
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মস্কোর সঙ্গে ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা তৈরির পর তা নিয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দফায় দফায় আলোচনায় বসছে ওয়াশিংটন। সেখানে ওই পরিকল্পনায় আরও কিছু পরিবর্তনের জন্য ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করছে মার্কিন প্রশাসন। লক্ষ্য—পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো।
জেনেভায় গতকাল রোববার প্রথম দিনের মতো ইউক্রেনের সঙ্গে দেশটির ইউরোপীয় মিত্র ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠক শেষে ওয়াশিংটন ও কিয়েভের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, যুদ্ধ থামাতে তারা একটি ‘পরিমার্জিত শান্তি কাঠামোর’ খসড়া তৈরি করেছে। যদিও ওই কাঠামোয় কী আছে, তা উল্লেখ করা হয়নি যৌথ বিবৃতিতে।
প্রায় চার বছর ধরে ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি ইউরোপের সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে সম্প্রতি ২৮ দফা পরিকল্পনার বিষয়টি সামনে আসে। পরিকল্পনাটি মেনে নিতে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইউক্রেনকে সময় দিয়েছে ওয়াশিংটন। যদিও পরিকল্পনাটিতে ক্রেমলিনের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়েছে বলে অভিযোগ কিয়েভ ও তাদের ইউরোপীয় মিত্রদের।
পরিমার্জিত পরিকল্পনাটি কীভাবে বিতর্কিত বিষয়গুলোর সমাধান করবে, তা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু জানানো হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পুনর্গঠনে অর্থায়নের বিষয়গুলো। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আলোচনা এখনো চলছে। যদিও মস্কোকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি বলে উল্লেখ করেছে মস্কো।
সমঝোতার পথ খুঁজছে কিয়েভ
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে রোববার আরেকটি বৈঠক করেন জেলেনস্কি। সুইডেনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘সমঝোতার লক্ষ্যে আমরা অংশীদার, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব। এসব সমঝোতা আমাদের দুর্বল করবে না, বরং শক্তিশালী করে তুলবে।’
যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির জন্য রাশিয়াকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদের ব্যবহার কীভাবে হবে, তা নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্তে রয়েছি। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় মিত্র ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি পথ খুঁজছি, যা রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করবে এবং সত্যিকারের নিরাপত্তা আনবে।’
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বর্তমানে সবচেয়ে নড়বড়ে অবস্থায় আছেন জেলেনস্কি। দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে বিপর্যস্ত তাঁর সরকার। শান্তিচুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনের স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও দেশবাসীর অভিযোগ রয়েছে তাঁর প্রতি। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে চলতি সপ্তাহেই তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করতে পারেন বলে জানিয়েছে সূত্র। সেখানে তিনি শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন।
‘ইউক্রেনীয়রা একমত নন’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তিচুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে নিজেদের ভূখণ্ডের বড় একটি অংশ ছেড়ে দিতে হবে। পাশাপাশি নিজেদের সামরিক বাহিনীর আকার কমাতে হবে কিয়েভকে। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগদানের আকাঙ্ক্ষাও ত্যাগ করতে হবে তাদের। রাশিয়ার শেষ দাবিটি বহু আগে থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছেন ইউক্রেনীয়রা।
কিয়েভের বাসিন্দা ৬২ বছর বয়সী অ্যাঞ্জেলিকা ইউরকেভিচ বলেন, ‘ট্রাম্পের বিশেষ পরিকল্পনা ইউক্রেনের জন্য একধরনের আত্মসমর্পণের সমান। আমি মনে করি, ইউক্রেনের জনগণ এর সঙ্গে একমত হবেন না। এই পরিকল্পনায় যদি স্বাক্ষরও করা হয়, তারপর তো বাস্তবায়নের কথা আসে। তবে ইউক্রেনের জনগণ এটি করতে দেবে না।’