Thank you for trying Sticky AMP!!

লকডাউনের মেয়াদ আর বাড়াবে না ভারত

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: সংগৃহীত

যাবতীয় জল্পনা ও গুজব উড়িয়ে সরকার জানাল, ২১ দিনের লকডাউনের মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি) জানিয়েছে, লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর রটনা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কেবিনেট সচিব রাজীব গৌবাও বলেছেন, এ ধরনের খবরে অবাকই হচ্ছি। ২১ দিন পর লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনাই নেই।

বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে লেখালেখি ও বলাবলি হচ্ছে, ২১ দিনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও লকডাউন আরও কিছুদিন বাড়ানো হতে পারে। এই প্রচার সব মহলেই আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। বাড়িয়েছে দুশ্চিন্তা। লকডাউনের প্রথম সাত দিন কাটতে না কাটতেই তাই সরকার বিষয়টি স্পষ্ট করে দিল। সরকারি এই বিবৃতি সত্ত্বেও মনে করা হচ্ছে, এখনই সিদ্ধান্ত হয়তো নেওয়া হয়নি, ২১ দিন পর অবস্থা বুঝে সরকার ব্যবস্থা নেবে।

করোনার মোকাবিলায় চলতি মাসের ২৪ তারিখ রাত ১২টা থেকে টানা ২১ দিনের জন্য গোটা ভারতকে অবরুদ্ধ বা লকডাউন ঘোষণা করে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং এই ঘোষণা দেন। লকডাউন চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। সোমবার পর্যন্ত ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৭১ জন। মৃত্যুর সংখ্যা ২৯।

লকডাউনে সবচেয়ে বেশি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে। আচমকা কাজ হারানো হাজার হাজার শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্যে আটকা পড়েছেন। বহু শ্রমিক গৃহচ্যুতও। এসব ছিন্নমূল প্রান্তিক ও দিন আনি দিন খাই মানুষজন নিজ নিজ রাজ্যে ফিরতে ভিড় জমাচ্ছেন বাস টার্মিনালে। তাঁদের ঘিরে সৃষ্টি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলার সমস্যাও। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের এজলাসে এসব মানুষের দুর্দশা সম্পর্কিত দুটি মামলা আজ সোমবার শোনা হয়। সেই উপলক্ষে প্রধান বিচারপতি বলেন, করোনার চেয়েও মারাত্মক হয়ে উঠেছে মানুষের মনে ঢুকে যাওয়া ভয় ও আতঙ্ক।

অভিবাসী শ্রমিকদের যাঁরা গ্রামে ফিরে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন শহরে ভিড় জমিয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে সরকার কী ভেবেছে এবং তাঁদের জন্য কী করছে, মঙ্গলবারের মধ্যে সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট সর্বোচ্চ আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। আবেদনকারীদের তিনি বলেন, সরকার কী করছে, না জেনে কিছু বলা ঠিক নয়।

প্রধান বিচারপতি বোবদে ও বিচারপতি নাগেশ্বর রাওয়ের এজলাসে ওঠা এই দুই মামলা শোনা হয় ভিডিও কনফারেন্সিং মারফত। সরকার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, সবার স্বার্থেই অভিবাসী শ্রমিকদের রাজ্যে রাজ্যে আটকে রাখা অত্যন্ত জরুরি। করোনা জীবাণু আটকানোর এটাই পথ। এই বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারেরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। কাল মঙ্গলবার কেন্দ্রের রিপোর্ট পাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে ফের শুনানি হবে।

লকডাউনের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যে রাজ্যে কাজ হারাতে থাকেন অভিবাসী শ্রমিকেরা। হাতে অর্থ না থাকায় তাঁরা সবাই যে যাঁর বাড়ি ফিরতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। প্রথম দিকে ট্রেন ও বাস বোঝাই হয়ে তাঁরা ফেরেন। পরে ট্রেন-বাস বন্ধ হয়ে যায়। মরিয়া হয়ে বহু শ্রমিক দুধের খালি ট্যাংকার কিংবা মালবাহী কনটেইনারে আশ্রয় নেন। এঁদের জন্য প্রাথমিকভাবে কোনো পরিকল্পনা কেন্দ্র বা রাজ্য কোনো সরকারেরই ছিল না। এই অবস্থায় উত্তর প্রদেশ সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের গ্রামে গ্রামে ফিরিয়ে দেওয়ার কর্মসূচির কথা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে গোলমালের শুরু। দিল্লির পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। হাজার হাজার মানুষ এক জায়গায় জড়ো হলে করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে সেই আশঙ্কা বড় হয়ে ওঠে। ভীত ও আতঙ্কের এই সর্বনাশা দিকটাই প্রধান বিচারপতির উদ্বেগে ধরা পড়ে।

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বারবার বলছে, কর্মচ্যুতদের ভাড়া বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলা যাবে না। কাউকে জোর করে তাড়ানো যাবে না। কারও বকেয়া বেতন কাটা যাবে না। সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার সব দায়িত্ব নিচ্ছে। কিন্তু তবুও অনিশ্চয়তায় পড়া মানুষজন স্বাভাবিক হতে পারছেন না। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে, উত্তর প্রদেশের বেরিলিতে একদল অভিবাসী শ্রমিকের ওপর পুলিশ কীটনাশক স্প্রে করছে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র ওই ভিডিও দেখে বলেছেন, অনুগ্রহ করে এত অমানবিক হবেন না। সমালোচনার জবাবে সরকারিভাবে বলা হয়েছে, পানিতে ক্লোরিন মিশিয়ে ওই শ্রমিকদের জীবাণুমুক্ত করা হয়। স্প্রে করার আগে তাঁদের চোখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সরকারি আশ্বাস সত্ত্বেও কাজ হারিয়ে ঘরে ফেরার আশায় পড়ে থাকা বিভিন্ন রাজ্যের দরিদ্র প্রান্তিক মানুষদের দেখভাল করা সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। করোনার প্রসার রোধ হওয়া অনেকাংশে এঁদের ওপরেই নির্ভরশীল।