ভাসমান রোবট
ভাসমান রোবট

পোকার আদলে ভাসমান রোবট তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা

প্রকৃতির রহস্যের কোনো শেষ নেই। হ্রদ বা পুকুরের কাছে দাঁড়ালে কচুরিপানা ও বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের আশপাশে বিভিন্ন ভাসমান পোকা দেখা যায়। ভাসমান পোকা পানিতে ভাসতে পারে, আবার বড় ঢেউ এলে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। এবার ক্ষুদ্র এই জলজ পোকার অনুকরণে রোবট তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ও দক্ষিণ কোরিয়ার আজু বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীদের দাবি, রাগোভেলিয়া বা রিপল বাগ নামের ভাসমান পোকার পানিতে হাঁটার কৌশল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রোবটটি তৈরি করা হয়েছে। রোবটটি পানির ওপরে সহজে চলাচল করতে পারে।

রিপল বাগ নামের ভাসমান পোকার পায়ে বৈদ্যুতিক পাখার মতো দেখতে বিশেষ অঙ্গ থাকে, যা তারা নিজেদের ইচ্ছামতো খোলে বা বন্ধ করে রাখে। এসব পাখা পেশিশক্তি ব্যবহার করে না। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব পোকা তাদের পাখা সেকেন্ডের মাত্র ৫০ ভাগের ১ ভাগ সময়ে দ্রুত বন্ধ করতে পারে। চোখের পলকের চেয়ে ১০ গুণ দ্রুত বন্ধ হয়। এই দ্রুত বন্ধ হওয়ার ক্ষমতা তাদের পানির ওপর দিয়ে দ্রুত দিক পরিবর্তন করতে ও প্রতি সেকেন্ডে নিজেদের শরীরের দৈর্ঘ্যের ১২০ গুণ বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে সাহায্য করে।

নতুন রোবটের বিষয়ে বিজ্ঞানী ভিক্টর ওর্তেগা-জিমেঞ্জ বলেন, ‘আমি যখন প্রথম এসব পোকা দেখি, তখন মুগ্ধ হয়েছি। এরা এতটাই দ্রুতগতিতে ছোটাছুটি করছিল, তাদের উড়ন্ত পোকার মতো মনে হচ্ছিল। আমাদের প্রশ্ন ছিল, ছোট পোকাগুলো কীভাবে এমন করে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পাঁচ বছরের বেশি সময় লেগেছে আমাদের। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, এসব পাখার মতো অঙ্গের চলাচলে পেশিশক্তির ওপর নির্ভরশীলতা আছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, আসলে পানির পৃষ্ঠটান ও স্থিতিস্থাপকতার এক দারুণ সমন্বয়ে কাজ করে পোকারা। পানির সংস্পর্শে আসামাত্রই একটি বিচ্ছিন্ন পাখা সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায়। এই সহজ কৌশল পোকাকে পানির ওপর দ্রুতগতিতে চলার ও এক সেকেন্ডের কম সময়ে বাঁক নেওয়ার ক্ষমতা দেয়।’

কোরিয়ার বিজ্ঞানী জে-সাং ও তাঁর দল এই পাখার মতো অঙ্গের মাইক্রোস্কোপিক ছবি তুলে রহস্যের সমাধান করেন। ছবিতে দেখা যায়, পাখার কাঠামো চুলের মতো গোলাকার নয়; আসলে ফিতার মতো চ্যাপ্টা। বিশেষ গঠনের কারণে প্রয়োজনের সময় শক্তি প্রয়োগের জন্য দৃঢ়তা পায় ভাসমান পোকা। এই আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করে একটি ক্ষুদ্র রোবট তৈরি করা হয়েছে। এক মিলিগ্রাম ওজনের এই মাইক্রো রোবটটি পানির পৃষ্ঠটানকে কাজে লাগিয়ে নিজেই নিজেকে চালিত করতে পারে। প্রাকৃতিক পোকার মতোই উন্নত গতি, ব্রেকিং ও দিক পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে। বিজ্ঞানী জে-সাং কোহ বলেন, ‘আমাদের রোবটটি তার জৈবিক প্রতিরূপের মতোই পানির পৃষ্ঠটান ও জ্যামিতি ব্যবহার করে নিজেকে চালিত করে।’

সূত্র: সায়েন্স ডেইলি