Thank you for trying Sticky AMP!!

কাশ্মীর ছাড়ছেন শ্রমিকেরা

কাশ্মীরে ভারতের নিরাপত্তাকর্মীদের অবস্থান। রয়টার্স ফাইল ছবি

ভারতশাসিত জম্মু–কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর অঞ্চলটি এখনো অবরুদ্ধ। এ ছাড়া কাশ্মীরে বাইরে থেকে যাওয়া সাধারণ শ্রমিকদের লক্ষ্য করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একাধিক হামলার ঘটনা সেখানে নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এসব ঘটনার পর বাইরে থেকে যাওয়া শ্রমিকেরা আতঙ্কে কাশ্মীর ছাড়তে শুরু করেছেন। এতে উপত্যকায় কর্মিসংকটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সবশেষ গত মঙ্গলবার কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলে আপেল ও ধানের খেতে কাজ করতে যাওয়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ছয় বাঙালি শ্রমিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। গত কয়েক সপ্তাহে উপত্যকায় এ রকম ১১ জন শ্রমিক খুন হয়েছেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে।

তিন দশক আগে থেকে কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। গত ৫ আগস্ট ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ঘটনা নতুন করে সংঘাত উসকে দেয়। বিশেষ মর্যাদার কারণে ভারতের অন্য রাজ্য থেকে গিয়ে কাশ্মীরে কেউ জমি কিনতে কিংবা বসবাস পারতেন না। সেখানকার সব সরকারি চাকরি পেতেন ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা। কিন্তু মর্যাদা বাতিলের পর সেসব সুবিধা বাতিল হয়ে যায়।

কাশ্মীরিদের অভিযোগ, জনসংখ্যাগত অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে নরেন্দ্র মোদি সরকার অন্য রাজ্য থেকে কাশ্মীরে লোকজন আনতেই জম্মু–কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে। কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হুঁশিয়ারি দেয়, ভারতের অন্য রাজ্যের কোনো বাসিন্দাকে কাশ্মীরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। 

স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ না পেলেও ভারতের অন্য রাজ্যের বাসিন্দারা কাশ্মীরে গিয়ে নির্মাণশ্রমিক, আপেলবাগান ও কৃষিজমিতে কাজ করেন। তাঁদেরই একজন উত্তর ভারতের উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা বিকাশ কুমার ভারতী (১৮)। কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরে বহুতলবিশিষ্ট একটি গাড়ি পার্কিংয়ের ভবন নির্মাণের জন্য এক মাসের চুক্তি পেয়েছেন বিকাশ। ভবনটি নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে এখনো তাঁকে ২০ দিন কাজ করতে হবে। শ্রমিকদের ওপর একের পর এক হামলায় উদ্বিগ্ন বিকাশ বলেন, কাজ শেষ হওয়ার পরই তিনি কাশ্মীর ছাড়বেন। প্রায়ই বাড়ি থেকে ফোন আসে। তাঁরা উদ্বিগ্ন থাকেন।

কাশ্মীরকে অস্থিতিশীল করার জন্য সন্ত্রাসী ও  পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। দিল্লির একজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে বাধা দিচ্ছে সন্ত্রাসী ও তাদের পাকিস্তানি দোসরেরা। এ জন্য তারা সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমিকদের লক্ষ্য করে নিষ্ঠুর কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে ভারতের ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে পাকিস্তান।

শ্রীনগরে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন বিহারের মোহাম্মদ সাগর। ২০১৬ সালে শ্রীনগর শহরজুড়ে যখন ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, তখনো তিনি সেখানে নিরাপদে–নিবিঘ্নে কাজ করেছিলেন। তখন বাইরের শ্রমিকদের প্রতি এই রকম আচরণ করা হয়নি। কিন্তু এবারের অবস্থা একেবারে ভিন্ন। সাগর বলেন, তাঁর স্ত্রী  তাঁকে বাড়ি ফিরতে চাপাচাপি করছেন। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত আমি চিরতরে কাশ্মীর ছেড়ে যাচ্ছি শিগগিরই।’