
করোনা প্রতিরোধে কলকাতা পৌরসভা বা পৌর করপোরেশন চালু করেছে ‘দুয়ারে পৌরসভা’ প্রকল্প। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এর আগে রাজ্যজুড়ে ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। গত নির্বাচনের সাফল্যে এ প্রকল্পের একটা ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়। আর তাতে অনুপ্রাণিত হয়েই গতকাল শনিবার থেকে কলকাতায় চালু হলো ‘দুয়ারে পৌরসভা’ প্রকল্প।
এ প্রকল্পের আওতায় মানুষ ঘরে বসেই করোনা চিকিৎসার সুবিধা পাবেন।
গতকাল এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন কলকাতা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বর্তমান প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেছেন, এখন থেকে করোনা চিকিৎসার জন্য দুয়ারে দুয়ারে যাবেন পৌরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁরা বাড়িতে গিয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য সোয়াব নেবেন। তারপর তা পরীক্ষা করে ওই ব্যক্তিকে মোবাইলে জানিয়ে দেবেন ফলাফল। পজিটিভ হলে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তিরও ব্যবস্থা করবে পৌরসভা।
তাই পৌর কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার জন্য তৈরি করছে কোয়ারেন্টিন সেন্টার ও সেফ হাউস। পৌরসভা করোনা চিকিৎসার জন্য নমুনা পরীক্ষা, হাসপাতালে ভর্তি ইত্যাদি ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য ফোন নম্বরও জানিয়ে দিয়েছে। অসুস্থ কেউ ফোন করলেই দুয়ারে চলে আসবে কলকাতা পৌরসভা। ব্যবস্থা করবে চিকিৎসার।
এ বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা সরকার এই রাজ্যে চালু করেছিল দুয়ারে সরকার প্রকল্প। শহর ও গ্রামের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাজ্য সরকার তাদের নানা প্রকল্পের কার্যক্রম পৌঁছে দিয়েছিল। আর এ দুয়ারে সরকার প্রকল্পের সুফল পেয়েছিল এ রাজ্যের মানুষ। তার ইতিবাচক ছাপও পড়েছিল এবারের ভোটের চিত্রে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে করোনা আরও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। কিছুতেই লাগাম টানতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার; সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারও। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্যে করোনায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১৯ হাজার ৪৩৬ জন। মারা গেছেন ১২৭ জন। এর মধ্যে কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৬১ জন আর মারা গেছেন ৩৪ জন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মারা গেছেন ১২ হাজার ২০৩ জন। আক্রান্ত হয়েছে ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৭১৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৮ হাজার ২৪৩ জন। সুস্থতার হার এখন ৮৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এখন এ রাজ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ১ লাখ ২৫ হাজার ১৬৪ জন করোনা রোগী।
পশ্চিমবঙ্গে করোনার চিকিৎসার বেহাল দশা মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে। টিকার অভাব, হাসপাতালে করোনা বেডের অভাব, চিকিৎসার অভাব, অক্সিজেনের অভাবে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এসব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরব হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গতকাল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক নির্দেশনায় সব রাজ্যকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, হাসপাতালে করোনা রোগীকে ভর্তি করাতে গেলে আর প্রয়োজন হবে না করোনা পজিটিভ রিপোর্ট। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে হাসপাতালকে ভর্তি নিতে হবে ওই রোগীকে। ফিরিয়ে দিতে পারবে না। প্রয়োজনে করোনার শয্যা বাড়াতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ভর্তি না করানোর জন্য কোনো অজুহাত গ্রাহ্য হবে না।
চিকিৎসার পাশাপাশি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর পর তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে। এ বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেই নির্দেশে বলা হয়েছে, এখন থেকে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দেহ পরিবারের হাতে করোনাবিধি মেনে তুলে দেওয়া হবে। তবে ওই মৃতদেহ সৎকার বা দাফন করতে হবে মৃত ব্যক্তির এলাকার আশপাশের শ্মশানঘাট বা কবরস্থানে। দেহ বাড়িতে নেওয়া যাবে না। পরিবারের সর্বোচ্চ ছয়জন সদস্য এই মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাবেন শ্মশানঘাট বা কবরস্থানে। নিযুক্ত নোডাল অফিসারের সামনে করোনাবিধি মেনে ওই মৃতদেহের শেষকৃত্য বা দাফনের ব্যবস্থা হবে। আগে কোনো করোনা রোগীর মৃত্যু হলে মরদেহ সরাসরি তুলে দেওয়া হতো পৌরসভার হাতে। সেখান থেকে পৌরকর্মীরা ওই মৃতদেহ নিজেদের তত্ত্বাবধানে নিয়ে পরিবার ছাড়া দাহ বা দাফন করে দিতেন।