ইসলামাবাদ হাইকোর্টে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে ঘিরে রেখেছে। এই ছবিটি ২০২৩ সালের ১২ মে তোলা
ইসলামাবাদ হাইকোর্টে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে ঘিরে রেখেছে। এই ছবিটি ২০২৩ সালের ১২ মে তোলা

পাঞ্জাবের আইনসভায় ইমরান ও তাঁর দলকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব গৃহীত

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবিতে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক আইনসভায় গতকাল মঙ্গলবার একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

দেশটির বর্তমান শাসক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল-এন)–এর সঙ্গে পিটিআইয়ের চরম রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে এমন একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত আসার কয়েক দিন আগে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী নাম উল্লেখ না করে ইমরান খানকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, তিনি (ইমরান) সেনাবাহিনীবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন এবং সেনাবাহিনীবিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য এখন আর রাজনীতির পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বরং এগুলো জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিতে পরিণত হয়েছে।’

তার পর থেকে পিএমএল-এন ও পিটিআই নেতাদের মধ্যে কথার লড়াই চলছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ইমরান খান অতীতে কঠিন ভাষায় বিরোধী রাজনীতিকদের সমালোচনা করেছেন। তাই সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রের মন্তব্য নিয়ে আপত্তি তোলার কোনো অধিকার তাঁর নেই।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে আইএসপিআরের মহাপরিচালকের মন্তব্যকে পিটিআই ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করে কঠোরভাবে এর নিন্দা জানিয়েছে। পিটিআই জোর দিয়ে বলেছে, ইমরান খান জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি নন।

পিটিআইয়ের আইনপ্রণেতারা এদিন উপস্থিত ছিলেন না।

পাঞ্জাবের প্রাদেশিক আইনসভায় মঙ্গলবার পিএমএল-এন আইনপ্রণেতা তাহির পারভেজ পিটিআইন নেতা ইমরান খান ও তাঁর দলকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবটি আনেন। প্রাদেশিক পরিষদে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। পিটিআইয়ের আইনপ্রণেতারা এদিন পরিষদে উপস্থিত ছিলেন না।

রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠক নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁরা অধিবেশন বর্জন করেন।

পাকিস্তান আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী

ওই প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সেনাবাহিনীর মতো প্রতিষ্ঠান প্রতিটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে রক্ষা করেছে এবং ভারতের মতো পাঁচ গুণ বড় শত্রুকে সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। তারা দেশের অখণ্ডতা ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।’

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ‘শত্রুরাষ্ট্রের হাতিয়ার হয়ে কাজ করার কারণে ওই রাজনৈতিক দল (পিটিআই) এবং এর প্রতিষ্ঠাতার (ইমরান খান) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। এর প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে দেশবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার এবং বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।’

রাজনৈতিক দলের হোক বা কোনো অরাজনৈতিক দলের নেতা—সবার বিরুদ্ধেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাদের ‘উচিত শাস্তি’ দেওয়ার প্রস্তাব ওই প্রস্তাবে রাখা হয়েছে।

তবে মজার বিষয় হলো, প্রস্তাবে বিশেষ করে পিটিআই ও ইমরান খানের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

এ নিয়ে পাঞ্জাব আইনসভার বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রাদেশিক তথ্যমন্ত্রী আজমা বোখারি বলেছেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা বা কোনো প্রদেশে গভর্নরের শাসন আরোপের পক্ষে নন।

আদিয়ালা কারাগারের বন্দী এখন কার্যত ‘আলতাফ হুসাইন পার্ট টু’ হয়ে গেছেন। পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষের সময় পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার নীরবতা রাষ্ট্রবিরোধী আচরণের সমতুল্য। পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ও পাকিস্তান আর একসঙ্গে এগোতে পারবে না।...
আজমা বোখারি, প্রাদেশিক তথ্যমন্ত্রী

তবে আজমা বোখারি সতর্ক করে এও বলেছেন, পিটিআইয়ের সাম্প্রতিক কার্যক্রম কর্তৃপক্ষকে সেই পথে ঠেলে দিচ্ছে।

আজমা বলেন, ‘পিটিআই যদি নিজের বর্তমান পথ পরিবর্তন না করে, তবে সরকার দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা কিংবা গভর্নরের শাসন জারির মতো বিকল্পগুলোর কথা বিবেচনা করতে পারে।’

ইমরান খানের তীব্র সমালোচনা করে আজমা বোখারি আরও বলেন, ‘আদিয়ালা কারাগারের বন্দী এখন কার্যত “আলতাফ হুসাইন পার্ট টু” হয়ে গেছেন। পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষের সময় পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার নীরবতা রাষ্ট্রবিরোধী আচরণের সমতুল্য। পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ও পাকিস্তান আর একসঙ্গে এগোতে পারবে না।’

এই প্রাদেশিক মন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, ইমরান খান পাকিস্তানকে বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন এবং দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার কাজ করেছেন।

আজমা বলেন, পিটিআই ক্রমাগত সেনাবাহিনীকে রাজনীতিতে টেনে আনার চেষ্টা করছে এবং নেতারা ‘রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণায়’ ব্যস্ত। পিটিআইয়ের ভেতরেও অনেকেই এই ‘বিষাক্ত নীতির’ কারণে হতাশ।