রাশিয়ার প্রয়াত পুতিনবিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এক ব্যক্তি। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মস্কো
রাশিয়ার প্রয়াত পুতিনবিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এক ব্যক্তি। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মস্কো

রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল: স্ত্রীর দাবি

রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া বলেছেন, দুটি বিদেশি পরীক্ষাগারে তাঁর স্বামীর শরীর থেকে সংগৃহীত জৈবিক নমুনা পরীক্ষা করে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাঁর শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল।

রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনবিরোধী নেতা নাভালনি ৪৭ বছর বয়সে ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আর্কটিক সার্কেলে একটি কারাগারে আকস্মিকভাবে মারা যান।

নাভালনির স্ত্রী নাভালনায়া বারবার তাঁর স্বামীকে হত্যার জন্য পুতিন সরকারকে অভিযুক্ত করেছেন। অবশ্য ক্রেমলিন এই অভিযোগকে ‘আজগুবি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, নাভালনির মৃত্যুর আগে পশ্চিমাদের সঙ্গে বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

নাভালনায়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, ২০২৪ সালে নাভালনির শরীর থেকে গোপনে জৈবিক নমুনা বিদেশে পাচার করা হয়েছিল। দুটি পরীক্ষাগার সেই নমুনা পরীক্ষা করেছে। এতে প্রমাণ পাওয়া গেছে, নাভালনিকে হত্যা করা হয়েছিল।

নাভালনায়া বলেন, দুটি ভিন্ন দেশের পরীক্ষাগারগুলো একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, অ্যালেক্সিকে হত্যা করা হয়েছে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, তাঁকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল।

নাভালনায়া পরীক্ষাগারগুলোকে এই ‘অস্বস্তিকর সত্য’ সম্পর্কে তাদের বিস্তারিত ফলাফল প্রকাশের দাবি জানান। তবে নাভালনির শরীরে কী ধরনের বিষ পাওয়া গেছে, সেটা তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি।

নাভালনায়া বলেন, ‘এসব ফলাফল জনগুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্যই প্রকাশ করা উচিত। আমাদের সবার সত্যিটা জানার অধিকার আছে।’

নাভালনায়ার এই মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘আমি তাঁর এসব মন্তব্য সম্পর্কে কিছুই জানি না। এ বিষয়ে কিছু বলতেও পারব না।’

অ্যালেক্সি নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া

ক্রেমলিন নাভালনির রাজনৈতিক মিত্রদের ‘বিপজ্জনক চরমপন্থী’ হিসেবে দেখে থাকে, যাঁরা পশ্চিমাদের হয়ে রাশিয়াকে অস্থিতিশীল করতে চান। ক্রেমলিনের দাবি, সাধারণ রুশ নাগরিকদের মধ্যে পুতিনের বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে।

নাভালনি পুতিনের রাশিয়াকে ‘চোর, চাটুকার ও গুপ্তচরদের দ্বারা পরিচালিত একটি ভঙ্গুর অপরাধী রাষ্ট্র’ বলে বর্ণনা করতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, রাশিয়া বিপ্লবসহ বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখোমুখি হতে পারে।

নাভালনি ২০২৩ সালে তাঁর শেষ লেখাগুলোর একটিতে দুর্নীতির জন্য রাশিয়ার অভিজাত শ্রেণির কড়া সমালোচনা করেছিলেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর দেশকে সংস্কারের একটি ঐতিহাসিক সুযোগ নষ্ট করায় তিনি তাঁদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন।

আর্কটিকে মৃত্যু

অ্যালেক্সি নাভালনি ২০২১ সালে জার্মানি থেকে স্বেচ্ছায় রাশিয়ায় ফিরে আসার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন। এর আগে সাইবেরিয়ায় তাঁকে নার্ভ এজেন্ট দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নেন। পশ্চিমা পরীক্ষাগারগুলোর পরীক্ষায় বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।

রাশিয়ায় ফেরার পরেই নাভালনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এর পর থেকে তিনি জালিয়াতি, চরমপন্থা এবং অন্যান্য অভিযোগে সাজা ভোগ করছিলেন। তাঁকে চুপ করিয়ে দিতে এই সাজা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

গত বছর রুশ তদন্তকারীদের দেওয়া তথ্যে দাবি করা হয়েছিল, নাভালনি ‘বিভিন্ন রোগের সম্মিলিত প্রভাবে’ মারা গেছেন। নাভালনায়া অবশ্য তাঁদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, পুতিন নাভালনিকে হত্যার নির্দেশ দেননি।

নিজের ভিডিওতে নাভালনায়া তাঁর স্বামীর শেষ মুহূর্তগুলো বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নাভালনি একটি ছোট্ট ব্যায়াম কক্ষে অসুস্থ বোধ করেন এবং ব্যথায় মাটিতে গুটিসুটি মেরে বসে ছিলেন। অথচ সেখান থেকে তাঁকে একটি শাস্তির কক্ষে রাখা হয়।

নাভালনায়া বলেন, নাভালনি মেঝেতে শুয়ে পেটের কাছে হাঁটু টেনে আনেন এবং যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাঁর বুক ও পেট জ্বলে যাচ্ছিল। তারপর তিনি বমি করতে শুরু করেন।

নাভালনায়া ওই কক্ষের একটি ছবি দেখান, যেখানে মেঝেতে বমি দেখা যাচ্ছিল।