Thank you for trying Sticky AMP!!

কয়লায় নির্ভরশীল ভারত, মাথা কুটে মরছে পরিবেশ

বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করছে, সেই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। দেশটিতে বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। দিন দিন বাড়ছে মুখে মাস্ক লাগানো মানুষের সংখ্যা। এটি ধোঁয়াশাচ্ছন্ন দিল্লির দৃশ্য। ছবি: এএফপি

বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করছে, সেই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। ১ নম্বরে চীন। দুটি দেশেই বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। দিন দিন বাড়ছে মুখে মাস্ক লাগানো মানুষের সংখ্যা। খোদ ভারতের রাজধানীতেই বায়ুদূষণ মারাত্মক। এর পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে কয়লা, ভারতের বিভিন্ন জায়গায় যা সোনার মতোই মূল্যবান হিসেবে সমাদৃত।

বিজনেস ইনসাইডারের খবরে বলা হয়েছে, ভারতে প্রতিবছর বায়ুদূষণে প্রায় ১১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। অথচ ২০০৬ থেকে ২০১৬—এই ১০ বছরে দেশটিতে কয়লার ব্যবহার বেড়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। কারণ রেলের চাকা ও বিদ্যুতের সরবরাহ ঠিক রাখতে কয়লার উপযুক্ত বিকল্প এখনো খুঁজে পায়নি ভারত।

চীনের সঙ্গে পররাষ্ট্র, সামরিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় আছে ভারত। হয়তো কয়লা ব্যবহারেও পিছিয়ে থাকতে চায় না নরেন্দ্র মোদির দেশ। ভারতের বড় কয়লাখনিগুলোর বেশির ভাগই দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায়। ব্রিটিশ সাময়িকী ‘ইকোনমিস্ট’ বলছে, গত বছর অতিরিক্ত ২৭ মিলিয়ন টন কয়লা ব্যবহার করেছে ভারত। আগের বছরের চেয়ে ব্যবহার তুলনামূলকভাবে বেড়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এই দুই দেশ পাল্লা দিয়ে কয়লার ব্যবহার বাড়ানোর কারণে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণও কমছে না। শুধু নিজেরা ব্যবহার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না ভারত-চীন, এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাড়িয়ে দিচ্ছে সহায়তার হাত। বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে শুরু করে ফিলিপাইন বা দক্ষিণ কোরিয়া পর্যন্ত অনেক দেশই কয়লার ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। মূলত কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অজুহাতেই দুই চোখে কয়লা দেখছে সবাই।

দুই চোখে শুধু কয়লা দেখতে পাওয়ায় নাকেমুখে মাস্ক পরাটাও বাধ্যতামূলক হয়ে যাচ্ছে। অচিরেই এ পরিস্থিতির পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। চিকিৎসাবিষয়ক জার্নাল ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, দূষণের কারণে সারা বিশ্বে প্রায় ৯০ লাখ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর অর্ধেকের জন্য দায়ী এশিয়ার দেশগুলো। এই হিসাবে দেখা গেছে, এই ৯০ লাখের মধ্যে ২৫ লাখ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ভারতে এবং দেশ হিসাবে এটিই সবচেয়ে বড় অংশ। ভারতের জলবায়ুর দুরবস্থার জন্য কয়লাকেই প্রধানত দায়ী করা হয়।

সারা পৃথিবীতে মোট যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, তার ৩৮ শতাংশ আসে কয়লা থেকে। বিদ্যুতের সবচেয়ে বড় উৎস এটিই। গত ২০ বছরে কয়লা ও বিদ্যুতের এই মধুর সম্পর্কে একেবারেই চিড় ধরেনি। যদিও গ্যাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো অনেক বিকল্প মানুষের সামনে এসেছে, কিন্তু কয়লা ছাড়তে চায় না কোনো দেশ। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) বলছে, আগামী দুই দশকে জ্বালানি বা শক্তির চাহিদা মেটাতে নেওয়া পদক্ষেপের দিক থেকে ভারতকে ছাড়াতে পারবে না অন্য কোনো দেশ।

গত বছর অতিরিক্ত ২৭ মিলিয়ন টন কয়লা ব্যবহার করেছে ভারত। আগের বছরের চেয়ে ব্যবহার তুলনামূলকভাবে বেড়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ছবি: রয়টার্স

ভারতের এত মরিয়া হওয়ার কারণও আছে। দেশটিতে শিল্পায়ন হচ্ছে দ্রুতগতিতে। এর জন্য প্রচুর বিদ্যুৎ প্রয়োজন। এ ছাড়া এখনো দেশটির অনেক অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। ‘গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, এখনো ভারতে প্রায় ২০ কোটি মানুষ বিদ্যুতের সুবিধাবঞ্চিত।

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ভারত বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছিল। ওই সময় ধারণা করা হয়েছিল, ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা ২০১২ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে। অপেক্ষাকৃত স্বল্প ব্যয়ে এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভারতের কাছে কয়লা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আর দেশটি যদি বর্তমান হারেই কয়লা ব্যবহার করতে থাকে, তবে কার্বন নিঃসরণের দিক থেকে চীনকে হটানো ভারতের জন্য কঠিন কিছু হবে না।

