Thank you for trying Sticky AMP!!

খাসোগির স্ত্রী ও বাগদত্তার ফোনেও আড়ি পাতা হয়

জামাল খাসোগি

সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার আগে ও পরে তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের মুঠোফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল। গোপনে এ কাজ করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপের তৈরি পেগাসাস নামের সফটওয়্যার। ডিজিটাল ফরেনসিক বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে।

ফরেনসিক বিশ্লেষণ বলছে, আড়ি পাতা হয় খাসোগির স্ত্রী হানান এলাতার ও তাঁর বাগদত্তা হেতিজে চেঙ্গিসের ফোনে। খাসোগি হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ দুই তুর্কি কর্মকর্তার ফোনেও এভাবে আড়ি পাতা হয়।

Also Read: পেগাসাস যেভাবে তথ্য ফাঁস করে

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন দেশের ১৭টি গণমাধ্যম একযোগে এসব তথ্য বের করতে কাজ করেছেন। আর এই ডিজিটাল ফরেনসিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পরীক্ষাগারে। এ তদন্তের জন্য ৬৭টি মুঠোফোনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয় তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনস্যুলেটের ভেতরে। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তাঁকে কনস্যুলেটের ভেতরে হত্যা করা হয়। কিন্তু তাঁর মরদেহ কোথায় ফেলে দেওয়া হয়েছে, তার হদিস এখনো মেলেনি।

এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সন্দেহের তির ছিল সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দিকে। কারণ, যুবরাজ সালমানসহ সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠীর কঠোর সমালোচক ছিলেন খাসোগি। এ নিয়ে তিনি বেশ কিছু লেখা লিখেছেন ওয়াশিংটন পোস্টে। যদিও সৌদি আরব এই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল। বিভিন্ন তদন্তে উঠে এসেছে, এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

Also Read: আড়ি পাতা হয়েছে বিশ্বের ১৮০ সাংবাদিকের স্মার্টফোনে

এ হত্যাকাণ্ডের পর জানা গিয়েছিল, যুবরাজ সালমানের নির্দেশে ১৫ সদস্যের একটি দল তুরস্ককে গিয়ে খাসোগিকে হত্যা করে। কিন্তু ঠিক এটুকু নয় ঘটনা। এর পেছনে ঘটনা যে আরও বড়, তার একটি চিত্র উঠে এসেছে সাংবাদিকদের এ সম্মিলিত প্রয়াসে। সাংবাদিকদের নতুন এ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, খাসোগির আরেক স্ত্রী হানান এলাতার, যাঁকে তিনি বিয়ে করেছিলেন ২০১৮ সালের জুনে, তাঁর ফোনও ছিল পেগাসাসের লক্ষ্যবস্তু। তাঁর ফোনটি ছিল অ্যান্ড্রয়েড ফোন। হানান ছিলেন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট। তিনি খাসোগির প্রেমে পড়েছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে বিয়ে করেছিলেন।

খাসোগির বাগদত্তা হেতিজে চেঙ্গিসের ফোনও ছিল লক্ষ্যবস্ত। হেতিজের মুঠোফোনটি ছিল আইফোন। খাসোগিকে হত্যার পর দিনে পাঁচবার তাঁর ফোনে নজরদারি করা হতো।

বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসওর ক্লায়েন্ট পেগাসাস নামের এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে। এসব দেশের ৫০ হাজারের বেশি নম্বরে আড়ি পাতা হয়। এই ৫০ হাজার ফোনের নম্বর তালিকায় হানান ও হেতিজের ফোন নম্বর ছিল। এ ছাড়া খাসোগির আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ফোন হ্যাক করা হয়েছিল তাঁকে হত্যার পর। এখানেই শেষ নয়, খাসোগিকে হত্যার পর যাঁরা এ তদন্তকাজে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে তুরস্কের দুজন এবং খাসোগির দুই সহযোগীর ফোন নম্বর রয়েছে সেই ৫০ হাজার ফোনের মধ্যে। তবে এনসওর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খাসোগি বা তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নজরদারির জন্য স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করা হয়নি।

Also Read: দুনিয়াজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়ি পাতার ঘটনা ফাঁস

