দুবাইয়ে ধর্ষণের শিকার নরওয়েজীয় নারীর কারাদণ্ড

নরওয়েজীয় আভ্যন্তর নকশাবিদ মারতে দেবোরা দালেলভের অভিযোগ, দুবাই বিদেশিদের জন্য এখনো অনেক অনিরাপদ। ছবি: সিএনএন
নরওয়েজীয় আভ্যন্তর নকশাবিদ মারতে দেবোরা দালেলভের অভিযোগ, দুবাই বিদেশিদের জন্য এখনো অনেক অনিরাপদ। ছবি: সিএনএন

ধর্ষণের শিকার হয়ে পুলিশে অভিযোগ করায় এক নরওয়েজীয় নারীকে দুবাইয়ের এক আদালত গত বুধবার ১৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। সংবাদ চ্যানেল সিএনএনের অনলাইনে প্রকাশিত খবরে আজ রোববার বলা হয়েছে, নরওয়েজীয় আভ্যন্তর নকশাবিদ মারতে দেবোরা দালেলভ তাঁর ওপর চালানো নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশের পর এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। ২৪ বছর বয়সী দেবোরাকে অনৈতিক যৌন সম্পর্ক স্থাপন, ভুয়া জবানবন্দি প্রদান ও মদ্যপানের অভিযোগে এ সাজা দেওয়া হয়েছে। নরওয়ের সংবাদপত্রগুলোতে শিরোনাম হওয়ার পাশাপাশি এ ঘটনা আরব আমিরাতের ইসলাম-প্রভাবিত বিচারব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছ। যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া নারীদের সঙ্গে দেশটির প্রশাসনের আচরণ নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। দেশটির বিচারব্যবস্থাকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও রাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণ হলো, দেশটিতে কর্মরত বিদেশি শ্রমিক ও পর্যটকের সংখ্যা স্থানীয় জনগণের চেয়ে অনেক বেশি। দুবাইতে একটি নরওয়েজীয় সাহায্য সংস্থার কার্যালয়ে মারতে দেবোরা দালেলভ বার্তা সংস্থা এপিকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেন, ‘যা ঘটেছে তা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া আমার কর্তব্য বলে মনে করছি।...শাস্তি পাওয়ার পর কেবল এটাই ভেবেছি যে, এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে।’

দেবোরা এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। আসছে সেপ্টেম্বরে তাঁর মামলা পুনর্বিবেচনার জন্য শুনানি শুরু হবে।

২০১১ সাল থেকে দেবোরা কাতারের একটি প্রতিষ্ঠানে আভ্যন্তর নকশাবিদ হিসেবে কাজ করছেন। গত মার্চে তিনি দুবাইয়ে একটি বাণিজ্যিক সভায় অংশ নিতে গিয়ে তাঁর সহকর্মীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন।

দেবোরা বলেন, ঘটনার পর হোটেলের লবিতে ছুটে গিয়ে তিনি পুলিশে ফোন দিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। সে সময় অবশ্য হোটেলের কর্মকর্তারা তাঁকে পুলিশ ডাকা নিয়ে সাবধান করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘অবশ্যই আমি পুলিশ ডাকতে চাই।...আমি যে দেশ থেকে এসেছি, তার নিয়ম এমনই।’

দেবোরা বলেন, ধর্ষণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তাঁর মেডিকেল এবং মদ্যপানের বিষয়ে নিশ্চিত হতে রক্ত পরীক্ষাও করায়।

এরপর চার দিন ধরে তাঁকে হাজতে ভরে রাখা হয়। পুলিশ এ সময় তাঁকে কোনো সন্তোষজনক জবাব না দিলেও বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের কারণে আটকের কথা জানায়। আরব আমিরাতের আইনানুযায়ী, এ ধরনের বিধান পর্যটক ও বিদেশিদের ওপর কার্যকর নয়।

হাজতে থাকার তৃতীয় দিনে আরেক হাজতির ফোনকার্ড ব্যবহার করে তিনি নরওয়েতে তাঁর মা-বাবার কাছে ফোন করেন এবং ধর্ষণের শিকার ও আটক হওয়ার ঘটনা জানান।

দেবোরা বলেন, এর এক দিন পর দুবাইয়ের নরওয়েজীয় দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা থানায় গিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন। পুলিশ তাঁকে নরওয়েজীয় নাবিকদের থাকার জায়গায় অবস্থান করার অনুমতি দেয়। তিনি আরও বলেন, তাঁর ধর্ষককে আদালত মাত্র ১৩ মাসের কারাদণ্ড দেন। বিয়ের বাইরে যৌন সম্পর্ক স্থাপন ও মদ্যপানের কারণে ওই ব্যক্তিকে সাজা দেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর দুবাইয়ের কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যে তাঁদের আচরণ অত্যন্ত সমালোচনার মুখে পড়েছে। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপান বার্থ এদি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ বিচারপ্রক্রিয়া মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে খুবই সমস্যাপূর্ণ।’

মানবাধিকারের কর্মীরা দীর্ঘদিন থেকে দুবাইয়ের আইনকানুনের সমালোচনা করে আসছেন। দুবাই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে দেখেও না দেখার পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংগঠনগুলো বলছে, দুবাইয়ের এ আচরণ ‘লজ্জাজনক’ এবং এর আইন সংস্কার করা একান্ত আবশ্যক।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে এক ব্রিটিশ নারী অভিযোগ করেন, তিনি দুবাইয়ে তিনজন পুরুষের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু আদালত উল্টো তাঁকে মদ্যপানের অভিযোগে অর্থদণ্ড দেন।

২০১০ সালের জানুয়ারিতে আরেকজন ব্রিটিশ নারী অভিযোগ করেন, দুবাইয়ের হোটেলের এক কর্মচারী তাঁকে ধর্ষণ করেছে। অথচ এ সময় আদালত তাঁকে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের কারণে কারাদণ্ড দেন।

২০০৮ সালে এক অস্ট্রেলীয় নারী অভিযোগ করেন, একদল দুর্বৃত্ত তাঁকে ওষুধ খাইয়ে গণধর্ষণ করে। এ সময়ও আদালত এ নারীকে ১১ মাসের কারাদণ্ড দেন।