গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিন, ১৪ মে
গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিন, ১৪ মে

গাজায় নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। হামাস ও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে লেবানন থেকে ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোড়ার দাবি করেছে তেল-আবিব।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানে ১০৯ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ২৮ শিশু ও অন্তত ১১ নারী রয়েছেন। আর গত সোমবার ইসরায়েলি আক্রমণ শুরুর পর থেকে সেখানে আহত মানুষের সংখ্যা ৫৮০ জন। আহতদের চিকিৎসা দিতে সেখানকার হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। কারণ করোনা রোগীর কারণে আগে থেকেই হাসপাতালগুলোর অবস্থা ছিল নাজেহাল।

আজ-জাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের বাহিনী তাদের বিমান হামলা ও গোলা বর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে হামাস গাজা থেকে রকেট ছোড়া চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তাঁদের বাহিনী গাজায় প্রায় এক হাজার লক্ষ্যবস্তুতে ইতিমধ্যে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে।

ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে গাজা থেকে ছোড়া রকেট। ইসরায়েল, ১৪ মে

বিবিসির খবরে বলা হয়, হামাসের রকেট হামলায় ইসরায়েলে সাতজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার গাজা সীমান্তে ইসরায়েল তাদের দুটি পদাতিক ও একটি সাঁজোয়া ইউনিট মোতায়েন করে। পাশাপাশি আরও সাত হাজার সেনাকে প্রস্তুত হতে বলা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার লেবানন থেকে তিনটি রকেট ইসরায়েলের দিকে ছোড়া হয়। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রকেটগুলো ভূমধ্যসাগরে পতিত হওয়ায় তাদের কোনো ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছেন, ওই রকেটগুলো সেখানকার উপকূলীয় কেলাইলেহ অঞ্চল থেকে ছোড়া হয়েছে।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা উপত্যাকায় বিস্ফোরণ। ফিলিস্তিন, ১৪ মে

২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর এবারই সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাত হচ্ছে।

সংঘাতের শুরু যেখান থেকে

ইসরায়েলের অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবারের বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা থেকে এবারের সংঘাতের শুরু। এই পরিবারগুলো যেখানে বসবাস করছে, তার প্রকৃত মালিক ইহুদিরা বলে দাবি করে আসছে গাজায় ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের পক্ষের বেশ কয়েকটি সংগঠন। ১৯৭২ সাল থেকে আদালতে অনেকগুলো মামলা দায়ের করেছে তারা।

ফিলিস্তিনিরা এই ঘটনাকে দেখছে জেরুজালেম থেকে তাঁদের বাস্তুচ্যুত করার ইসরায়েলি রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হিসেবে। এ নিয়ে এপ্রিলের শেষ দিক থেকে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ এবং ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ও পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ছোটখাটো সংঘর্ষ হতে থাকে।

গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েলি আদালতের এক আদেশে চারটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে বাড়ি ছাড়তে বলা হয়। ২ মে তাদের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়। পরে দুই দফায় আদালতের ওই আদেশ স্থগিত হয়ে যায়। পরিবারগুলো আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সুপ্রিম করে আবেদন করে। ওই আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল এর মধ্য। পরে তা পিছিয়ে গেছে।

গাজা থেকে চালানো রকেট হামলা। ইসরায়েল, ১৪ মে

সম্প্রতি ওই পরিবারগুলোতে ইফতারের জন্য ফিলিস্তিনিরা জড়ো হলে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত এবং ১৫ জন গ্রেপ্তার হন।

আল-আকসায় সংঘর্ষ

এর পরদিন শুক্রবার জুমাতুল বিদার দিন আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন হাজার হাজার মুসল্লি। সেখানে ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেন অনেকে।

একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ইসরায়েলি পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে পুলিশ। অপর দিকে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেন বিক্ষোভকারী। এই সংঘাতে ২০৫ জন ফিলিস্তিনি এবং ১৭ ইসরায়েলি পুলিশ সদস্য আহত হন।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন হামাসের সামরিক প্রধান বাসেম ইসা। তাঁর মরদেহ নিয়ে চলেছেন ফিলিস্তিনিরা গাজা, ১৩ মে

টানা দুই-তিন দিন পুলিশের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষের পর সোমবার আল-আকসায় সাঁড়াশি অভিযান চালান ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। বিক্ষোভকারীদের হটাতে রাবার বুলেট, কাঁদুনে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তারা। এতে প্রায় ৩০০ ফিলিস্তিনি আহত হন। অপর দিকে ইসরায়েলি বাহিনীরও প্রায় ২০ সদস্য আহত হন।

ইসরায়েলের বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার অনেক ভবন। গাজা শহর, ১৩ মে

এরপর হামাস ইসরায়েলকে আল-আকসা মসজিদ চত্বর এবং শেখ জারাহ এলাকা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহারের জন্য সময় বেঁধে দেয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভাষ্যমতে, মঙ্গলবার ভোর নাগাদ হামাস ইসরায়েলের দিকে প্রায় ২০০ রকেট নিক্ষেপ করে। সেগুলোর অধিকাংশই ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আটকে দেয়। ইসরায়েলি সীমান্তেও রকেট গিয়ে পড়ে, তাতে দেশটির দুজন নাগরিক নিহত হন।

ইসরায়েলি হামলার মুখেও পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন করেছে ফিলিস্তিনিরা। আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে এক শিশুকে নিয়ে আনন্দে মেতেছেন এক ব্যক্তি। পূর্ব জেরুজালেম, ১৩ মে

এর মধ্যে শুরু হয়ে যায় ইসরায়েলের বিমান হামলা। গাজায় হামাস নেতাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনায় চলে বোমা নিক্ষেপ।

সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক মহল থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার গাজায় হামলা আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন। অপর দিকে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল হামলা বাড়ালে তাঁরা প্রতিহত করবেন। আর ইসরায়েল এটা বন্ধ করতে চাইলে তাঁরা তাতেও রাজি।