
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে ‘খুব দ্রুত’ পৌঁছানোর বিষয়ে তিনি আশাবাদী।
গতকাল সোমবার ফ্লোরিডায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প এ কথা বলেন। তবে অক্টোবরে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ইসরায়েল বারবার লঙ্ঘন করলেও তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন তিনি। তাঁর দাবি, ইসরায়েল ‘যুদ্ধবিরতি মেনে চলছে’।
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প প্রস্তাবিত ২০ দফার শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের কথা বলা হয়েছে।
গতকাল বৈঠকের পর নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল ‘পরিকল্পনাটি শতভাগ মেনে চলেছে’। যদিও গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
গাজা শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে হামাস ও ইসরায়েলের কত দ্রুত অগ্রসর হওয়া উচিত—এ প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব। তবে নিরস্ত্রীকরণ অবশ্যই হতে হবে।’
হামাস সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা (হামাস) যদি তাদের প্রতিশ্রুতিমতো অস্ত্র সমর্পণ না করে, তাহলে তাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যেই অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, গাজায় পুনর্গঠন কার্যক্রম ‘খুব শিগগির শুরু হতে পারে’।
গাজা শান্তি পরিকল্পনাটি গত অক্টোবরে কার্যকর হয়। পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে বিধ্বস্ত এ ভূখণ্ডে একটি টেকনোক্রেটিক সরকার গঠন করা, হামাসকে নিরস্ত্র করা এবং ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। এরপর গাজার পুনর্গঠন শুরু হবে।
তবে সমালোচকদের মতে, নেতানিয়াহু এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে পারেন এবং ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের আগে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের জন্য চাপ দিতে পারেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগও করা রয়েছে, তিনি ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে আগ্রহী নন।
হামাসের কর্মকর্তারা বলেছেন, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অগ্রগতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ হওয়া উচিত।
পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নে ইসরায়েল যথেষ্ট দ্রুতভাবে কাজ না করায় তিনি উদ্বিগ্ন কি না, জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল ‘পরিকল্পনার শর্ত মেনেই চলেছে’।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘ইসরায়েল যা করছে, তা নিয়ে আমি মোটেও উদ্বিগ্ন নই। অন্যরা কী করছে বা কী করছে না—সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানে অন্তত ৪১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার অর্ধেকের বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা কেবল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জবাব হিসেবেই গুলি চালিয়েছে। একই সময়ে তিনজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার জন্য তারা হামাসকে দায়ী করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ভিন্ন কোনো স্থাপনা ব্যবহার করছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর আরও হামলা চালাবে।
গত জুন মাসে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘পুরোপুরি ধ্বংস’ হয়ে গেছে। তবে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আশা করি তারা আবার তা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে না। কারণ, যদি তারা সেটা করে, তাহলে সেই কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো উপায় থাকবে না।’