Thank you for trying Sticky AMP!!

বাস্তবের চেয়ে বেশি বাস্তব

ঠোঁটে লিপস্টিক না পরেই কোন রঙের লিপস্টিকে কেমন লাগবে, তা দেখাচ্ছে এআর প্রযুক্তির আয়না

চলতি পথে হঠাৎ নতুন এক রেস্তোরাঁয় চোখ আটকে গেল। কাচের তাকে সাজিয়ে রাখা বার্গার দেখে জিবে জল এসে যাওয়ার জোগাড়। তবে মনে প্রশ্ন, খেতে ভালো হবে তো? উত্তর খুঁজতে পকেটের স্মার্টফোনটি বের করে চালু করলেন গুগল লেন্স। রেস্তোরাঁর দিকে ক্যামেরা তাক করতেই গুগল লেন্স জানিয়ে দিল রেস্তোরাঁর আদ্যোপান্ত। ওই রেস্তোরাঁর খাবারের মান, পরিবেশ, দামদর—সব উঠে এল মুঠোফোনের পর্দায়। এবার তো বার্গার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়ে গেল। অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর) প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এভাবেই গুগল লেন্স প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষকে ছবি বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট স্থান, প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে থাকে।

ভার্চ্যুয়াল আর বাস্তব জগতের ব্যবধান ক্রমেই কমিয়ে দিচ্ছে এআর ও ভিআর। কিছুদিন আগেও এসব ঘটনা শুধু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু দিন দিন কল্পকাহিনিগুলো বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। ফলে কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তি গবেষক, বড় বড় শিল্প ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যবহারকারী—সবাই এই দুই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

অগমেন্টেড রিয়েলিটি

এআর প্রযুক্তি মানুষের কল্পনা আর বাস্তবকে একসঙ্গে করে দিয়েছে। অনেকের মতে, এআর হলো বাস্তব জগতের এক বর্ধিত সংস্করণ। মূলত, এ প্রযুক্তিতে বাস্তবতার সঙ্গে কম্পিউটার পরিচালিত ডিজিটাল উপাদান যুক্ত হয়। এতে আশপাশের বাস্তব পরিস্থিতি হয়ে ওঠে তথ্যবহুল ও বহুমাত্রিক।

এআর যেভাবে কাজ করে

সাধারণত মুঠোফোনের প্রযুক্তি, যেমন ক্যামেরা, জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম), রিমোট সেন্সিং, প্রসেসর, র​্যাম ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে এআর প্রযুক্তি বিভিন্ন কাজ করে থাকে। এ জন্য স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কম্পিউটারের সঙ্গে এআর চশমা বা হেডসেট ব্যবহার করতে হয়। কোনো একটি বস্তুর দিকে এআর যন্ত্রের ক্যামেরা রাখলেই কম্পিউটার ভিশন টেকনোলজিকে কাজে লাগিয়ে এআর প্রযুক্তিনির্ভর সফটওয়্যার প্রথমে বস্তুটি শনাক্ত করে। এরপর ক্লাউড বা তথ্যভান্ডার থেকে বস্তুটি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ত্রিমাত্রিক ছবি উপস্থাপন করে।

এআর ব্যবহারের জন্য এআর চশমা বা হেডসেট লাগবেই, এমন নয়। তবে বাজারে মাইক্রোসফটের হলো লেন্স, গুগল গ্লাস, মেটা ২ এআর হেডসেট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।

ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি

অগমেন্টেড রিয়েলিটির মতো আরেকটি আলোচিত প্রযুক্তি হলো ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি, সংক্ষেপে ভিআর। ভিআর বাস্তবতা থেকে দূরে নিয়ে এক কল্পনার জগতের অভিজ্ঞতা দেবে। ধরুন, আপনি ঘরে বসে ভিআর হেডসেট চোখে লাগিয়ে অনুভব করতে পারবেন, আপনি হাঁটছেন চাঁদের মাটিতে। আবার কখনো সাগরের তীরে বসে শীতল বাতাস উপভোগ করছেন। তবে চোখ থেকে হেডসেট নামিয়ে নিলে বুঝবেন আপনি পরাবাস্তব এক বাস্তবতায় হারিয়ে গিয়েছিলেন।

ভিআর যেভাবে কাজ করে

ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি কাজ করে মূলত দুটি ধাপে। প্রথমে কম্পিউটারে তৈরি ত্রিমাত্রিক ছবি দিয়ে ভার্চ্যুয়াল একটি জগৎ তৈরি করা হয়। পরের ধাপে ব্যবহারকারীর গতিবিধি অনুসরণ করে ত্রিমাত্রিক ছবি সে অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। আপনি ডান দিকে তাকালে ডান দিকের ছবি দেখাবে। আপনি হাঁটলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুভূতি দেবে। এই নড়াচড়াগুলো অনুসরণ করার জন্য ব্যবহার করা হয় সেন্সর। ত্রিমাত্রিক ছবি দেখার জন্য লেন্সসহ হেডসেট ব্যবহার করা হয়, যা একই সঙ্গে চোখের গতিবিধির হিসাব রাখে। ভিআর ব্যবহারের জন্য কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত হেডসেট প্রয়োজন। বর্তমানে ফেসবুকের অকুলাস, এইচটিসি ভাইভ ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে।

হোটেলের কক্ষটি কেমন, তা দেখা যাচ্ছে ভিআর যন্ত্রে

ব্যবহার

⧫ বর্তমানে বিভিন্ন ভিডিও গেম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এআর প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। জনপ্রিয় গেম পোকেমন গো, স্ন্যাপচ্যাট কিংবা ইউক্যাম মেকআপের বিভিন্ন জনপ্রিয় ফিল্টার এআর প্রযুক্তির উদাহরণ।

⧫ উড়োজাহাজ চালনা, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের প্রশিক্ষণ এমনকি শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের অস্ত্রোপচারের অনুশীলনে আর প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে।

⧫ ভিআর প্রযুক্তির সবচেয়ে বেশি ব্যবহার চোখে পড়ে গেমস দুনিয়ায়। ভিআর প্রযুক্তির হাজারের বেশি গেমস এখন ইন্টারনেট দুনিয়ায় রয়েছে।

⧫ নিজে কোনো স্থানে উপস্থিত না হয়েও ভিআরের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখার সুযোগ মিলে থাকে।

⧫ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকা চিকিৎসকদের সরাসরি পরামর্শ নেওয়ায় পাশাপাশি দূর থেকে মিটিংয়েও অংশ নেওয়ার সুযোগ মিলে থাকে।

সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ, ফোর্বস, বিবিসি ও ইন্টেল ডটকম