উচ্চশিক্ষায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের শহর কোনগুলো

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের ওপর নির্ভর করা যথেষ্ট নয়। একটি শহরের শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রার মান, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের সুযোগও শিক্ষার্থীদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। এসব দিক বিবেচনা করে বিদেশি শিক্ষার্থীরা কোনো শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস) প্রতিবছর উচ্চশিক্ষায় বিশ্বের এমন শীর্ষ শহরগুলোর তালিকা প্রকাশ করে।

ছয়টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ‘কিউএস বেস্ট স্টুডেন্ট সিটিস’ র‍্যাঙ্কিং শীর্ষক এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এগুলো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান, শিক্ষার্থী–বৈচিত্র্য, আকর্ষণক্ষমতা, চাকরিদাতাদের কার্যক্রম, সহজলভ্যতা ও শিক্ষার্থীর মতামতের ওপর ভিত্তি করে। কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে জেনে নেওয়া যাক ২০২৫ সালের জন্য উচ্চশিক্ষায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ শহর সম্পর্কে।

লন্ডন, যুক্তরাজ্য

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষানগর। প্রচুর বিদেশি শিক্ষার্থী যান এই শহরে। এখানে রয়েছে ইম্পেরিয়াল কলেজ, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনসহ বহু বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। লন্ডনে শিক্ষার্থীরা শুধু উচ্চশিক্ষার জন্যই নয়, বরং পান সাশ্রয়ী আবাসন, নিরাপদ পরিবেশ ও কাজের অসাধারণ সুযোগ। শহরটি বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আধুনিক জীবনযাত্রার জন্যও পরিচিত। কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা লন্ডন চার বছর ধরে একই অবস্থান ধরে রেখেছে। ১০০ স্কোরের মধ্যে লন্ডন ১০০ পেয়েছে।

টোকিও, জাপান

ইউনিভার্সিটি অব টোকিও

জাপানের রাজধানী টোকিও প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যের এক অনবদ্য মিশেল। এখানে রয়েছে ২০টিরও বেশি সরকারি ও বহু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও প্রযুক্তি শাখায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য টোকিও এক স্বপ্নের শহর। শহরের ঐতিহাসিক স্থান ও আধুনিক স্থাপত্যের সঙ্গে পরিচয় শিক্ষার্থীদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে তোলে। টোকিও শহরের নিরাপত্তা, পরিবহনব্যবস্থা ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে। কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে টোকিও ১০০ স্কোরের মধ্যে ৯৯ দশমিক ২ পেয়েছে।

সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া

সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল প্রাণবন্ত জীবনধারা, আধুনিক প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যের জন্য বিশ্বখ্যাত। শহরটি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর। গ্যাংনাম থেকে শুরু করে সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে অসংখ্য সুযোগ-সুবিধা। উন্নত পরিবহনব্যবস্থার কারণে শহরজুড়ে যাতায়াত অত্যন্ত সহজ। সিউলের শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ, কোরীয় সংস্কৃতি ও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। উচ্চশিক্ষায় বিশ্বের সেরা শহরগুলোর তালিকায় সিউলের স্কোর ৯৭ দশমিক ৮।

মিউনিখ, জার্মানি

মিউনিখ শহরটি প্রযুক্তি, শিল্প ও ব্যবসায় শিক্ষায় পড়াশোনার জন্য বিখ্যাত। নিরাপত্তা, সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা ও একটি সুদৃঢ় অর্থনৈতিক পরিবেশ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মিউনিখকে আদর্শ গন্তব্য করে তুলেছে। এই শহর স্টার্টআপ কালচারের জন্য বিখ্যাত ও নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য অসাধারণ সুযোগ তৈরি করে। উচ্চশিক্ষায় বিশ্বের সেরা শহরগুলোর তালিকায় মিউনিখের স্কোর ৯৭ দশমিক ৭।

মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মেলবোর্ন প্রাণবন্ত সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। এখানে ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন, মনাশ ইউনিভার্সিটি ও আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির মতো বিখ্যাত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মেলবোর্নের পরিবেশে নতুন বিদেশি শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।

শিক্ষার্থীরা এখানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও গবেষণায় অংশ নিতে পারেন। জীবনযাত্রা ও শিক্ষার মান মেলবোর্নকে একটি অন্যতম সেরা শিক্ষানগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। উচ্চশিক্ষায় বিশ্বের সেরা শহরগুলোর তালিকায় মেলবোর্নের স্কোর ৯৭ দশমিক ১।

সিডনি, অস্ট্রেলিয়া

ইউনিভার্সিটি অব সিডনি

উচ্চশিক্ষায় বিশ্বের সেরা শহরগুলোর তালিকায় সিডনির স্কোর ৯৫ দশমিক ৪। সিডনি শুধু ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং বিশ্বমানের শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবেও জনপ্রিয়। ইউনিভার্সিটি অব সিডনির মতো প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের শিক্ষা লাভের সুযোগ পান। এখানকার ক্যাফে সংস্কৃতি ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনাকে আরও বেশি আনন্দদায়ক করে তোলে।

প্যারিস, ফ্রান্স

প্রেম ও শিল্পকলার শহর প্যারিস উচ্চশিক্ষার গুণগত মানের জন্যও বিখ্যাত। ইউনিভার্সিটি অব প্যারিস, প্যানথিয়ন-সোরবন ও পিএসএল রিসার্চ ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো প্যারিসে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রধান পছন্দ। ফরাসি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার আদর্শ স্থান। কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে ১০০ স্কোরের মধ্যে প্যারিস পেয়েছে ৯৪ দশমিক ৬।

জুরিখ, সুইজারল্যান্ড

সুইজারল্যান্ডের বৃহত্তম শহর জুরিখ প্রাচীন গির্জা, নৈসর্গিক হ্রদ ও চকলেটের জন্য বিখ্যাত। ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার শিক্ষাপদ্ধতি অত্যন্ত আধুনিক ও কার্যকর। সুইজারল্যান্ডের উন্নত অর্থনীতি ও কম বেকারত্বের কারণে শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির সুযোগও বেশি। কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে ১০০ স্কোরের মধ্যে জুরিখ পেয়েছে ৯৪ দশমিক ৫।

বার্লিন, জার্মানি

বার্লিন ইতিহাস, সংস্কৃতি ও শিক্ষার জন্য বিখ্যাত। হামবোল্ট ইউনিভার্সিটিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখানে অবস্থিত। শহরটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কম খরচে জীবনযাপন ও শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়। শহরের প্রাণবন্ত জীবনধারা, বিশ্বজনীন চিন্তাভাবনা ও শিল্পকলার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের প্রগতিশীল করে তোলে। উচ্চশিক্ষায় বিশ্বের সেরা শহরগুলোর তালিকায় বার্লিনের স্কোর ৯৪ দশমিক ৪।

মন্ট্রিয়ল, কানাডা

মন্ট্রিয়ল শহরটি দ্বিভাষিক সংস্কৃতি ও উচ্চশিক্ষার জন্য জনপ্রিয়। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব মন্ট্রিয়ল বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, শিল্পকলা—সব ক্ষেত্রেই এখানে গবেষণার সুযোগ ব্যাপক। শহরের বিভিন্ন উৎসব, সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা ও সহজ পরিবহনব্যবস্থার কারণে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় এই শহর অনেক এগিয়ে। কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে ১০০ স্কোরের মধ্যে মন্ট্রিয়ল পেয়েছে ৯২ দশমিক ১।