সারা পৃথিবীতে মোট যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, তার ৩৮ শতাংশ আসে কয়লা থেকে। বিদ্যুতের সবচেয়ে বড় উৎস এটিই। ছবি: এএফপি

ভারত কী করছে?
কয়লানির্ভরতা থেকে ধীরে ধীরে বের হওয়ার চেষ্টা করছে ভারত। কিন্তু এ এমনই এক দুষ্টচক্র, যা থেকে উদ্ধারের কার্যকর পথ খুঁজে পেতে খাবি খেতে হচ্ছে দেশটিকে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিকল্প উপায় খুঁজছে ভারত।

প্যারিস চুক্তির আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বকে জানিয়েছিলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার করে ২০২২ সালের মধ্যে ১৭৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দেশটির। চাহিদার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় এরই মধ্যে সেই লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে ২২৭ গিগাওয়াট হয়েছে। আশার কথা হলো, বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ গত দুই বছরে প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। কিন্তু সেই হারে ভারত সরকারের কয়লাপ্রীতি কমেনি। উল্টো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৃষ্ঠপোষণা ও বিনিয়োগ বেড়েই চলেছে। পরিত্যক্ত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সংস্কারের ব্যয়বহুল প্রকল্পও নিচ্ছে সরকার।

‘ইকোনমিস্ট’ বলছে, ভারতের মোট বিদ্যুতের তিন-চতুর্থাংশ উৎপাদিত হচ্ছে কয়লা থেকে। কয়লার ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে বিপুলসংখ্যক মানুষ। রাষ্ট্রীয় সংস্থা কোল ইন্ডিয়াতেই কাজ করেন ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। সব মিলিয়ে দেশটির পুরো কয়লাশিল্পে ওতপ্রোতভাবে জড়িত পাঁচ লাখ মানুষ। কয়লার উৎপাদন কমানোর বদলে বাড়ানোর চেষ্টা করছে কোল ইন্ডিয়া। ২০১৭ সালের ৫৬০ মিলিয়ন টন থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন টনে যেতে চায় সংস্থাটি।

ভারতের কয়লাশিল্প নিয়ে বই লিখেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রোহিত চন্দ্র। তিনি মনে করেন, এক থেকে দেড় কোটি মানুষ গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য কয়লার ওপর নির্ভরশীল। আবার দেশটির পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে কয়লা খনি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোই রাস্তাঘাট, পানি সরবরাহ থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষকে নানান সুবিধা সরবরাহ করছে। অথচ এই প্রত্যন্ত ও দরিদ্র এলাকায় সরকারও খুব বেশি ভূমিকা রাখেনি। এর ফলে কয়লার প্রতি সাধারণ জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিও কিছুটা ইতিবাচক। তাই এ বিষয়ে হুট করে কোনো চরম সিদ্ধান্ত নিলে জনরোষও সামলাতে হবে।

ভারতের মোট বিদ্যুতের তিন-চতুর্থাংশ উৎপাদিত হচ্ছে কয়লা থেকে। কয়লার ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে বিপুলসংখ্যক মানুষ। সব মিলিয়ে দেশটির পুরো কয়লাশিল্পে ওতপ্রোতভাবে জড়িত পাঁচ লাখ লোক। ছবি: রয়টার্স

কেন কয়লা চাই ভারতের?
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর ভারত সরকার কয়লাখনিগুলো বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু অপরিকল্পিত খননের কারণে বিভিন্ন খনিতে মারাত্মক দুর্ঘটনা হওয়ায়, পরে সব খনি জাতীয়করণ করা হয়। কয়লার বাড়বাড়ন্তের দায় এখন তাই শুধু সরকারের।

‘ইকোনমিস্ট’ বলছে, ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতিতেও কয়লা ঢুকে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের ব্যয়বহুল পদ্ধতি ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা।

প্রথমত, ভারতের যেসব রাজ্যে খনি রয়েছে, সেগুলোতে স্থানীয় রাজনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক কয়লা। যেমন: ভারতের মোট খনিজ সম্পদের ৪০ শতাংশ আছে ঝাড়খন্ডে। মোদির দেশের পাঁচটি দরিদ্র রাজ্যের মধ্যে এটি একটি। ঝাড়খন্ডে মাওবাদীরা বেশ সক্রিয়, আছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, খুনোখুনি। এসবের পেছনে কয়লাও অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। কয়লা থেকে পাওয়া অর্থ খনিসংশ্লিষ্ট এলাকার রাজনৈতিক দলগুলোর চাঁদা জোগায়। ফলে অর্থের উৎস বন্ধ দূরের কথা, নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছাও নেই রাজনীতিবিদদের।

