Thank you for trying Sticky AMP!!

চীনে বাসাবাড়িতে জোরপূর্বক কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাসিন্দাদের

সাংহাইয়ে অস্থায়ীভাবে নির্মিত একটি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা চলছে

চীনের সাংহাইতে বাড়তে থাকা করোনা রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। চাপ সামলাতে কিছু বাসাবাড়িতেই কোয়ারেন্টিন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতিবাদে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় এসব বাসাবাড়ির বাসিন্দারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর বরাত দিয়ে এমনটা জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

ভিডিওতে দেখা যায়, করোনার সুরক্ষা পোশাক পরিহিত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়েছে সাংহাইয়ের বাসিন্দারা। কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক তাদের বাসাবাড়িকে কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয় বলে অভিযোগ। এটি শহরে করোনার কড়াকড়ি আরোপ নিয়ে বাড়তে থাকা অসন্তোষেরই চিত্র।

চীনের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক শহর সাংহাই। মেগাসিটির বাসিন্দা আড়াই কোটি। দুই বছর আগে দেশটির উহানে প্রথম কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর সাংহাইতে এবার সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখছে দেশটি। এই সংক্রমণের ফলে সমালোচনার মুখে পড়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। বেইজিংয়ের কঠোর ‘শূন্য কোভিড’ নীতির প্রতি অঙ্গীকারের জন্য এই সংক্রমণ চ্যালেঞ্জ হয় দাঁড়িয়েছে।

মার্চের শেষ থেকে লকডাউনের মধ্যে রয়েছে সাংহাইয়ের বাসিন্দারা। খাদ্যস্বল্পতার অভিযোগ করছে তারা। বাসিন্দারা বলছে, অতি উৎসাহী কর্মকর্তারা তাদেরকে মূল কোয়ারেন্টিন স্থাপনার সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছেন। সাংহাইতে দৈনিক ২০ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ হাজারো শয্যা প্রস্তুতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।

গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ভবনের বাইরে পুলিশি নিরাপত্তায় থাকা কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে চিৎকার করছে বাসিন্দারা। কর্মকর্তারা তাদের সরিয়ে সামনে এগোনোর চেষ্টা করছিলেন।

একটি ভিডিওতে পুলিশকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতে দেখা যায়। পুলিশ লোকজনকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। ভিডিওতে চিৎকার ও কান্নার শব্দও শোনা যাচ্ছিল। পথচারীরা তাঁদের মুঠোফোনে ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন।

ওই হাউজিং কমপ্লেক্সের ডেভেলপার ঝাংজিয়াং গ্রুপ জানায়, ‘মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনে’ কর্তৃপক্ষ ওই ভবনের ৩৯টি পরিবারকে সরে যেতে বললে এ ঘটনা ঘটে। করোনা রোগীদের সেখানে রাখতে তাদের সরে যেতে বলা হয়।

ওই এলাকার এক বাসিন্দা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘এটা পাগলামি। সাংহাইতে এমনটা ঘটতে পারে আমরা কখনো ভাবিনি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমাদের শহরে যা ঘটছে, এ জন্য কি সাংহাইয়ের আমলারা লজ্জিত নন?’

একটি লাইভ ভিডিওতে ক্ষুব্ধ এক নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘ঝাংজিয়াং গ্রুপ আমাদের ভবনকে কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে পরিণত করতে চায়। করোনায় আক্রান্ত লোকজনকে আমাদের ভবনে থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে।’ অবশ্য গ্রুপটি বলছে, বাড়ির বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। একই ভবনের আলাদা ইউনিটে তাদের স্থানান্তর করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবারের ঘটনা চীনে প্রকাশ্যে আসা গণক্ষোভের বিরল দৃশ্য। দেশটিতে কর্তৃপক্ষ ভিন্নমত সহ্য করে না বললেই চলে। বিক্ষোভ–সম্পর্কিত কোনো ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে দেওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা প্রতিনিয়ত মুছে দেওয়া হয়।

সাংহাইতে গতকাল শুক্রবার দৈনিক করোনা সংক্রমণ কমে ২৩ হাজারে নেমে এসেছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার। শহরের বড় অংশেই কড়া লকডাউন চলমান। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খাদ্যস্বল্পতা ও কড়াকড়ির কারণে বাসিন্দাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

কর্তৃপক্ষ বলছে, এই শহর একটুর জন্যও গা-ছাড়া দেবে না। আরও শতাধিক কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। করোনা পজিটিভ হলে উপসর্গ থাকুক না থাকুক, প্রত্যেককে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।