মাংসাশী প্রাণী কমে যাচ্ছে

সিংহ, পুমা, এলক, ভালুক
সিংহ, পুমা, এলক, ভালুক

সিংহ, নেকড়ে, ভালুকসহ বিশ্বের বড় আকারের মাংসাশী প্রাণীগুলোর তিন-চতুর্থাংশই সংখ্যার দিক দিয়ে হ্রাসের সম্মুখীন। নতুন একটি গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রভাবশালী বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্স-এ প্রকাশিত ওই গবেষণার তথ্য-উপাত্তে দেখানো হয়েছে, ওই মাংসাশী প্রাণীগুলোর বেশির ভাগেরই সংখ্যা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।
আবাসস্থল হারানো, মানুষের হাতে শিকার হওয়া এবং মানবসৃষ্ট অত্যাচারসহ কয়েকটি কারণ বিশ্বব্যাপী বন্য প্রাণীগুলোর এই করুণ পরিণতির জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। গবেষকেরা বলছেন, এসব প্রজাতি হারিয়ে গেলে, তা বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
গবেষণাটিতে মোট ৩১টি বড় মাংসাশী প্রাণীর ওপরে আলোকপাত করা হয়েছে। তাঁরা দেখতে পেয়েছেন দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকার বনাঞ্চলে এই প্রাণীগুলো চরম চাপের মধ্যে রয়েছে।
গবেষণাটির প্রধান লেখক যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক উইলিয়াম রিপল বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী আমরা বড় মাংসাশী প্রাণীগুলো হারাচ্ছি। তাদের সংখ্যায় ধস নামছে।’
এই গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের গবেষণা বড় মাংসাশী প্রাণীগুলোর জীববৈচিত্র্যগত গুরুত্বের ওপরে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছে। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে নেকড়ে এবং কুগার (অন্য নাম পুমা) নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখতে পেয়েছেন, এই প্রাণীগুলোর সংখ্যা হ্রাসের কারণে সেখানে অন্যান্য প্রাণী, যেমন—এলক (বড় আকারের হরিণজাতীয় প্রাণী) এবং অন্য ধরনের হরিণের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি ভালো খবর বলে মনে হলেও গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের তৃণভোজী প্রাণীর সংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধি উদ্ভিদজগতের জন্য ক্ষতিকর। কেননা, তারা পাখি ও ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলোর জীবনকে বাধাগ্রস্ত করছে। যা বড়মাপের ক্ষতিকর প্রভাবের দিকে গড়াচ্ছে।
বিশ্বের সব এলাকাতেই একই ধরনের প্রভাব দেখা গেছে। আফ্রিকায় সিংহ ও চিতাবাঘের সংখ্যা হ্রাসের কারণে অলিভ বেবুনের সংখ্যা বেড়েছে, যা খামারের ফসল এবং গৃহপালিত পশু-পাখির জন্য হাতির চেয়েও বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। গবেষকেরা বলেছেন, এসব সমস্যার বেশির ভাগেরই কারণ একটি পুরোনো ধারণা। তা হলো শিকারি প্রাণীরা ক্ষতিকর এবং তারা প্রাণীজগতের জন্য কেবলই একটি হুমকি। বিবিসি।