সাধারণ থার্মোমিটারে থাকে মার্কারি বা পারদ। উত্তাপে এই পারদ সম্প্রসারিত হয়। কতটুকু উত্তাপের সংস্পর্শে এলে তা ঠিক কতটা সম্প্রসারিত হয়, সেই হিসাব–নিকাশ করেই তাপমাত্রার দাগ কাটা থাকে সাধারণ থার্মোমিটারের গায়ে। হালে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ডিজিটাল থার্মোমিটার। এতে কিন্তু পারদ নেই। বরং রয়েছে প্রযুক্তির আধুনিকতার প্রয়োগ।
ডিজিটাল থার্মোমিটার কাজ করে সেন্সরের সাহায্যে। অধিকাংশ ডিজিটাল থার্মোমিটারের মূলনীতি হলো বৈদ্যুতিক রোধ পরিমাপ। কোনো ধাতব পদার্থের ভেতর দিয়ে কতটা বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে, তার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে রোধের। ধাতব পদার্থ যখন উত্তপ্ত হয়, তখন এর পরমাণুগুলোর কম্পন বাড়তে থাকে। সহজে এর ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে না, অর্থাৎ রোধ বাড়ে। এই রোধকেই পরিমাপ করার জন্য বিশেষ চিপ বসানো থাকে ডিজিটাল থার্মোমিটারে। রোধ কতটা বাড়ল বা কমল, সেই অনুযায়ীই নির্ণয় হয় শরীরের তাপমাত্রা। ডিজিটাল থার্মোমিটারের পর্দায় সেই তাপমাত্রাই দেখা যায়।
ডিজিটাল থার্মোমিটারের সামনের অংশে থাকে ধাতব পদার্থ, যা মানুষের শরীরে কিংবা কোনো পৃষ্ঠে স্পর্শ করানো হয়। তখন এ ধাতব অংশটা এর সংস্পর্শে থাকা ত্বক বা পৃষ্ঠের তাপমাত্রায় চলে আসে। থার্মোমিটারের ব্যাটারি (শক্তির উৎস) থেকে আসা বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ প্রবাহিত হয় এর ভেতর থাকা ইলেকট্রোডের মধ্য দিয়ে। কতটা বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারবে, তা নির্ভর করে তাপমাত্রার ওপর। আর তখনই বৈদ্যুতিক রোধের মাত্রা অনুযায়ী তাপমাত্রা ভেসে ওঠে থার্মোমিটারের পর্দায়।
বৈদ্যুতিক রোধ পরিমাপের এ মূলনীতি ছাড়াও থার্মোকাপল ও থার্মিস্টরের মূলনীতিকে কাজে লাগানো হয় কিছু কিছু থার্মোমিটারে। থার্মোকাপল এমন এক প্রযুক্তি, যেখানে দুটি ধাতব পদার্থ এক প্রান্তে সংযুক্ত থাকে এবং এই অংশে তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে ভোল্টেজ তৈরি হয়। এই ভোল্টেজ থেকেই নির্ণয় করা যায় তাপমাত্রার কেমন পরিবর্তন হয়েছে। থার্মিস্টরের মূলনীতি অনুযায়ী, তাপমাত্রার পরিবর্তনের ফলে বৈদ্যুতিক রোধ বাড়ে কিংবা কমে আর এই হ্রাসবৃদ্ধি থেকেই নির্ণয় হয় তাপমাত্রা।
সাধারণ পারদ থার্মোমিটারে তাপমাত্রা উঠতে দুই মিনিট সময় লাগে, ডিজিটাল থার্মোমিটারে কাজ হয়ে যায় এক মিনিটেই। পারদ থার্মোমিটারের দাগ কাটা অংশ গুনতে গিয়ে বিপাকে পড়তে পারেন কেউ কেউ। যিনি তাপমাত্রা দেখছেন, তাঁর দৃষ্টিশক্তির সমস্যা থাকলে যেমন এই দাগ গুনতে অসুবিধা হতে পারে, তেমনি জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখে কোনো সমস্যা না থাকলেও অসুস্থতার দরুন এই দাগ গোনাগুনতি নিয়ে মুশকিলে পড়তে পারেন। ডিজিটাল থার্মোমিটারে এ হ্যাপা নেই।
ডা. রাফিয়া আলম: ক্লিনিক্যাল স্টাফ, নিউরোমেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা।