এবং আরামদায়ক চালানোর অভিজ্ঞতা—সবকিছু মিলিয়ে এবারের বাজার যেন বাইকারদের জন্য এক স্বপ্নপুরী। জেনে নেওয়া যাক মোটরসাইকেলপ্রেমীদের পছন্দের শীর্ষ বাইকগুলো সম্পর্কে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি প্রদানের পর আন্তর্জাতিক যে মোটরসাইকেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগিয়েছে, সেটি হলো রয়্যাল এনফিল্ড। গত ২৪ অক্টোবর আগাম ফরমাশে রয়্যাল এনফিল্ডের চারটি মডেলে দেশের বাজারে বিক্রির জন্য অবমুক্ত করে ইফাদ মটরস। চলতি বছর থেকে গ্রাহকেরা রয়্যাল এনফিল্ড ডেলিভারি পেতে শুরু করেন। এই বাইকগুলোকে দেশের সব বাইকের মধ্যে আলাদা করে চেনা যায়। বাইকপ্রেমীদের মধ্যে এমন এক নাম, যার প্রতি রয়েছে অদ্ভুত এক টান, এক আবেগ—রয়্যাল এনফিল্ড। ভারী শব্দ, ক্ল্যাসিক লুক, আর গর্বিত উপস্থিতি—রয়্যাল এনফিল্ড শুধু একটি বাইক নয়, এটি একটি স্টেটমেন্ট। ভারতের রাজপথে দীর্ঘদিনের আধিপত্যের পর, এবার এই কিংবদন্তি ব্র্যান্ড অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে পা রেখেছে বাংলাদেশের বাজারে। শহর থেকে পাহাড়ে সবখানেই বাইকপ্রেমীরা রয়্যাল এনফিল্ডকে নিজের করে পেতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পাহাড়ি অঞ্চল বান্দরবানে রয়্যাল এনফিল্ডের ক্ল্যাসিক ৩৫০ বাইকটি ব্যবহার করেন সংবাদকর্মী এন এ জাকির। তাঁর ভাষায়, ‘এক দশক আগে ভারতে বেড়াতে গিয়ে যখন রয়্যাল এনফিল্ড দেখেছিলাম, তখন থেকেই এই বাইকটির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। প্রতিজ্ঞা ছিল দেশের বাজারে প্রবেশ করলেই ক্ল্যাসিক ৩৫০–কে নিজের করে নেব। প্রায় ৫ মাস ধরে এই বাইকটি ব্যবহার করছি। এখনো রাস্তায় কৌতূহলী জনতা বাইকটির দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থাকেন। কোথাও রাখলে জবাব দিতে হয় অনেক প্রশ্নের। এই উচ্ছ্বাস রয়্যাল এনফিল্ড ছাড়া আর কোনো বাইকে সম্ভব নয়। রাস্তায় নৈপুণ্যের কথা বললে বলতে হয় একটু ভারী হলেও এর নিয়ন্ত্রণ অসাধারণ।’
শুরুতে শুধু ঢাকার প্রদর্শনী কেন্দ্র থেকে রয়্যাল এনফিল্ড গ্রাহকদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও মাত্র ৫ মাসের ব্যবধানে সারা দেশে ১৮টির বেশি ডিলারশিপ উদ্বোধন করা হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০টির বেশি থ্রিএস (সেলস, সার্ভিস, স্পেয়ার পার্টস) ডিলারশিপ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে ইফাদ মটরসের। ক্ল্যাসিক ৩৫০, বুলেট ৩৫০, হান্টার ৩৫০ এবং মেটিওর ৩৫০—এই চারটি মডেল দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছে ক্ল্যাসিক ৩৫০। দেশজুড়ে ডিলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শক্তিশালী সাপ্লাই চেইন গড়ে তুলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও রয়্যাল এনফিল্ড গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে ইফাদ মটরস। ১২৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ব্র্যান্ডের নতুন জে-সিরিজের ইঞ্জিন প্রদান করেছে শক্তিশালী কার্যক্ষমতা, জ্বালানি সাশ্রয় এবং মজবুত নির্মাণশৈলী। গ্রাহকদের মধ্যে এই মোটরসাইকেলের প্রতি আগ্রহ বেড়েই চলেছে। রয়্যাল এনফিল্ড শুধু একটি বাইক নয়, অনেকের জন্য আবেগের নাম। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের হাতে বাইক তুলে দিতে প্রথম দিকে বেগ পেতে হলেও বর্তমানে দক্ষ দলগত কাজ সমাধানের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাইকাররা বাইক বুঝে পাচ্ছেন। এনফিল্ড–প্রেমিকরা প্রায় ৮ হাজার কিমি পথ চালানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি খুঁজে পাননি। জরুরি সহায়তায় রয়্যাল এনফিল্ডের রয়েছে ‘রোডসাইড অ্যাসিস্ট্যান্স’ সেবা।
