আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানার করোয়ে খনিতে এক বিস্ময়কর অর্ধগোলাপি হীরা আবিষ্কৃত হয়েছে। হীরার ওজন প্রায় ৩৭ দশমিক ৪১ ক্যারেট (৭ দশমিক ৫ গ্রাম)। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ হীরাটি ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গোলাপি হীরা হতে পারে। এ হীরাটি দৈর্ঘ্যে এক ইঞ্চি। এতে মলিন গোলাপি ও বর্ণহীন অংশের মধ্যে একটি তীক্ষ্ণ বিভাজন রেখা দেখা যায়।
হীরা বিশেষজ্ঞ ও ডায়মন্ড কাটিং প্রতিষ্ঠান এইচবি অ্যান্টওয়ার্পের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওডেড মানসোরি বলেন, ‘এ পাথরটি পলিশ করার পর এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত গোলাপি হীরার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। এর গাঢ় রং করোয়ে খনির ভূতাত্ত্বিক অনন্যতার সাক্ষ্য বহন করছে।’
এ ধরনের রঙের হীরা অত্যন্ত বিরল। হীরা গঠনের জন্য তাপমাত্রা ও চাপের সঠিক শর্ত পূরণ করা বেশ জরুরি। এ হীরাটি প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর গভীরে পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার নিচে তীব্র তাপ ও চাপে কার্বন পরমাণুর শক্ত ল্যাটিসে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে এটি পৃষ্ঠে উঠে আসে। অন্যান্য হীরা ভেতরের অপদ্রব্যের মাধ্যমে রং ধারণ করে। আর গোলাপি হীরা তৈরি হয় কাঠামোগত বিকৃতির ফলে। ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর কাঠামো পরিবর্তিত হলে গোলাপি রং তৈরি হয়। অবশ্য অতিরিক্ত বিকৃতি হীরাকে বাদামি করে তোলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভবত গোলাপি অংশটি প্রথমে গঠিত হয়েছিল এবং বর্ণহীন অংশটি পরে বিকাশ লাভ করে। যদিও এটি প্রথম আবিষ্কৃত অর্ধগোলাপি হীরা নয়। জেমোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট অব আমেরিকার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এর আগে যেসব গোলাপি হীরা পরীক্ষা করা হয়েছে, তা দুই ক্যারেটের (শূন্য দশমিক ৪ গ্রাম) বেশি ছিল না।
যে বতসোয়ানা করোয়ে খনি থেকে এ হীরাটি পাওয়া গেছে, তা এর আগেও বেশ কয়েকটি দর্শনীয় রত্নের উৎস ছিল। এর আগে ১ হাজার ৭৫৮ ক্যারেটের সেওয়েলো, ৫৪৯ ক্যারেটের সেথুনিয়া আর সম্প্রতি আবিষ্কৃত ২ হাজার ৪৮৮ ক্যারেটের মটসওয়েদি রয়েছে। কানাডীয় খনি প্রতিষ্ঠান লুকারা উন্মোচিত মটসওয়েদি বিশ্ববিখ্যাত কুল্লিনান হীরা আবিষ্কারের পর গত ১২০ বছরে দেখা সবচেয়ে বড় হীরা। ১৯০৫ সালে প্রতিবেশী দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কৃত ৩ হাজার ১০৬ ক্যারেটের কুল্লিনান পাথরটি ৯টি আলাদা পাথরে কাটা হয়েছিল; যার মধ্যে অনেক টুকরা এখন ব্রিটিশ ক্রাউন জুয়েলসের অংশ।
নতুন অর্ধগোলাপি হীরাটির মূল্য এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে এর মূল্য নির্ধারণের সময় এর ওজন, কাট, রং, স্বচ্ছতাসহ বিভিন্ন কারণ বিবেচনা করা হবে। বর্তমানে এটি এইচবি অ্যান্টওয়ার্পের কাছে রয়েছে। ২০২২ সালে সবচেয়ে মূল্যবান ও উজ্জ্বল গোলাপি হীরা হিসেবে বিবেচিত একটি বিরল গোলাপি হীরা নিউইয়র্কের সোথেবিসের ৩ কোটি ৪৮ লাখ ডলার দামে বিক্রি হয়েছিল।
সূত্র: ডেইলি মেইল