
পিরামিড–মমি–ফারাওয়ের দেশ মিসর। মিসর মানেই অনুবিস–রা–ওসিরিসের পৌরাণিক কাহিনি। মিসরীয় সভ্যতার এসব ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সমাহার নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল এক জাদুঘর। বিখ্যাত গিজা পিরামিডের কাছেই জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হচ্ছে শনিবার।
বড় এই জাদুঘরের নাম দ্য গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম। ২০০৫ সাল থেকে দুই দশক ধরে চলেছে এর নির্মাণকাজ। খরচ হয়েছে ১০০ কোটি ডলার। জাদুঘরটিতে প্রদর্শন করা হবে মিসরীয় সভ্যতার ৫০ হাজারের বেশি প্রাচীন নিদর্শন। একক কোনো প্রাচীন সভ্যতা নিয়ে এত নিদর্শন আর কোনো জাদুঘরে নেই।
জাদুঘরটির নির্মাণকাজ হয়তো আগেই শেষ হতো। তবে ২০১১ সালে আরব বসন্তের কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে মিসরের অর্থনীতি। বারবার বিদ্রোহ–বিপ্লবে পিছিয়ে যায় কাজ। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে জাদুঘরটি খুলে দেওয়ার কথা ছিল। তবে মধ্যপ্রাচ্যে সংকটের কারণে সে তারিখও পেছায়। শেষ পর্যন্ত শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাদুঘরটিতে পড়তে যাচ্ছে দর্শনার্থীদের পা।
জাদুঘরের প্রবেশমুখে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবে বিশাল একটি মূর্তি। ৩ হাজার ২০০ বছরের পুরোনো ও ৩৬ ফুট লম্বা মূর্তিটি সবচেয়ে বিখ্যাত ফারাও (সম্রাট) রামেসিস দ্য গ্রেটের। জাদুঘরে প্রবেশের পর এগোতে হবে ছয়তলা সিঁড়ি ধরে। সিঁড়ির পাশ দিয়ে সারি সারি সাজানো প্রাচীন মূর্তি। তা দেখতে দেখতে সিঁড়ির শেষ প্রান্তে পৌঁছালে সামনে আসবে প্রধান প্রদর্শন গ্যালারিগুলো।
জাদুঘরের প্রদর্শন গ্যালারিগুলো মোট ২ লাখ ৫৮ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর। সেখানে ৫০ হাজার প্রাচীন নিদর্শনের অনেকগুলোয় আনা হয়েছে মিসর জাদুঘর থেকে। এই জাদুঘর রাজধানী কায়রোর তাহরির স্কয়ারে। বাকি নিদর্শনগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে সম্প্রতি খনন করা ফারাও যুগের বিভিন্ন সমাধি থেকে।
শনিবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বড় আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ফারাও তুতেনখামেনের সমাধি থেকে সংগ্রহ করা প্রায় ৫ হাজার নিদর্শন। এ ছাড়া রয়েছে গিজা পিরামিডের নির্মাতা ফারাও খুফুর একটি নৌকা। ৪ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো এই কাঠের নৌকা পঞ্চাশের দশকে খুফুর পিরামিডের কাছে খনন করে বের করা হয়েছিল।
এমন সব নজরকাড়া নিদর্শন দেখতে জাদুঘরটিতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হবে বলে ধারণা জাদুঘরের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হাসান আলামের। তাঁর ভাষায়, জাদুঘরটি উদ্বোধনের জন্য বিশ্ব অপেক্ষা করছে। সবাই রোমাঞ্চের মধ্যে রয়েছেন।