সিসির বাধ্যবাধকতায় নতুন কোনো মডেল না এলেও দেশের বাজারে নতুন রং ও ভেরিয়েন্টে পাওয়া যাবে এখনকার মডেলগুলো। দেশের বাজারে রয়্যাল এনফিল্ডের চারটি মডেলের মোটরবাইকের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার থেকে ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ডিলারশিপগুলোতে মিলবে রয়্যাল এনফিল্ডের জেনুইন মোটরসাইকেল যন্ত্রাংশ, গিয়ার এবং অন্যান্য অনুষঙ্গ। ইঞ্জিন, লেগ এবং সাম্প গার্ডে ৩ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যাবে।
উচ্চতর সিসিতে বাইক বিক্রির অনুমতি মেলার পর দেশের বাজারে ২৫০ সিসির সুজুকি বাইক নিয়ে আসে সুজুকি বাংলাদেশ (র্যানকন গ্রুপ)। ২৫০ সিসি ক্যাটাগরিতে জিক্সার ২৫০ এবং জিক্সার এসএফ ২৫০ বাইকগুলোর চেসিস জাপানে তৈরি। এর আগে দেশের বাজারে ১৫০ সিসিতে এই মোটরবাইকগুলো পাওয়া যেত। দেখতে অনেকটা এক রকম হলেও অয়েল কুলিং সিস্টেমে এই মেশিনগুলো বেশ নির্ভরযোগ্য। জিক্সার ২৫০ ও জিক্সার এসএফ ২৫০ মডেলের মোটরসাইকেলগুলো একক সিলিন্ডার ইঞ্জিনে উন্নত ফুয়েল ইনজেকশন (এফআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা সর্বোচ্চ শক্তি প্রদানের পাশাপাশি জ্বালানি সাশ্রয় নিশ্চিত করে। রাজধানীতে টেস্ট রাইড করে মোটরসাইকেলগুলো প্রতি লিটার জ্বালানিতে ৩৬ থেকে ৩৭ কিমি ও মহাসড়কে ৪৬ কিমি পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পেরেছে। ৬ গতির গিয়ারবক্সের পাশাপাশি ডুয়েল চ্যানেলের এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম থাকায় দ্রুতগতিতে চলার সময় নিরাপদে ব্রেক করা যায়। উভয় মডেলেই এলইডি হেডলাইট ও টেইললাইট, সম্পূর্ণ ডিজিটাল ইনস্ট্রুমেন্ট ক্লাস্টার এবং চালক ও যাত্রীর জন্য আরামদায়ক আসন রয়েছে।
বাইক দুটির ওজন যথাক্রমে ১৫৬ ও ১৬১ কেজি। বাইকগুলোতে ১২ লিটারের জ্বালানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাংক রয়েছে। মাটি থেকে বাইকটির উচ্চতা (গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স) ১৬৫ মিলিমিটার। স্পোর্টস বাইকপ্রেমীদের জন্য এটি যেন এক ‘বুলেট’। ম্যাট ব্ল্যাক ও ম্যাট ব্লু রঙে বাজারে আসা জিক্সার ২৫০ মডেলের দাম ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫০ টাকা এবং জিক্সার এসএফ ২৫০ মডেলের দাম ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫০ টাকা। তবে জিক্সার এসএফ ২৫০ মডেলের আরও দুটি বিশেষ সংস্করণ পাওয়া যাবে, যা কিনতে বাড়তি ১৫ হাজার টাকা গুনতে হবে। সব কটি মোটরসাইকেলেই তিন বছরের বিক্রয়োত্তর সেবাসহ বিনা মূল্যে ছয়বার সার্ভিস–সুবিধা পাওয়া যাবে।
তরুণদের কাছে জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত বাইক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইয়ামাহা দেশের বাজারে নিয়ে এসেছে ২৫০ সিসির নতুন বাইক এফজেড ২৫। এসিআই মোটরসের আয়োজনে চলতি বছরে বাইকটি বিক্রির জন্য অবমুক্ত করা হয়। এটি বাংলাদেশের বাজারে ইয়ামাহার প্রথম ২৫০ সিসি মোটরসাইকেল, যা দেশের মোটরসাইকেলপ্রেমীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। ইয়ামাহা এফজেড ২৫ মডেলের মোটরসাইকেলটি ১৫৩ কেজি ওজনের। ২৫০ সিসির মোটরসাইকেলটিতে থাকছে ১৪ লিটারের ফুয়েল ট্যাংক, অয়েল কুলড বিএসসিক্স ইঞ্জিন, ফাইভ স্পিড গিয়ার, ৭ স্তরের অ্যাডজাস্টেবল মনোক্রস সাসপেনশনসহ নানা সুবিধা। মেটালিক ব্ল্যাক, রেসিং ব্লু ও ওয়ারিয়র হোয়াইট—তিনটি রঙে পাওয়া যাবে এই মোটরসাইকেল।
দেশের বাইক বাজারের ৩৯ শতাংশ ইয়ামাহার দখলে। দীর্ঘস্থায়ী, কম খরচে রক্ষণাবেক্ষণ এবং জ্বালানি–সাশ্রয়ী বলে ইয়ামাহা তরুণ বাইকচালকদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে। নতুন আসা এফজেড ২৫ বাইকটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩৪ কিমি। এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম, ডিজিটাল স্পিডোমিটার, সাইড স্ট্যান্ড ইঞ্জিন কাট-অফ প্রযুক্তি এবং এলইডি হেড ও টেইলল্যাম্প বাইকটিকে দেখতে অনন্য করে তুলেছে। শক্তিশালী ইঞ্জিন, নিরাপত্তার জন্য উন্নত সুবিধা এবং আধুনিক নির্মাণশৈলী বাইকচালকদের জন্য হতে পারে একটি আদর্শ পছন্দ। বাইকটির মূল্য ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
ভারতের বাইক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ২০২৫–এ দেশের বাজারে নিয়ে এসেছে একটি স্পোর্টস ঘরানার ২৫০ সিসির বাইক। বাইকটির মডেল পালসার এফ২৫০। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বাজাজ পালসার নামের মডেলটি উন্মোচন করে। দীর্ঘ ২৪ বছর পরেও পালসার এখনো বাইক কমিউনিটিতে বেশ জনপ্রিয়। ১২৫ থেকে শুরু করে ৩৭৫ সিসি পর্যন্ত নানা মডেলে পালসার পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বাজারে ১৮০ সিসি পর্যন্ত পালসার পাওয়া গেলেও এ বছর থেকে ২৫০ সিসি ক্যাটাগরিতে পাওয়া যাবে। কিটসহ এ বাইকটি দেখতে বেশ পেশিবহুল এবং আগ্রাসী। অয়েল কুলড ইঞ্জিন দ্বারা চালিত এ বাইকটির অশ্বশক্তি ২৪.৫ পিএস। ডুয়েল চ্যানেল এবিএস, এলইডি প্রজেক্টর হেডল্যাম্প, সমন্বয় করা যায় এমন মনোশক সাসপেনশন এবং ব্লুটুথ কানেকটিভিটি সুবিধাসহ বাইকটি আধুনিক ফিচার–সমৃদ্ধ।
নতুন চেহারা, প্রযুক্তি আর পরিচিত পালসারের নৈপুণ্য—এই তিনের সমন্বয়ে তৈরি এফ২৫০ দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, চালাতেও তেমন আরামদায়ক। প্রতি লিটার জ্বালানি খরচ করে বাইকটি ৩৫ থেকে ৪০ কিমি পথ পাড়ি দিতে পারে। বাইকটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিমি। ওজন ১৬৪ কেজি। মাটি থেকে আসনের উচ্চতা ৭৯৫ মিমি। মোটরসাইকেলটিতে স্লিপার ক্লাচ ব্যবহার করা হয়েছে। সামনের চাকায় ৩০০ মিমি এবং পেছনের চাকায় ২৩০ মিমি ডিস্ক ব্রেক রয়েছে। আপরাইট হাইড্রোলিক টেলিস্কপিক ফর্ক সাসপেনশন–সমৃদ্ধ বাইকটির মূল্য ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