দ্বিতীয়ত, অর্থনীতি। কয়লাখনিগুলো জাতীয়করণের পর কিছু ক্ষেত্রে সেগুলো ইজারা দিয়েছিল সরকার। এর সঙ্গে জড়িয়ে যায় দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাতন্ত্র ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে নেওয়া বিপুল অঙ্কের ঋণ। এসবের কারণে ১৯৯৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ভারত সরকারের প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা কয়লাখনিগুলোতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। আবার কয়লার লাভজনক ব্যবসায় এখন জড়িয়েছে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও। কয়লাশিল্প সংকুচিত হলে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় থাকবে এসব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানও। সেই ক্ষতির পরিমাণ এতই বিশাল যে কিছু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়া হয়ে যাওয়াটাও আশ্চর্যের হবে না। মনে রাখতে হবে, এটি পুরো দেশের অর্থনীতিতেই বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

তৃতীয়ত, কয়লার বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ও তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কিছু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। তা থেকে উত্তরণ সময়সাপেক্ষ। আবার নিরবচ্ছিন্নভাবে বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন জলবায়ুগত কারণেই ভারতে পুরোপুরি সম্ভব নয়। কারণ দেশটির সব অঞ্চলে বছরের পুরোটা সময় প্রয়োজনীয় সূর্যরশ্মি বা উপযুক্ত গতির বায়ু পাওয়া যায় না। আর পরিবেশবান্ধব বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর তা পরিবহনের জন্য এত দিনের পুরোনো গ্রিড ব্যবস্থার পরিবর্তনে সময় ও অর্থ দুইই প্রয়োজন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রোহিত চন্দ্র তাই বলছেন, ভারতের রাষ্ট্রযন্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কয়লা গভীরভাবে জড়িয়ে গেছে। এই সম্পর্ক এতটাই গভীর ও জটিল, তা বিচ্ছিন্ন করতে গেলে অবধারিতভাবে মারাত্মক রাজনৈতিক বিরোধিতা সহ্য করতে হবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভারতের সবচেয়ে বড় কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে কর্ণাটকে। ১২ দশমিক ৩ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে এখানে। এর মধ্যে বায়ু, সৌর ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিও ব্যবহৃত হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

ভবিষ্যৎ কী?
ভারত একেবারে বসে নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশটির সবচেয়ে বড় কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে কর্ণাটকে। কোয়ার্টজ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব মিলিয়ে ১২ দশমিক ৩ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে এখানে। এর মধ্যে বায়ু, সৌর ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিও ব্যবহৃত হচ্ছে। সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভারত সরকারের টনক নড়েনি, তা বলা যাবে না। তবে সে ক্ষেত্রে কিছু বাস্তব ও কিছু স্বার্থজনিত বাধা থাকায়, সেই কাজ ব্যাপক পরিসরে হচ্ছে না।

‘ইকোনমিস্ট’ জানিয়েছে, ভারত সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম চলতি বছরই বলে দিয়েছেন, কয়লাশিল্পে বিনিয়োগ করা অর্থের বিরাট অংশ ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। এই ঋণগুলোর বেশ কিছু খেলাপিও হয়েছে। এগুলো ভারতের ব্যাংকিং ব্যবস্থা তথা অর্থনীতির জন্য বিরাট ঝুঁকি।

‘গার্ডিয়ান’-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভারত সরকার মনে করছে প্রথম দুটি শিল্প বিপ্লবে শরিক হতে পারেনি তারা। কিন্তু ডিজিটাল বিপ্লবে অংশ নেওয়া গেছে। এখন এরই সূত্র ধরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও গ্রিন এনার্জি উৎপাদনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় সরকার। বর্তমানে সৌর ও বায়ুবিদ্যুতে খরচ কমে আসায় সরকার উৎসাহ বোধও করছে।

তবে ভারত কয়লানির্ভরতা থেকে পুরোপুরি সরে আসতে পারবে বলে মনে করেন না অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম। অন্তত আগামী ১০-১৫ বছর এভাবেই চলবে।

ভারতভিত্তিক চিন্তক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টিবিলিটি বলছে, ২০১৭ সালে ভারত সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকল্পগুলোর তুলনায় কয়লাসংশ্লিষ্ট প্রকল্পে পৃষ্ঠপোষণা বাড়িয়েছে তিন গুণ। আর এই বিনিয়োগে সরাসরি জড়িত সরকারি ব্যাংকগুলো।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা অজয় মাথুর ‘ইকোনমিস্ট’কে বলেন, ভারতকে কয়লানির্ভরতা থেকে বের করতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনতে হবে। এই দাম যদি কয়লার চেয়েও সাশ্রয়ী হয়, তবেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আগ্রহী হবেন, নচেৎ নয়।

এক কথায় বলতে গেলে, কয়লা ছাড়তে চাইলেও তা থেকে মুক্তি মিলছে না ভারতের। এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে রাজনীতি, অর্থনীতিসহ নানা কিছু। পুরো বিষয়টিই হয়ে গেছে জটিল। পরিবেশবাদীরা এখনো আশায় বুক বাঁধছেন। তবে সেই আশা সত্যি হতে হতে দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আরও কত প্রাণ ঝরে, কে জানে!