
এ যেন চেনা ঘাতকের ফিরে আসা। এর জের ধরে একটি ওষুধ কোম্পানির মালিক সদ্য গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ভারতের মধ্যপ্রদেশের একটি ছোট্ট শহরে আচমকা একে পর এক শিশু মারা যেতে থাকে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা হন্যে হয়ে এর কারণ খুঁজতে থাকেন।
অন্তত ১৯টি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল এবং সেটা হয়েছিল একটি চেনা কফ সিরাপ খাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। তাদের বয়স এক থেকে ছয় বছরের মধ্যে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা খাওয়ার পানি থেকে শুরু করে মশার কামড়ের শঙ্কা পর্যন্ত সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকেন।
কফ সিরাপটিতে ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ ডাইথাইলিন গ্লাইকোল আছে। এটি একটি বিষাক্ত দ্রাবক, যা শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত হয়। ওষুধে এটি থাকারই কথা নয়। বিষাক্ত এই অ্যালকোহল পান করলে সচরাচর কিডনি বিকল হয়ে যায়।
তারপর জানা গেল, এই শিশুদের সবারই কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল। তারা সবাই যে কফ সিরাপটি খেয়েছিল, সেটার নাম কোল্ডরিফ।
কর্মকর্তারা কফ সিরাপটি পরীক্ষা করতে চেন্নাইয়ে একটি সরকারি পরীক্ষাগারে পাঠান। সেখান থেকে কয়েক সপ্তাহ পর নিশ্চিত করা হয় যে কফ সিরাপটিতে ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ ডাইথাইলিন গ্লাইকোল আছে। এটি একটি বিষাক্ত দ্রাবক, যা শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত হয়। ওষুধে এটি থাকারই কথা নয়। বিষাক্ত এই অ্যালকোহল পান করলে সচরাচর কিডনি বিকল হয়ে যায়।
শুধু মধ্যপ্রদেশে নয়, প্রতিবেশী রাজস্থান রাজ্যেও দুটি শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। অভিযোগ আছে, তারাও স্থানীয়ভাবে তৈরি একটি কাশির সিরাপ খেয়েছিল। সিরাপটি খুব ছোট শিশুদের জন্য নিরাপদ নয়। এ থেকে সেখানে গণরোষ তৈরি হয় এবং সরকার তদন্তে নামে।
ঘাতক নতুন নয়
ভারতে তৈরি কফ সিরাপে থাকা বিষাক্ত দ্রাবক ডাইথাইলিন গ্লাইকোল বছরের পর বছর ধরে বহু শিশুর মৃত্যুর কারণ হয়েছে। ২০২৩ সালে গাম্বিয়ায় ৭০টি এবং উজবেকিস্তানে ১৮টি শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসেবে ভারতের তৈরি কফ সিরাপের কথা এসেছিল।
তার আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে কফ সিরাপ খেয়ে অন্তত ১২ শিশুর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল।
তাদের সবার বয়স পাঁচ বছরের কম ছিল। সে সময় সেখানে কফ সিরাপ সেবনে আরও বেশি শিশুর মৃত্যুর হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন আন্দোলনকর্মীরা।
২০২৩ সালে গাম্বিয়ায় ৭০টি এবং উজবেকিস্তানে ১৮টি শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসেবে ভারতের তৈরি কফ সিরাপের কথা এসেছিল।
অতীতে কোডিনযুক্ত কফ সিরাপ নিয়েও শোরগোল উঠেছে।
প্রতিবারই শিশু মৃত্যুর পর কিছুদিন হইচই হয়, ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিছুদিন পর বিষাক্ত সিরাপ আবার ফিরে আসে।
সমালোচকেরা বলছেন, ওষুধের বাজারে বিভক্তি এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার কারণে এমনটা হয়। প্রায়ই ছোট ছোট কোম্পানি অনুমোদনহীন এসব সিরাপ তৈরি করে এবং কম দামে বাজারে বিক্রি করে। প্রায়ই এগুলো দেখেও না দেখার ভান করা হয়। ভারতে কফ সিরাপের বাজারও ২০৩৫ সাল নাগাদ অনেক বড় হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলেছে, তামিলনাড়ুভিত্তিক একটি ওষুধ কোম্পানি কোল্ডরিফ নামে ওই কফ সিরাপটি তৈরি করেছে। শ্রীসান ফার্মাসিউটিক্যালস নামে ওই ওষুধ কোম্পানির মালিকের নাম রঙনাথান গোবিন্দান।
গতকাল বুধবার রাতে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ চেন্নাই থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
কর্মকর্তারা বলেন, রঙনাথনের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর (অ্যাডালটারেটেড) ওষুধ তৈরি, হত্যাচেষ্টা এবং শিশুদের নিরাপত্তা বিপন্ন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। রঙনাথন তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং আদালতে নিজের দাবির পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করার কথা বলেছেন।