উচ্চতর সিসিতে হোন্ডার নতুন কোনো বাইক দেশের বাজারে না এলেও ১৬০ সিসি বিভাগে ২০২৫-এ এসেছে নতুন একটি বাইক। বাইকটির মডেল এক্সব্লেড পিজিএম-এফআই। বাইকটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতি লিটার জ্বালানি খরচ করে ৬০ কিমি পথ পাড়ি দিতে পারে। এক্সব্লেড পিজিএম-এফআই মডেলের মোটরসাইকেলটিতে ইউরো ৩ পিজিএম-এফআই ইঞ্জিন রয়েছে। ফলে দ্রুতগতিতে আরামদায়ক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। শার্প স্কাল্পটেড ফুয়েল ট্যাংক, স্টাইলিশ গ্রাফিকস এবং সিগনেচার রোবো-ফেস এলইডি হেডলাইট থাকায় দেখতেও বেশ আকর্ষণীয় মোটরসাইকেলটি। নিরাপত্তার জন্য মোটরসাইকেলটিতে রয়েছে এবিএস (অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম), পেটাল ডিস্ক ব্রেক, ব্যাংক অ্যাঙ্গেল সেন্সর এবং সাইড স্ট্যান্ড কাট-অফ সুইচ সুবিধা। শুধু তা–ই নয়, হ্যাজার্ড সুইচও রয়েছে মোটরসাইকেলটিতে। সুইচটি সামনের দৃশ্য দেখতে সমস্যা হলে পেছনে থাকা চালকদের সতর্ক করবে। চালক ও যাত্রীর বসার জন্য চওড়া ও আরামদায়ক আসনের পাশাপাশি মোটরসাইকেলটিতে সিল্ড চেইনও রয়েছে। রেডিয়েন্ট রেড মেটালিক, ম্যাট অ্যাক্সিস গ্রে মেটালিক, পার্ল ইগনিয়াস ব্ল্যাক এবং পার্ল ডিপ গ্রাউন্ড গ্রে রঙে বাজারে আসা মোটরসাইকেলটির দাম ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
২০২৪–এর শেষের দিকে হিরো মোটর কর্পোরেশন দেশের বাজারে নিয়ে আসে ১২৫ সিসির হিরো এক্সট্রিম ১২৫–আর। এই সেগমেন্টে সর্বোচ্চ ফিচারে আসা এই মোটরসাইকেলটি দ্রুত বাইকপ্রেমীদের মন জয় করে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৫–এর হিরো দেশের বাজারে নিয়ে আসে ১৬০ সিসির নতুন একটি স্পোর্টস ঘরানার বাইক। বাইকটির মডেল হিরো এক্সট্রিম ১৬০আর। এই মডেলটি মাত্র ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের বাইক হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। বাইকটি আগ্রাসী গঠন ও অ্যারোডাইনামিক ফর্ম নিয়ে এসেছে, যা রাস্তায় অনায়াসে নজর কাড়ে। তীক্ষ্ণ হেডল্যাম্প, মাংসল ফুয়েল ট্যাংক এবং মডার্ন এলইডি সেটআপ বাইকটির স্পোর্টিং লুককে আরও জোরালো করেছে। এতে পুরোপুরি ডিজিটাল ইনস্ট্রুমেন্ট কনসোল, এলইডি টার্ন ইন্ডিকেটর এবং টেইলল্যাম্প যুক্ত করা হয়েছে, যা প্রিমিয়াম ফিল দেয়। ১৬৩ সিসির এয়ার-কুলড, বিএস৬ স্ট্যান্ডার্ডে তৈরি একক সিলিন্ডার ইঞ্জিন, যা ১৫.২ বিএইচপি পাওয়ার এবং প্রায় ১৪ এনএম টর্ক উৎপাদন করে। মাত্র ৪.৭ সেকেন্ডে শূন্য থেকে ৬০ কিমি/ঘণ্টা গতি তুলতে সক্ষম এই বাইক। এই গতিতে শহরের রাস্তায় ফুরফুরে রাইডের নিশ্চয়তা দেয়। সামনে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনে ৭-স্টেপ অ্যাডজাস্টেবল মনোশক সাসপেনশন রয়েছে, যা প্রতিদিনের রাইডিং ও খারাপ রাস্তায় আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। এ ছাড়া রয়েছে ফ্রন্ট ও রিয়ার ডিস্ক ব্রেক এবং সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস, যা নিরাপত্তার মাপকাঠিতে যথেষ্ট উন্নত।
ডিস্ক ভেরিয়েন্টে প্রায় ১৩৯.৫ কেজি ওজনের এ বাইকটি সেগমেন্টে অন্যতম হালকা। যানজটের রাস্তায় সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। হ্যান্ডলিং ও কর্নারিংয়ের সময় এর স্থিতিশীলতা প্রশংসাযোগ্য। প্রতি লিটার জ্বালানি খরচ করে বাইকটি ৪০ থেকে ৫০ কিমি পথ পাড়ি দিতে পারে। অন্যান্য ফিচারের মধ্যে রয়েছে এলইডি ডিআরএল, ভাঁজ করা যায় এমন চাবি, সাইড স্ট্যান্ড ইঞ্জিন কাট-অফ, হ্যাজার্ড ল্যাম্প ফাংশন, এলইডি ডিআরএল এবং নির্দিষ্ট ভেরিয়েন্টে ইউএসবি চার্জিং পোর্ট। ডিজাইন, পারফরম্যান্স ও ফিচারের সামঞ্জস্যে এটি একটি ভ্যালু ফর মানি প্যাকেজ, যা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ১৬০ সিসি বিভাগে প্রতিযোগিতায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
