Thank you for trying Sticky AMP!!

নাগরিকত্ব আইন নিয়ে রণক্ষেত্র দিল্লি

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দিল্লিতে বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

ফের অশান্ত রাজধানী দিল্লি। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর নির্বিচার অত্যাচারের প্রতিবাদে দিল্লির সিলামপুর এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল আজ মঙ্গলবার রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। প্রায় দুই হাজার জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়। ছুড়তে হয় কাঁদানে গ্যাস। যথেচ্ছ ইটপাটকেলের গায়ে জনতা ও পুলিশ দুই পক্ষেই বহু লোক আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি স্কুলবাসসহ বহু মোটরগাড়ি, বাইক ও সরকারি বাস।

ঘটনার শুরু আজ দুপুর ১২টা নাগাদ। পুলিশ জানায়, নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হাজার দুয়েক লোক সিলামপুর এলাকায় জড়ো হন। তাঁরা জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধেও স্লোগান দিতে থাকেন। একসময় বিক্ষোভকারী জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। আক্রান্ত হয় পথচলতি গাড়ি। পুলিশ জানায়, বাধ্য হয়ে তাদের লাঠিচার্জ করতে হয়। কাঁদানে গ্যাসও ছোড়া হয়। ক্রমেই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে জাফরাবাদ, মৌজপুর–বাবরপুর, শিববিহার, গোকুলপুর, জোহরি এনক্লেভ অঞ্চলে। বাইরের লোকজন যাতে এই এলাকায় আসতে না পারে, সে জন্য ওই এলাকার মোট সাতটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। নির্দেশ দেওয়া হয় কোনো ট্রেন যেন ওই স্টেশনগুলোয় না থামে।

জামিয়া মিলিয়া ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভের মোকাবিলায় পুলিশের ভূমিকা এই মুহূর্তে আলোচনার স্তরে উঠে এসেছে। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, চণ্ডীগড়, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, কেরালা, আসাম, তেলেঙ্গানা, পদুচেরি, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গের মোট ২৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা সংহতি দেখানোর পাশাপাশি নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। শুধু দেশই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রছাত্রীও আজ ভারত সরকারকে চিঠি লিখে রোববারের পুলিশি অত্যাচারের নিন্দা করার পাশাপাশি বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন, বিক্ষোভ দেখানো বা দ্বিমত পোষণ করা গণতন্ত্রের অপরিহার্য অঙ্গ। পুলিশ লেলিয়ে তা দমন করা সুশাসনের পরিচয় নয়।

দেশব্যাপী এই বিক্ষোভের মুখে বিরোধী দলের নেতাদের এক প্রতিনিধিদল আজ বিকেলে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করে। ওই সাক্ষাতের পর কংগ্রেস সভানেত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিতর্কিত আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক। না হয় বিক্ষোভ ও আন্দোলন আরও ছড়িয়ে পড়বে।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পর সোনিয়া বলেন, বিক্ষোভের আগুন গোটা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। জনতার স্বর চাপা দেওয়ার ক্ষেত্রে মোদির পুলিশ নির্দয়। জামিয়া মিলিয়া তার উদাহরণ। বিরোধী নেতারা পুলিশি অত্যাচারের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিএম, তেলেগু দেশম, টিডিপি, আরজেডি, এসপি, ন্যাশনাল কনফারেন্স, মুসলিম লিগ, এআইইউডিএফ, ডিএমকের প্রতিনিধিরা।

জামিয়া ও আলিগড়–কাণ্ড গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং ও কলিন গনজালভেস। এই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুলিশি অত্যাচারের তদন্তের জন্য তাঁরা এক সদস্যের কমিটি গঠনের আরজি জানিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে সেই আরজি মঙ্গলবার শুনবেন জানিয়েছিলেন। কিন্তু আজ তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এটা আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন। বিভিন্ন রাজ্যে ঘটনাগুলো ঘটেছে। অতএব বিধানের জন্য তাঁরা হাইকোর্টে যেতে পারেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি নিশ্চিত হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিরা এর যথাযথ উত্তর দেবেন।

জামিয়া মিলিয়ার ঘটনায় দিল্লি পুলিশ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তাঁদের কেউই বিশ্ববিদ্যালেয়র ছাত্র নন। প্রত্যেকেই স্থানীয় দুষ্কৃতকারী। পুলিশ বলেছে, এর অর্থ এই নয় যে জামিয়ার ছেলেমেয়েদের সবাই নির্দোষ।

পুলিশ যাই বলুক, তাদের সমালোচনায় মুখর দেশের বিভিন্ন পেশার মানুষজন। বিনোদনজগতের বহু পরিচিত মুখ জামিয়া মিলিয়া ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর, তাপসি পান্নু, কঙ্কনা দেবশর্মা, ভূমি পেডনেকর, পরিণীতি চোপড়া, দিয়া মির্জা, সোনি রাজদান, রিচা চাড্ডা, সায়নী গুপ্তর পাশাপাশি অভিনেতা রাজকুমার রাও, বরুণ ধাওয়ান, ভিকি কৌশল, রীতেশ দেশমুখ, পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ, সুধীর মিশ্ররা টুইট করে তাঁদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন।

দেশব্যাপী এই বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অবশ্য আজও বলেছেন, কোনো ভারতীয়ের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া এই আইনের লক্ষ্য নয়। তিন প্রতিবেশী দেশের অত্যাচারিত সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়াই একমাত্র উদ্দেশ্য।

কিন্তু ঝাড়খন্ডে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এই আইনকে হাতিয়ার করতে প্রধানমন্ত্রী ছাড়েননি। আজ ওই রাজ্যে এক নির্বাচনী জনসভায় কংগ্রেসের উদ্দেশে মোদি বলেন, ক্ষমতা থাকলে তারা বলুক পাকিস্তানের নাগরিকদের তারা ভারতের নাগরিকত্ব দেবে। সাহস থাকলে এ কথাও বলুক, কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ তারা পুনর্বহাল করবে। গত লোকসভা ভোটে এইভাবেই জাতীয়তাবাদ উসকে দিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল। ঝাড়খন্ড জিততেও মোদির বিজেপি সেই চেনা ছক আঁকড়ে ধরেছে। গতবার হাতিয়ার ছিল বালাকোট, এবার নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি।