ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা আজ বুধবার সাত সকালে চড় খেলেন। পুরোনো দিল্লির সিভিল লাইন্স এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে ‘জনশুনানি’র সময় আচমকা এ ঘটনা ঘটে যায়। এক দর্শনার্থী তাঁর কাছে একটি কাগজ এগিয়ে কথা বলার সময় আচমকা চড় মারেন।
নিরাপত্তারক্ষীরা সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তিকে আটক করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীকেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর আঘাত গুরুতর নয়।
ঘটনাটা ঠিক কী ঘটেছে, তা নিয়ে প্রথম দিকে বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন ধরনের দাবি ছিল। পরে পুলিশি সূত্রে জানা যায়, আজ বুধবার সকালে সাপ্তাহিক ‘জনশুনানি’ চলছিল। জনশুনানির দিন মানুষজন তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে থাকেন।
আজ বুধবার সেই সময় মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি মুখ্যমন্ত্রীর দিকে একটি কাগজ এগিয়ে দেন। তারপরই তিনি স্বর উঁচিয়ে গালিগালাজ করেন ও মুখ্যমন্ত্রীকে চুলের মুঠি ধরে চড় মারেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটক ওই ব্যক্তির নাম রাজেশ সাকরিয়া। তিনি গুজরাটের রাজকোটের বাসিন্দা।
সরকারি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, রাজেশের মায়ের নাম ভানু। তিনি নাকি বলেছেন, রাজেশ কুকুরপ্রেমী। দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় রাস্তার কুকুরদের ধরে আশ্রয়স্থলে রাখা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি যে রায় দিয়েছেন, রাজেশ নাকি তাতে ক্ষুব্ধ।
ঘটনার পর নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক কী ঘটেছে, তা নিয়েও নানা রকম বয়ানও ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপির একাংশ দাবি করতে থাকেন, মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়েছে। রেখার মাথায় চোট লেগেছে।
কোনো কোনো মহল থেকে আবার বলা হয়, আক্রমণকারীর সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে মুখ্যমন্ত্রী টেবিলে ধাক্কা খেয়ে আঘাত পেয়েছেন। দিল্লি বিজেপির সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব আবার প্রথম দিকে বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে পাথর ছোড়া হয়নি, চড়ও মারা হয়নি। পরে বলেন, একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।
জনশুনানির কোনো ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। তবে কিছু যে একটা হয়েছে, তা বিজেপি নেতাদের আচরণেই স্পষ্ট। কারণ, দিল্লির বিজেপি মন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা এই আক্রমণ ‘বিরোধীদের রাজনৈতিক চক্রান্ত’ বলেছেন।
আরেক মন্ত্রী কপিল মিশ্র এই আক্রমণ ‘কাপুরুষোচিত’ বলেছেন। তিনি বলেন, আয়ুষ্মান কার্ড, স্বচ্ছ দিল্লি, পরিষ্কার যমুনা, উন্নত নিকাশি ব্যবস্থাসহ উন্নয়নমূলক কাজ যাঁরা সহ্য করতে পারছেন না, তাঁরাই এই ধরনের আচরণ করছেন।
দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও আতিশি দুজনেই এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকবে। কিন্তু তাই বলে হিংসা বরদাশত করা যায় না। রাজনীতিতে হিংসার স্থান নেই।
ঘটনার পর দিল্লি পুলিশের পদস্থ কর্তারা অকুস্থলে যান। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তাব্যবস্থা তদারকি করা হয়। আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কী কারণে এই কাজ, তা জানার চেষ্টা চলছে।