শক্তিশালী মোটর ইঞ্জিনের পাশাপাশি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সক্ষম এমন গ্রাফাইন ব্যাটারি যুক্ত করে দেশের বাজারে বৈদ্যুতিক বাইক নিয়ে এসেছে রিভো। ‘সি৩২’ মডেলের বাইকটি একবার পূর্ণ চার্জে সর্বোচ্চ ৮০ কিমি পথ চলতে পারে। ৭২ ভোল্টের ২৬ অ্যাম্পিয়ার আওয়ারের গ্রাফাইন ব্যাটারি এবং ১ হাজার ৮০০ ওয়াটের মোটর থাকায় বাইকটি প্রতি ঘণ্টায় ইকো মোডে ৩০ ও স্পোর্টস মোডে সর্বোচ্চ ৬০ কিমি গতিতে পথ চলতে পারে। ১০.৬ ঘণ্টায় পূর্ণ চার্জ হতে সক্ষম বাইকটিতে নিরাপত্তার জন্য সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনে ড্রাম ব্রেক সিস্টেম রয়েছে। শুধু তা–ই নয়, সামনে–পেছনে হাইড্রোলিক সাসপেনশন থাকার ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে পথ চলা যায়। এলইডি হেডলাইট, টেইললাইট এবং টার্ন সিগন্যাল সিস্টেমও রয়েছে বাইকটিতে। ১৪০ কেজি ওজনের বৈদ্যুতিক বাইকটির আসনের নিচে সুপরিসর জায়গা থাকায় বিভিন্ন বস্তু সহজেই রাখা যায়। মাটি থেকে বাইকটির উচ্চতা (গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স) ২০৫ মিলিমিটার। ফলে যেকোনো ধরনের রাস্তায় স্বাচ্ছন্দ্যে পথ চলা যায়। সি৩২ মডেলের বাইকটির দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ টাকা। এ ছাড়া রিভো আরও দুটি বৈদ্যুতিক বাইক ‘এ১০’ ও ‘এ১২’ মডেলের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় যথাক্রমে ৩৫ ও ৪৭ কিমি। একবার পূর্ণ চার্জে বাইক দুটি যথাক্রমে ৭৫ থেকে ৮৫ এবং ৬৫ থেকে ৭৫ কিমি পথ চলতে পারে। এ১২ মডেলের বাইকে রয়েছে ৬০ ভোল্টের ২৬ অ্যাম্পিয়ার আওয়ারের ব্যাটারি এবং ১ হাজার ওয়াটের মোটর। আসনের নিচে সুপরিসর জায়গা থাকায় হেলমেটসহ অন্যান্য বস্তু সহজেই রাখা যায়। মাটি থেকে বাইকটির উচ্চতা (গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স) ১৫৫ মিলিমিটার। বাইকটিতে আকারে বড় ডিজিটাল স্পিডোমিটার থাকায় সহজেই বাইকের যাবতীয় তথ্য জানার সুযোগ মিলে থাকে। ‘এ১০’ মডেলের বাইকটি ছয় থেকে সাত ঘণ্টায় পূর্ণ চার্জ হতে সক্ষম। বাইকটির আসনের নিচে সুপরিসর জায়গা থাকায় হেলমেটসহ অন্যান্য বস্তু সহজেই রাখা যায়। মাটি থেকে বাইকটির উচ্চতা (গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স) ১২০ মিলিমিটার। বাইকটিতে এলইডি মিটারের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য হাইড্রোলিক ব্রেকও রয়েছে। এ১০ ও এ১২ মডেলের বাইক দুটির দাম ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৭৯ হাজার ৯০০ টাকা ও ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা।
এ ছাড়া দেশের বাজারে আকিজ মোটরস, কর্ণফুলী মোটরস, ইয়াদিয়া, আইমাসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান বৈদ্যুতিক বাইক বাজারজাত করছে। বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজার এখন আর শুধু প্রয়োজনের জায়গা নয়, এটি স্টাইল ও প্রযুক্তির বাজার। ২০২৫ সালে যেসব মডেল এসেছে, তা শুধু বাহন নয়—একটি ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। বাইকপ্রেমীদের জন্য এই বছর হতে পারে এক নতুন শুরু, নতুন গন্তব্যের পথে।