Thank you for trying Sticky AMP!!

রাশিয়ায় যেসব অস্ত্র পাঠাতে পারে উত্তর কোরিয়া

ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং–উন

স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র ছিল উত্তর কোরিয়া। সেই উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে রাশিয়া কামানের লাখ লাখ গোলা ও রকেট কিনছে বলে সম্প্রতি দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের এমন দাবি অবশ্য নাকচ করেছে ক্রেমলিন। ওয়াশিংটনের এ দাবিকে ‘ভুয়া’ আখ্যায়িত করে নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত।  

বিভিন্ন সময়ে উত্তর কোরিয়ার সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ব্রুস বেচটল। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়া যেসব অস্ত্র তৈরি করে, তার সব সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নকল। রাশিয়ার ওপর যতই নিষেধাজ্ঞা থাকুক না কেন, দেশটি যে নিজেই এসব অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না, এমন কথার আদতে কোনো মানে হয় না।

সমরাস্ত্র রপ্তানির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে উত্তর কোরিয়ার। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগই সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার নকশায় তৈরি। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার কাছে ছোট ধরনের অস্ত্র বিক্রি করতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার রপ্তানিযোগ্য অস্ত্র

উত্তর কোরিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণকারী জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সমন্বয়কারী ছিলেন হিউ গ্রিফিথস। বর্তমানে নিষেধাজ্ঞাবিষয়ক স্বাধীন পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করা গ্রিফিথস বলেন, উত্তর কোরিয়ার হাতে গত শতকের পঞ্চাশের দশকে তৈরি কামানের গোলা ও সোভিয়েত আমলের রকেটের মজুত রয়েছে।

হিউ গ্রিফিথস বলছেন, উত্তর কোরিয়ার হাতে তুলনামূলকভাবে পুরোনো কামান ও রকেট উৎক্ষেপণব্যবস্থার বিশাল মজুত রয়েছে। এসব সমরাস্ত্রের অনেকগুলোরই রুশ বাহিনী ইউক্রেনের শহরগুলোতে হামলার জন্য যেসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করছে, সেসবের সঙ্গে মিল রয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণকারী জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সাবেক সমন্বয়কারী হিউ গ্রিফিথস বলেন, উত্তর কোরিয়ার হাতে তুলনামূলক পুরোনো কামান ও রকেট উৎক্ষেপণব্যবস্থার বিশাল মজুত রয়েছে। রুশ বাহিনী ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে হামলার জন্য যেসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করছে তার সঙ্গে মিল রয়েছে এসব সমরাস্ত্রের অনেকগুলোরই।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের অ্যাংলো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ব্রুস বেচটল বলেন, রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়া যেসব অস্ত্র পাঠাতে পারে, সেসবের মধ্যে ১০৭ এমএম (মিলিমিটার) কাতিউসা রকেট, ১২২ এমএম রকেট লঞ্চার, ১৫৫ বা ১২২ এমএম কামানের গোলা থাকতে পারে। এ ছাড়া মেশিনগান বা স্বয়ংক্রিয় বন্দুকের মতো ছোট অস্ত্রের গোলাবারুদ থাকতে পারে।

বিভিন্ন সময় উত্তর কোরিয়ার সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ব্রুস বেচটল। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়া যেসব অস্ত্র তৈরি করে, তার সবই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নকল। রাশিয়ার ওপর যতই নিষেধাজ্ঞা থাকুক না কেন, দেশটি যে নিজেই এসব অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না, এমন কথার আদতে কোনো মানে হয় না।

অধ্যাপক ব্রুস আরও বলেন, ‘অস্ত্র সরবরাহের অন্য উৎসগুলো পাশ কাটিয়ে রাশিয়া যদি উত্তর কোরিয়ার দ্বারস্থ হয়, এর অর্থ হচ্ছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর পরিস্থিতি এতটাই খারাপ, যেটা অনেকে কল্পনাও করতে পারছেন না। নয়তো তারা (ইউক্রেনে) বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার জন্য বাড়তি অস্ত্রের সরবরাহ প্রয়োজন।’

অস্ত্র বিক্রির ইতিহাস

অধ্যাপক ব্রুস বলছেন, দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য অস্ত্র রপ্তানি চুক্তি নিয়ে গত মঙ্গলবার মার্কিন কর্মকর্তাদের করা দাবি সত্যি হলে, তা হবে উত্তর কোরিয়ার জন্য বড় একটি চুক্তি; তবে নজিরবিহীন নয়। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলাকালীন দামেস্ক, ইরান ও হিজবুল্লাহর কাছেও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ রপ্তানি করেছিল উত্তর কোরিয়া।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সিরিয়া ও মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ করেছে উত্তর কোরিয়া। এর মধ্যে রাসায়নিক অস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, মাল্টিপল রকেট লঞ্চার ও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের মতো সমরাস্ত্র রয়েছে।

রপ্তানি হবে যেভাবে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্র রপ্তানির চুক্তির বাস্তব প্রতিফলন ঘটলে তা হবে এর আগে দেশটিতে উত্তর কোরিয়ার পাঠানো যেকোনো অস্ত্রের চালানের চেয়ে বড়। এ ছাড়া অস্ত্র সরবরাহের সুবিধার দিক দিয়ে দেখলে তা-ও আগের চেয়ে সহজ হবে।

অধ্যাপক ব্রুস বলেন, রাশিয়ার কাছে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র বিক্রির অর্থ হবে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা। ফলে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রবাহী জাহাজগুলো সমুদ্রে যেকোনো সময় জব্দ করা হতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার স্থল সীমান্ত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই সীমান্ত দিয়ে রেলপথে রাশিয়ায় অস্ত্রের চালান পাঠাতে পারে দেশটি।

হিউ গ্রিফিথস বলেন, সমুদ্র বা আকাশপথে মিয়ানমার ও সিরিয়ায় অস্ত্র পাঠানোর চেয়ে রাশিয়ায় অস্ত্রের চালান পাঠানো উত্তর কোরিয়ার জন্য অনেক কম ঝুঁকিপূর্ণ হবে। ফলে উত্তর কোরিয়া এই সুযোগ হাতছাড়া করবে না। রাশিয়া যেহেতু তাদের কাছ থেকে সচরাচর অস্ত্র কেনে না, তাই গুরুত্বপূর্ণ দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে পিয়ংইয়ং দ্বিধাও করবে না।