
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দ্রুত বিস্তার সত্ত্বেও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও সৌদি আরবের শ্রমবাজারে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ লাখের বেশি অতিরিক্ত কর্মীর চাহিদা তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৫ সালে প্রকাশিত একটি বৈশ্বিক শ্রমশক্তি সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবসা পরিচালনার ধরনে পরিবর্তন আনলেও এটি উপসাগরীয় অঞ্চলে মানবকর্মীর সামগ্রিক চাহিদা কমাচ্ছে না। বরং শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের পরিষেবা সম্প্রসারণের মতো বিষয়গুলো উভয় দেশেই শ্রমের টেকসই চাহিদাকে এগিয়ে নিচ্ছে।
সৌদি আরবে সরকারের ‘ভিশন ২০৩০’ অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির কারণে শ্রমশক্তির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার আওতায় নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, পর্যটন, উৎপাদন, লজিস্টিকস ও নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলে বড় ধরনের বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, এআইয়ের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা না বাড়ালে সৌদি আরবকে তার সম্প্রসারণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরও প্রায় সাড়ে ৬ লাখ অতিরিক্ত কর্মী প্রয়োজন হতো। এমনকি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বিবেচনায় নেওয়ার পরও এটা ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে দেশটিকে উল্লেখযোগ্য শ্রমঘাটতির মুখে পড়তে হতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমশক্তির চাহিদা আরও দ্রুতগতিতে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোট শ্রমশক্তি ১২ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এটিকে অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল শ্রমবাজারে পরিণত করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মানব শ্রমশক্তিতে এই ১২ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। অন্যদিকে সৌদি আরবে কর্মশক্তি ১১ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র (২ দশমিক ১ শতাংশ) ও যুক্তরাজ্যের (২ দশমিক ৮ শতাংশ) মতো প্রধান অর্থনীতিতে এই সম্প্রসারণ অনেক বেশি ধীর।’
এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে সার্ভিসনাউ ও পিয়ারসন। সার্ভিসনাউ হলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার কোম্পানি, যা বিভিন্ন দেশের সরকার ও বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ওয়ার্কফ্লো এবং অটোমেশন প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে। অন্যদিকে পিয়ারসন হলো যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি বৈশ্বিক শিক্ষা কোম্পানি, যা শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও শ্রমশক্তি মূল্যায়নে বিশেষ পারদর্শী।
গবেষণা অনুযায়ী প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সেবার ডিজিটাল রূপান্তরের ওপর সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশেষ গুরুত্ব কর্মসংস্থান বিলোপের পরিবর্তে নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরব আমিরাতের সরকারি বিভাগ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম আধুনিক করার ফলে উৎপাদন, শিক্ষা, খুচরা বিপণন, স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক সেবা এবং প্রযুক্তি সম্পর্কিত সেবা খাতে কর্মীদের চাহিদা বাড়ছে।
গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, এআই মূলত গতানুগতিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে করবে। তবে কারিগরি দক্ষতা, তত্ত্বাবধান, গ্রাহক সেবা, সমস্যা সমাধান এবং সেবা প্রদানের মতো ভূমিকার জন্য কর্মীদের প্রয়োজনীয়তা থেকেই যাবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব—উভয় দেশেই যেসব প্রধান খাতে কর্মী নিয়োগ অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে তার মধ্যে নির্মাণ, পরিবহন, লজিস্টিকস, স্বাস্থ্যসেবা, আতিথেয়তা, খুচরা বিপণন, শিক্ষা, জ্বালানি, আর্থিক সেবা এবং তথ্যপ্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বিদেশি কর্মীদের জন্য চাকরির সুযোগ অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে যাঁদের বৃত্তিমূলক দক্ষতা, কারিগরি প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং সেবা খাতে অভিজ্ঞতা রয়েছে।
হাজারো কর্মপদ ও লাখো চাকরির বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি এই উপসংহারে পৌঁছেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করবে। কিন্তু উপসাগরীয় অঞ্চলে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট শ্রমশক্তির ঘাটতি পুরোপুরি পূরণ করতে পারবে না।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, যেসব দেশ কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা পুনর্গঠনে (রিস্কিলিং) বিনিয়োগ করবে, তারাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি থেকে সুফল পেতে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। কারণ, প্রযুক্তি কাজকে ঢেলে সাজালেও তা মানব শ্রমের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল থাকবে।