ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেশটির উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী সি পি রাধাকৃষ্ণন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেশটির উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী সি পি রাধাকৃষ্ণন

কাল ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ‘ক্রস ভোটিং’–এ বিপদে পড়তে পারে বিজেপি

আগামীকাল মঙ্গলবার ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন। দুই দক্ষিণি প্রার্থীর মধ্যে এই নির্বাচনের একমাত্র আকর্ষণ, দলীয় ‘মৌখিক’ নির্দেশ অমান্য করে সংসদ সদস্যরা ক্রস ভোটিং করেন কি না।

ভোটের ঠিক আগের দিন, আজ সোমবার ওডিশার সাবেক শাসক বিজু জনতা দল (বিজেডি) ও তেলেঙ্গানার সাবেক শাসক দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) ভোটে অংশ না নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। শাসক বিজেপি ও বিরোধী ইন্ডিয়া জোট—দুই পক্ষই ভেবেছিল বিজেডি ও বিআরএসের সমর্থন তারা পাবে। ওডিশায় ক্ষমতাসীন থাকাকালীন বিজেডি কেন্দ্রীয় ইস্যুতে সব সময় বিজেপিকে সমর্থন করে এসেছে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তারা বেসুরো।

ওডিশার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের পক্ষে বিজেডির নেতা সস্মিত পাত্র এই ভোটে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, তাঁদের দল এনডিএ ও ইন্ডিয়া দুই জোটের সঙ্গেই সমদূরত্ব রাখতে চায়। অন্যদিকে অন্ধ্র প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ছেলে ও বিআরএসের কার্যনির্বাহী সভাপতি কে টি রামা রাও সোমবার জানান, ইউরিয়া ঘাটতির জন্য তেলেঙ্গানার কৃষকেরা দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন। তাঁদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে দলীয় সদস্যরা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে জগদীপ ধনখড় আচমকা পদত্যাগ করায় এই ভোট হচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন শাসক জোট এনডিএ উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রার্থী করেছে তামিলনাড়ুর সাবেক বিজেপি সভাপতি সি পি রাধাকৃষ্ণনকে। রাধাকৃষ্ণন ছিলেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল। বিরোধী জোট ইন্ডিয়া প্রার্থী করেছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অন্ধ্র প্রদেশের বি সুদর্শন রেড্ডিকে। দুই প্রার্থীই দক্ষিণি। লড়াইটা তাই হয়ে দাঁড়িয়েছে তামিলনাড়ু বনাম অন্ধ্র প্রদেশের।

প্রার্থী বাছাইয়ের মধ্যে স্পষ্টত আঞ্চলিক স্বার্থ বিবেচিত হয়েছে। আগামী বছর তামিলনাড়ু বিধানসভার ভোট। দক্ষিণি এই রাজ্য দখলে বিজেপি মরিয়া। এআইএডিএমকের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্ক তারা ঝালিয়ে নিয়েছে। জোট বেঁধেছে। তারা চাইছে ডিএমকে–কংগ্রেস জোটকে হারিয়ে রাজ্য দখল করতে। সেই লক্ষ্যে রাধাকৃষ্ণনকে প্রার্থী করে তারা তামিল জাত্যভিমান উসকে ডিএমকের ভোটে ভাগ বসাতে চাইছে।

কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে বি সুদর্শন রেড্ডি (মাঝে)

অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোটও অন্ধ্র প্রদেশের সাবেক বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডিকে প্রার্থী করে শাসক জোটে ভাঙন ধরাতে উন্মুখ। তেলুগু দেশম এনডিএ জোটের শরিক। রাজ্যের সাবেক শাসক দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস যত দিন ক্ষমতাসীন ছিল, তত দিন কেন্দ্রে বিজেপি সরকারকে সমর্থন করে এসেছে। এবার উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এই দুই দল তেলুগু জাত্যভিমানকে সমর্থন করে কি না, সেই আগ্রহ জিইয়ে রয়েছে।

উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যরাই ভোট দিয়ে থাকেন। এই ভোটে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় হুইপ জারি করা হয় না। তবে ‘মৌখিক’ নির্দেশনা থাকে। এবার সেই নির্দেশনা তামিলনাড়ু ও অন্ধ্র প্রদেশের সাংসদেরা মানেন কি না, সেটাই একমাত্র আকর্ষণ।

এই ভোটে অংশগ্রহণ করবেন রাজ্যসভার ২৩৩ জন নির্বাচিত (৫টি আসন শূন্য আছে) ও ১২ জন রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্য। এই ২৪৫ জনের সঙ্গে ভোট দেবেন লোকসভার ৫৪২ জন সদস্য (একটি আসন শূন্য)। সংখ্যার বিচারে এনডিএ গরিষ্ঠ। তাদের পক্ষে দুই কক্ষ মিলিয়ে রয়েছে ৪২২ জনের সমর্থন। জয়ের জন্য যেখানে প্রয়োজন ৩৯৪ জনের সমর্থন।

এই ভোটে একমাত্র আকর্ষণ বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে ভাঙন ধরে কি না। একইভাবে দেখার, বিরোধী জোটে ভাঙন ধরানো যায় কি না। অর্থাৎ মূল আকর্ষণ ক্রস ভোটিং ঘিরে। জাত্যভিমানের প্রশ্নে কারা কাদের ঘর ভাঙে সেটাই দেখার।