
ফ্রান্সের কার্লাইল থেকে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে যুক্তরাজ্যের ডোভার, কেন্ট, মারগেট এলাকায় প্রতিদিনই ভিড়ছে ছোট ছোট প্লাস্টিকের নৌকা। এসব নৌকায় করে আসা অভিবাসীরা মানব পাচারকারীদের সহায়তায় যুক্তরাজ্যে অনুপ্রবেশ করছেন। এভাবে অবৈধভাবে আসতে গিয়ে মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনা অহরহ ঘটলেও কিছুতেই তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে গত আগস্ট থেকে অক্টোবরের এখন পর্যন্ত পৃথক চারটি তারিখে ১ হাজারের বেশি মানুষ যুক্তরাজ্যে অনুপ্রবেশ করেছেন। সর্বশেষ ৯ অক্টোবর রোববার ১ হাজার ৬৫ জন, ২২ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ১৪২ জন, ৪ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ১৬০ এবং এর আগে গত ২২ আগস্ট ১ হাজার ১৮৫ জন প্লাস্টিকের ছোট ছোট নৌকা দিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছিলেন। বছর হিসাবে ২০২০ সালে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ পথে অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৪০৪ ও ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৫২৬। কিন্তু চলতি বছরে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৬৯৪। বছর শেষে এই সংখ্যা ৪০ হাজার অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
অবৈধ পথে আসা অভিবাসীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সরকার যখন আরেকটি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, তখন ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়ছে। বিপজ্জনক পথে অবৈধ অভিবাসীর স্রোত বন্ধ করতে যুক্তরাজ্য সরকার কঠোর অবস্থান নিলেও বারবার আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সরকারের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর কনজারভেটিভ পার্টির সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে ঝুঁকিপূর্ণ পথে চ্যানেল অতিক্রম বন্ধ করার এবং ‘রুয়ান্ডা প্রকল্প কার্যকর করার’ একটি উপায় খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী এবং সংগঠিত অপরাধী চক্র হাজার হাজার মানুষের কাছে মিথ্যা বিক্রি করছে। অনেকে চ্যানেলে ডুবে যাচ্ছে।’
বার্মিংহাম সম্মেলনে মিজ ব্রেভারম্যান আরও বলেন, অনেকে ফ্রান্সের মতো একটি নিরাপদ দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্য আসছেন এবং আমাদের আশ্রয়ব্যবস্থার অপব্যবহার করছেন। তিনি ফ্রান্সের উপকূলে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে দেশটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে মানব পাচারের অভিযোগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইস্ট লন্ডনের পাঁচ ট্যাক্সি ড্রাইভারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। ২৮ অক্টোবর বার্কিংসাইড ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয়ে ইমিগ্রেশন আইন লঙ্ঘন ও যুক্তরাজ্যের ভেতরে এবং বাইরে লরিতে করে মানব পাচারের অভিযোগ আনেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ইস্ট লন্ডনের আলাউদ্দিন আহমেদ, এমরান হোসাইন, ফজল মিয়া, কয়সর মিয়া ও মো. আকনু হুসাইন।