কিন্তু এনএসওর এ কথা ও কাজের মিল নেই। কারণ, খাসোগির স্ত্রী হানানের ফোনটি হ্যাক করা হয়েছিল পেগাসাস ব্যবহারকারী একজনের ফোন থেকেই। হানানের বোন পরিচয় দিয়ে তাঁর ফোনটিতে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। এর একটি খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছিল ২০১৭ সালের নভেম্বরে। দ্বিতীয় খুদে বার্তাটি পাঠানো হয়েছিল ২০১৮ সালের এপ্রিলে। এর ছয় মাস পর খাসোগিকে হত্যা করা হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিকিউরিটি ল্যাবে ফরেনসিক বিশ্লেষণে এ চিত্র উঠে এসেছে। কিন্তু এটা ঠিক জানা যায়নি, তাঁর ফোনটি হ্যাক করা সম্ভব হয়েছিল কি না। কারণ তাঁর ফোনটি অ্যান্ড্রয়েড। তাই লগ থেকে এটা জানা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ওই ফোনে আসা লিংকটিতে তিনি ক্লিক করেছিলেন কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সম্প্রতি হানান সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ওই ঘটনা যখন ঘটেছিল, তিনি তখন খাসোগির সঙ্গে কথা বলতেন এবং তাঁদের মধ্যে খুদে বার্তা আদান–প্রদান হতো। খাসোগি তাঁকে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করতে বলতেন, যাতে তাঁরা নজরদারির বাইরে থাকতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খাসোগি আমাকে বলেছিলেন, ফোন হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটতে পারে।’

জামাল খাসোগি ও হেতিজে চেঙ্গিস

খাসোগির মৃত্যুর পর পেগাসাস ব্যবহার করেন এমন এক ব্যক্তির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় হেতিজের মুঠোফোন। হেতিজের ফোনটি ছিল আইফোন। খাসোগিকে হত্যার মাত্র চার দিনের মাথায় হেতিজের ফোনটি হ্যাক করা সম্ভব হয়। কিন্তু এটা জানা সম্ভব হয়নি, তাঁর মুঠোফোন থেকে কোন ধরনের তথ্য চুরি করা হয়েছে।

হেতিজে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি ধারণা করছিলাম এমন ঘটতে পারে। তবে আমি এই ঘটনায় হতাশ হয়েছি। কারণ, আমি একজন সাধারণ মানুষ মতো জীবন যাপন করতে চেয়েছিলাম। এসব ঘটনা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে, আমাকে বিক্ষিপ্ত করেছে। আমরা মুঠোফোন আবারও হ্যাক হতে পারে। আমার এখন মনে হয়, আমি কোনোভাবেই নিজেকে রক্ষা করতে পারব না। ’

খাসোগির হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করেছেন অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। জাতিসংঘের হয়ে তদন্ত করেছেন তিনি। তিনি বলেন, খাসোগির কাছের মানুষদের এবং যাঁরা এই তদন্ত করছেন, তাঁদের নজরদারিতে পেগাসাস ব্যবহার করা হয়েছে।

হেতিজে চেঙ্গিস

খাসোগি হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অনেকের জীবন বদলে গেছে। আর তাঁদের মধ্যে অন্যতম হানান ও হেতিজে। খাসোগির সঙ্গে যখন হানানের প্রেম শুরু হয়েছিল, তখন থেকেই ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন হানান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিমানবন্দরে আটক করে তাঁর ফোন বাজেয়াপ্ত করেছিল। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তিনি এখনো ওয়াশিংটনে থাকেন। আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন হানান। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভয়ে আছেন তিনি।

খাসোগির সঙ্গে পরিচয়ের আগে হেতিজে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন। পারস্য উপসাগরীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতেন তিনি। এ জন্য বৃত্তিও পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘খাসোগির সঙ্গে সাক্ষাতের আগে আমি সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ জীবন যাপন করেছি।’ কিন্তু খাসোগি হত্যার পর কাজে ফিরতে পারছেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি এখন আর কোনো আরব দেশে ভ্রমণ করতে পারি না। আপনি কি এটা কল্পনা করতে পারেন?’ হেতিজের প্রশ্ন, সারা জীবন ধরে তিনি কেন এভাবে মূল্য দিয়ে যাবেন?

ওয়াশিংটন পোস্ট ও দ্য ওয়্যার অবলম্বনে।