Thank you for trying Sticky AMP!!

ইথিওপিয়ার কয়েক গ্রামে হামলায় বহু নিহত

ইথিওপিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কয়েকটি গ্রামে আমহারাস জাতিগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়েছে। কমপক্ষে ২৫০ জন নিহত হওয়ার কথা বলেছে গ্রামবাসীরা। কেউ কেউ আবার নিহতের সংখ্যা ৩৭৮ বলে উল্লেখ করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বিবিসি এসব তথ্য জানিয়েছে।

গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, বন্দুকধারীরা এই হামলা চালিয়েছে। এই হামলার জন্য অরোমো বিদ্রোহীদের দায়ী করা হচ্ছে। তবে অরোমো লিবারেশন আর্মি (ওএলএ) এ ঘটনায় দায় অস্বীকার করেছে।

গত শনিবারের এই হামলার পর ছোট ছোট এ গ্রামগুলোর রাস্তা থেকে একের পর এক লাশ উদ্ধার হচ্ছে। লাশগুলো সমাহিত করছে গ্রামবাসীরা।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃতের এ সংখ্যার সত্যতা যাচাই করতে পারেনি তারা। তারা পাল্টা দাবি করেছে সরকারের ‘পিছু হটে যাওয়া’ সেনারা হামলা চালিয়েছেন। ওএলএর এক মুখপাত্র অরোমিয়া আঞ্চলিক সরকার গঠিত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকেও এ হামলার জন্য দায়ী করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় অরোমিয়ার গিমবি জেলার ছয়টি গ্রামে এ হামলা হয়েছে। এক ব্যক্তি বলেন, তিনি এবং অন্য গ্রামবাসীরা মিলে প্রায় ২৫০ জনের মরদেহ সমাহিত করেছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তাঁর ভাই-ভাবিও আছেন।

অন্য এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে গ্রামগুলো লাশে ভরে গেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ওই ব্যক্তির ১৬ বছর বয়সী মেয়েও আছে।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছে, গত শনিবার সকাল ৯টার দিকে হামলা শুরু হয়। বেলা একটা পর্যন্ত তা চলে। জেলা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে সহযোগিতা চেয়েছিলেন স্থানীয় লোকজন। তবে কয়েক ঘণ্টা দেরিতে সহযোগিতা পাওয়া যায়।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘(আঞ্চলিক) বিশেষ বাহিনী এবং সেনাবাহিনী বিকেল পাঁচটার দিকে পৌঁছেছিল। ওই সময় পর্যন্ত কেউ আমাদের সহযোগিতা করতে আসেনি।’

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছে, ঘটনাস্থলে হত্যাকাণ্ড চালানোর পাশাপাশি কয়েকজনকে অপহরণ করে হামলাকারীরা। ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলে, তারা (হামলাকারীরা) তাদের (অপহৃত) নিয়ে যাওয়ার পর জঙ্গলের ভেতর হত্যা করেছে। বন থেকে ৫০ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তারা (হামলাকারী) আমহারিক ভাষাভাষীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের হত্যা করতে শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেছে, গুতু গ্রামে কিছু ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আটজন নিহত হন। এ ছাড়া ওই গ্রামে আরও ৩৫ জনকে সমাহিত করা হয়েছে। সিলসা গ্রামে সমাহিত করা হয়েছে ১০২ জনের মরদেহ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রতিবেদনে তাদের নাম–পরিচয় প্রকাশ করেনি বিবিসি। বিবিসি বলছে, এ হামলার ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে স্থানীয় কর্মকর্তা এবং অরোমিয়া অঞ্চলের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল তারা। তবে তাতে সফল হওয়া যায়নি।

ইথিওপিয়া সরকারের মানবাধিকারবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইথিওপিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বলছে, সম্প্রতি ওই এলাকায় সরকারি বাহিনী ও ওএলএর মধ্যে লড়াই হয়। এ হামলার সঙ্গে ওই লড়াইয়ের সংযোগ থাকতে পারে।

মৃতের সংখ্যা ৩৭৮ বলে উল্লেখ করেছে অ্যাডভোকেসি সংগঠন আমহারা অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা। সংগঠনটি বলছে, ১৭৮ জন নিহত ব্যক্তির নাম জানতে পেরেছে তারা।

ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ এ সহিংসতাকে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। এক টুইটার পোস্টে তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠাই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকারের বিষয়।’

গত তিন বছরে ইথিওপিয়ায় নজিরবিহীনভাবে জাতিগত সহিংসতার ঘটনা বাড়তে দেখা গেছে। এ সময় হাজারো মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখো মানুষ।

২০২০ সালের নভেম্বর থেকে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় তাইগ্রে অঞ্চলে গৃহযুদ্ধের কারণেও দেশটি বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে।